তেল-গ্যাসক্ষেত্র-দেশীয় বেসরকারি কোম্পানি কেন নয়?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা গ্যাসক্ষেত্রের নতুন কূপে উৎপাদন শুরু জ্বালানি ঘাটতির এ দেশে নিঃসন্দেহে স্বস্তির আরেকটি খবর বিবেচিত হবে। এ মাসেরই প্রথম সপ্তাহে পার্বত্য খাগড়াছড়ির সেমুতাংয়ের পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র থেকে নতুন করে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই দুই উৎস থেকে পৌনে তিন কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি করবে আশা করা যায়। কিন্তু সালদা কিংবা সেমুতাংয়ে উৎপাদন শুরুর তাৎপর্য কেবল জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ
নয়। দুটি গ্যাসক্ষেত্রেই নতুন উৎপাদন শুরুর নেপথ্যে রয়েছে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি)। আমরা জানি, এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মৌলভীবাজারের রশিদপুরের গ্যাসক্ষেত্রে দেশের ইতিহাসে রশিদপুরে প্রথম রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাতে সক্ষম হয়েছে। বাপেক্সের তরুণ প্রযুক্তিকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত জরিপ দলটি প্রমাণ করেছিল, জাতীয় সম্পদ উত্তোলনে দেশীয় সক্ষমতা ভরসাস্থল হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছিল স্থলভাগে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা খ্যাতিমান বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমাদের তরুণরা বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, বাপেক্সের পক্ষে এখনই সমুদ্রবক্ষে জরিপ চালানো সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সেটাও অদূর ভবিষ্যতে আর অধরা থাকবে না। আমরা আশা করি, রশিদপুরে জরিপের সাফল্য, সালদা ও সেমুতাংয়ে গ্যাস উৎপাদন শুরু রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে আত্মবিশ্বাস এক ধাপ বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে দূরের হলেও একটি বাদ্য আমরা বাজাতে চাই। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির পাশাপাশি জাতীয় সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের এই ক্ষেত্রে দেশীয় বেসরকারি কোম্পানি অংশ নিতে পারে কি-না? সরকারের সাধ ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আমরা জানি। সেক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি হতে পারে আরেকটি বিকল্প। পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে কারিগরি ব্যবস্থা এখন আর অলভ্য নয়। বহুজাতিক কোম্পানির বদলে যদি আমাদের তেল-গ্যাস-কয়লাক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানির পুঁজি বিনিয়োগ সম্ভব হয়; তা কেবল আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির এক ধাপ নয়; আত্মমর্যাদা ও জাতীয় সমৃদ্ধির পথে বিরাট উল্লম্ফন বিবেচিত হবে।
No comments