কলকাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ফুটবল by সনৎ বাবলা
মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল। ফুটবল ম্যাচ দেখতে এখনো এক লাখ লোক মাঠে আসে ভারতে! সেই বিস্ময় কাটিয়ে দিয়েছে দিল্লির দর্শক-শূন্য জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। বিস্ময়ের শুরু এবং শেষের মধ্যে যে সত্যানুসন্ধান হয়েছে তা হলো ওই ডার্বিটাই ভারতের ফুটবল জনপ্রিয়তার ফসিল হয়ে আছে। বাকি গল্প একই, বাংলাদেশের মতোই ভারতেও ফুটবলের সোনালি সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়েছে আগেই, অস্তমিত হওয়ার
আগে আবার তার তেজ ফেরানোর চেষ্টা চলছে। সেটা ধীরগতির, তার পরও নানা সংস্কারে যদি ফুটবলের হারানো জনপ্রিয়তা ফেরানো যায়।
ওই ডার্বি বাদ দিলে আই লিগেরও তেমন জৌলুস নেই। খোদ কলকাতাতেও নাকি নেই, পেশাদার ফুটবলে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে অন্যান্য দলের খেলা দেখার আগ্রহ কমে গেছে কলকাতার লোকদেরও। আগে এই দুটো ক্লাবের আধিপত্য ছিল, সেটা এখন নেই। সর্বভারতীয় ফুটবলের শীর্ষ লিগে (আই লিগ) তারা শিরোপাবঞ্চিত, লিগের বয়স চার বছর হয়ে গেলেও দুটো ক্লাবের ভাগ্যে জোটেনি শিরোপা। চলমান পঞ্চম লিগেও তাদের কেউ শীর্ষে নেই। তাই কলকাতার ফুটবল পাগল মানুষের কাছে ক্লাব দুটোর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। ভারতের বিখ্যাত ফুটবল বিশ্লেষক নবী কাপাডিয়ার বিশ্লেষণেও এই দুটো দল দায়ী বাংলার ফুটবল জনপ্রিয়তা হারানোর জন্য, 'তারা অনেক পুরনো ক্লাব, তাদের মাঠ আছে, সমর্থক সংখ্যা আগে অনেক বেশি ছিল। ফুটবলটাকে মানুষের প্যাশনের জায়গায় ধরে রাখতে তাদের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তন দরকার সেটা তারা করতে পারেনি। তারা নিজেদের পেশাদার হিসেবে সাজিয়ে নিতে পারলেও অন্যরা অনুকরণ করত তাদের।'
সেই সংস্কারটা হয়নি বলে বাংলার ফুটবলে অধোগতি। ইস্টবেঙ্গল এখন খেলছে কোনো বাঙালি ফুটবলার ছাড়াই, যেটা একসময় ভাবাই যেত না। নবী কাপাডিয়া দেখছেন বাংলার ছন্নছাড়া রূপ, 'বাংলা থেকে এখন কোনো প্রতিভাবান ফুটবলারই আসে না। যারা ফুটবলার তৈরি করে সেই কালীঘাট, কুমারটুলী, আরিয়ানের মতো স্থানীয় ক্লাব দলগুলোর অবস্থাও খারাপ হচ্ছে দিনে দিনে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল প্রতিভা খোঁজার জন্য আগের মতো স্কাউটিং করে না। তারা টাকা নিয়ে ছোটে তৈরি ফুটবলারের পেছনে।' এতেও অবশ্য সাফল্য আসছে না এবং প্রিয় ক্লাবের ব্যর্থতায় মানুষের ফুটবলস্পৃহাও কমে যাচ্ছে দিন দিন। বাংলার সেই ফুটবল উন্মাদনার চিত্রটা দেখা যাবে এখন গোয়ায়। এই অঞ্চল থেকেই আই লিগে খেলছে চারটি ক্লাব_সালগাঁওকর, ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্স ও গোয়া স্পোর্টিং। গত চারটি লিগের মধ্যে ডেম্পো জিতেছে দুবার, চার্চিল ও সালগাঁওকর একবার করে। অর্থাৎ ফুটবল এবং তার জনপ্রিয়তা বাংলা থেকে সরে গেছে এখন গোয়ায়। তাদের ফুটবল আগ্রহকে অভিনন্দন জানিয়েও গোল ডটকমের প্রধান সম্পাদক রাহুল বালি সমস্যা দেখছেন অন্য জায়গায়, 'গোয়ায় ফুটবল জমজমাট, কিন্তু ওখানকার জনসংখ্যা বাংলার মতো নয়। ফুটবলে তাদের আগ্রহ ব্যাপক হলেও স্পনসর কিংবা অন্য ব্যাপারগুলোতে তারা পিছিয়ে আছে। আমাদের অন্য রাজ্যগুলোতেও ফুটবলের চর্চাটা ভালোমতো হলে ফুটবলের চেহারা পাল্টে যেত।'
ভারতে ফুটবলটা হয়ে পড়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের খেলা। অথচ '৫০ থেকে '৭০ দশকে ভারতে ফুটবল ছিল জনপ্রিয় খেলা। ওই সময়েই তারা দুবার শিরোপা জিতেছিল এশিয়ান গেমসে। এখন সেই এশিয়ান গেমসে গিয়ে হারে বাজেভাবে। কারণ ফুটবলের চর্চাটা পুরো ভারতজুড়ে নেই। সাফে টেন স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার নবী কাপাডিয়া বলছেন, 'যখন আমরা এশিয়ান গেমস জিতি তখন হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে প্রচুর ফুটবলার বের হতো। এখন এসব জায়গায় খেলাটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে।' আই লিগের দলগুলোর পরিচিতি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়, গোয়া ও বাংলার চারটি করে দল বাদ দিলে কেরলা, মুম্বাই ও পুনে থেকে কয়েকটি দল খেলছে। হারিয়ে গেছে অনেক পুরনো ক্লাব জেসিটি ও মাহিন্দ্রা-মাহিন্দ্রার মতো ক্লাব দল। এই দুটো দলের হারিয়ে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করেন রাহুল বালি, 'আমাদের শিল্পাঞ্চলে ফুটবলের চর্চাটা ভালো থাকলে, সেখানকার দলগুলো আই লিগে খেললে খেলাটার বিস্তৃতি বাড়ত।' অর্থাৎ সর্বভারতীয় পর্যায়ে ফুটবলের পসার নেই বলেই খেলাটা জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে আছে।
ফুটবলের জনপ্রিয়তার বড় উপাদান হলো তারকা, মহাতারকা, যাঁদের টানে মানুষ ছুটে আসবে মাঠে। সর্বশেষ ছিলেন বাইচুং ভুটিয়া, এখন আর জাতীয় দলে নেই। আছেন সুনীল ছেত্রী ও জে জে লাল পেখুলা। এঁদের আবার ৬০-৭০ দশকের জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের পাশে রাখতে চাইছেন না নবী কাপাডিয়া, 'আগে ছিল চুনী গোস্বামী, পি কে ব্যানার্জি, শ্যাম থাপা, হবীব, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ইউসুফ খান, জুলফিকার, ভেঙ্কটেশ, আপ্পারাউ, আহমদ খানের মতো ফুটবলার। তাদের সবাই চিনত এবং তাদের খেলা দেখতেই লোক মাঠে যেত। এখন বাইচুং ভুটিয়াকে তাদের পাশে বসানো যায়, বাকিরা ওই মানের নয়। ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য চাই মেগাস্টার।' এর সঙ্গে যোগ করতে হবে ফুটবলের আধুনিক স্টেডিয়াম_ফুটবল উপভোগের সঙ্গে যেন পিৎজা, হ্যাম বার্গারও খাওয়া যায়। ভারতীয়দের জীবনযাত্রা যেভাবে পাল্টে গেছে সে রকম আকর্ষণীয় মোড়কেই তো উপস্থাপন করতে হবে ফুটবলকে। তা না হওয়া পর্যন্ত ফুটবল সর্বভারতীয় খেলা নয়। ফিরে পাবে না তার হারানো জনপ্রিয়তাও।
ওই ডার্বি বাদ দিলে আই লিগেরও তেমন জৌলুস নেই। খোদ কলকাতাতেও নাকি নেই, পেশাদার ফুটবলে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে অন্যান্য দলের খেলা দেখার আগ্রহ কমে গেছে কলকাতার লোকদেরও। আগে এই দুটো ক্লাবের আধিপত্য ছিল, সেটা এখন নেই। সর্বভারতীয় ফুটবলের শীর্ষ লিগে (আই লিগ) তারা শিরোপাবঞ্চিত, লিগের বয়স চার বছর হয়ে গেলেও দুটো ক্লাবের ভাগ্যে জোটেনি শিরোপা। চলমান পঞ্চম লিগেও তাদের কেউ শীর্ষে নেই। তাই কলকাতার ফুটবল পাগল মানুষের কাছে ক্লাব দুটোর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। ভারতের বিখ্যাত ফুটবল বিশ্লেষক নবী কাপাডিয়ার বিশ্লেষণেও এই দুটো দল দায়ী বাংলার ফুটবল জনপ্রিয়তা হারানোর জন্য, 'তারা অনেক পুরনো ক্লাব, তাদের মাঠ আছে, সমর্থক সংখ্যা আগে অনেক বেশি ছিল। ফুটবলটাকে মানুষের প্যাশনের জায়গায় ধরে রাখতে তাদের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তন দরকার সেটা তারা করতে পারেনি। তারা নিজেদের পেশাদার হিসেবে সাজিয়ে নিতে পারলেও অন্যরা অনুকরণ করত তাদের।'
সেই সংস্কারটা হয়নি বলে বাংলার ফুটবলে অধোগতি। ইস্টবেঙ্গল এখন খেলছে কোনো বাঙালি ফুটবলার ছাড়াই, যেটা একসময় ভাবাই যেত না। নবী কাপাডিয়া দেখছেন বাংলার ছন্নছাড়া রূপ, 'বাংলা থেকে এখন কোনো প্রতিভাবান ফুটবলারই আসে না। যারা ফুটবলার তৈরি করে সেই কালীঘাট, কুমারটুলী, আরিয়ানের মতো স্থানীয় ক্লাব দলগুলোর অবস্থাও খারাপ হচ্ছে দিনে দিনে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল প্রতিভা খোঁজার জন্য আগের মতো স্কাউটিং করে না। তারা টাকা নিয়ে ছোটে তৈরি ফুটবলারের পেছনে।' এতেও অবশ্য সাফল্য আসছে না এবং প্রিয় ক্লাবের ব্যর্থতায় মানুষের ফুটবলস্পৃহাও কমে যাচ্ছে দিন দিন। বাংলার সেই ফুটবল উন্মাদনার চিত্রটা দেখা যাবে এখন গোয়ায়। এই অঞ্চল থেকেই আই লিগে খেলছে চারটি ক্লাব_সালগাঁওকর, ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্স ও গোয়া স্পোর্টিং। গত চারটি লিগের মধ্যে ডেম্পো জিতেছে দুবার, চার্চিল ও সালগাঁওকর একবার করে। অর্থাৎ ফুটবল এবং তার জনপ্রিয়তা বাংলা থেকে সরে গেছে এখন গোয়ায়। তাদের ফুটবল আগ্রহকে অভিনন্দন জানিয়েও গোল ডটকমের প্রধান সম্পাদক রাহুল বালি সমস্যা দেখছেন অন্য জায়গায়, 'গোয়ায় ফুটবল জমজমাট, কিন্তু ওখানকার জনসংখ্যা বাংলার মতো নয়। ফুটবলে তাদের আগ্রহ ব্যাপক হলেও স্পনসর কিংবা অন্য ব্যাপারগুলোতে তারা পিছিয়ে আছে। আমাদের অন্য রাজ্যগুলোতেও ফুটবলের চর্চাটা ভালোমতো হলে ফুটবলের চেহারা পাল্টে যেত।'
ভারতে ফুটবলটা হয়ে পড়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের খেলা। অথচ '৫০ থেকে '৭০ দশকে ভারতে ফুটবল ছিল জনপ্রিয় খেলা। ওই সময়েই তারা দুবার শিরোপা জিতেছিল এশিয়ান গেমসে। এখন সেই এশিয়ান গেমসে গিয়ে হারে বাজেভাবে। কারণ ফুটবলের চর্চাটা পুরো ভারতজুড়ে নেই। সাফে টেন স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার নবী কাপাডিয়া বলছেন, 'যখন আমরা এশিয়ান গেমস জিতি তখন হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে প্রচুর ফুটবলার বের হতো। এখন এসব জায়গায় খেলাটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে।' আই লিগের দলগুলোর পরিচিতি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়, গোয়া ও বাংলার চারটি করে দল বাদ দিলে কেরলা, মুম্বাই ও পুনে থেকে কয়েকটি দল খেলছে। হারিয়ে গেছে অনেক পুরনো ক্লাব জেসিটি ও মাহিন্দ্রা-মাহিন্দ্রার মতো ক্লাব দল। এই দুটো দলের হারিয়ে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করেন রাহুল বালি, 'আমাদের শিল্পাঞ্চলে ফুটবলের চর্চাটা ভালো থাকলে, সেখানকার দলগুলো আই লিগে খেললে খেলাটার বিস্তৃতি বাড়ত।' অর্থাৎ সর্বভারতীয় পর্যায়ে ফুটবলের পসার নেই বলেই খেলাটা জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে আছে।
ফুটবলের জনপ্রিয়তার বড় উপাদান হলো তারকা, মহাতারকা, যাঁদের টানে মানুষ ছুটে আসবে মাঠে। সর্বশেষ ছিলেন বাইচুং ভুটিয়া, এখন আর জাতীয় দলে নেই। আছেন সুনীল ছেত্রী ও জে জে লাল পেখুলা। এঁদের আবার ৬০-৭০ দশকের জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের পাশে রাখতে চাইছেন না নবী কাপাডিয়া, 'আগে ছিল চুনী গোস্বামী, পি কে ব্যানার্জি, শ্যাম থাপা, হবীব, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ইউসুফ খান, জুলফিকার, ভেঙ্কটেশ, আপ্পারাউ, আহমদ খানের মতো ফুটবলার। তাদের সবাই চিনত এবং তাদের খেলা দেখতেই লোক মাঠে যেত। এখন বাইচুং ভুটিয়াকে তাদের পাশে বসানো যায়, বাকিরা ওই মানের নয়। ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য চাই মেগাস্টার।' এর সঙ্গে যোগ করতে হবে ফুটবলের আধুনিক স্টেডিয়াম_ফুটবল উপভোগের সঙ্গে যেন পিৎজা, হ্যাম বার্গারও খাওয়া যায়। ভারতীয়দের জীবনযাত্রা যেভাবে পাল্টে গেছে সে রকম আকর্ষণীয় মোড়কেই তো উপস্থাপন করতে হবে ফুটবলকে। তা না হওয়া পর্যন্ত ফুটবল সর্বভারতীয় খেলা নয়। ফিরে পাবে না তার হারানো জনপ্রিয়তাও।
No comments