২২ সেকেন্ডে গোল খেয়েও দুরন্ত বার্সেলোনা-বার্সেলোনা ৩ : ১ রিয়াল মাদ্রিদ

তারা গিয়েছিল আন্ডারডগ হিসেবে। ফিরল ফেভারিট হয়ে! অনেকে বিশ্বাস করবেন না। টানা তিনবার স্প্যানিশ লিগের শিরোপা জিতেছে যে দল, দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপে যাদের রাজত্ব সেই বার্সেলোনা কিভাবে আন্ডারডগ হয়? তাও আবার এমন একটা দলের বিপক্ষে যারা গত কয়েক বছরে বার্সার সঙ্গে জেতাটাই ভুলে গেছে! কিন্তু এটাই সত্যি। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরশু রাতে এল ক্লাসিকোর আগে বার্সেলোনা আন্ডারডগই ছিল।


মুখোমুখি পারফরম্যান্সটা গত কয়েক বছরে যেমনই হোক, সাম্প্রতিককালে হোসে মরিনহোর দলটাকে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছিল। একদিকে সব ধরনের ম্যাচে টানা ১৫টি জয়, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-করিম বেনজেমা, গনজালো হিগুয়াইনদের গোলোৎসব; অন্যদিকে বার্সেলোনার পেছনে অ্যাথলেতিক বিলবাও আর গেতাফের মতো মাঝারি মানের দলের সঙ্গে পয়েন্ট হারানোর স্মৃতি। একটা ম্যাচ বেশি খেলেও তিন পয়েন্ট পিছিয়ে থাকার জ্বালা! তার ওপর ম্যাচটা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। এত কিছুর পরেও যদি কেউ এল ক্লাসিকোতে পেপ গার্দিওলার দলকে এগিরে রেখে থাকেন তাহলে তিনি মনপ্রাণ উজাড় করা বার্সেলোনা সমর্থক হতে পারেন, নিখাদ ফুটবলবোদ্ধা নন।
তবে ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরও বোধহয় কথাটা এভাবে লেখা ঠিক হলো না। বরং এখন তো তারাই নিজেদের ফুটবলবোদ্ধা বলে দাবি করতে পারেন যাঁরা এত কিছুর পরও বার্সেলোনাকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। তাঁদের হয়ে মেসি-ফ্যাব্রেগাস, ইনিয়েস্তারা সব হিসাব বদলে দিয়েছেন যে! এক ম্যাচ বেশি খেলার ব্যবধানটা এখনো আছে কিন্তু পয়েন্টের ব্যবধান আর নেই। সেখানে দুই দলই সমান ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে, গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বরং ওপরের অবস্থানটাই বার্সেলোনার! ৩-১ গোলে এল ক্লাসিকো জিতে এভাবেই সব হিসাব বদলে দিয়েছে পেপ গার্দিওলার দল।
শুরুটা অবশ্য অন্য রকম ছিল। ২১ সেকেন্ডের সময় এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে দ্রুততম গোল করলেন করিম বেনজেমা। টুইটার, ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের যত পাতা সব যেন ছেয়ে গেল রিয়াল সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে_জয়, মাদ্রিদের জয়। যদিও কিছু বুঝে ওঠার আগেই হজম করা সেই গোলে রিয়ালের কৃতিত্বের চেয়ে বেশি দায় বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেসের। নিজের খেলোয়াড়কে বল দিতে গিয়ে ভুল করে দিয়ে দেন রিয়ালের একজনকে, তাঁর কাছ থেকে বেনজেমা এবং গোল! ডাগ আউটে বসে মুচকি হাসলেন রিয়ালের কোচ হোসে মরিনহো, যে হাসির অর্থ_এবার আর সহজ জয় নিয়ে ফেরার কথা ভেব না! সেই হাসি ম্লান করে দিতে পারতেন ৭ মিনিটের সময় লিওনেল মেসি। সার্জিও রামোসের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে অসাধারণ এক দৌড়ে সমতা ফিরিয়েই দিয়েছিলেন প্রায়। ইকার ক্যাসিয়াস অবিশ্বাস্য সেভ করলেন বলে রিয়াল সমর্থকদের হাসিটা থাকল আরো কিছুক্ষণ। বেশিক্ষণ নয়। ম্যাচের ঠিক আধঘণ্টার সময় আবার মেসি। নিজে যেটা পারেননি সেটাই করালেন আলেঙ্সি সানচেজকে দিয়ে। প্রায় মাঝমাঠ থেকে দারুণ পাস এবং সানচেজের তার চেয়েও দারুণ ফিনিশিং। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর ডান পায়ের শট একেবারে বোকা বানিয়ে দেয় ক্যাসিয়াসকে। এর আগে অবশ্য রিয়ালকে আরো এগিয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ নষ্ট করেছিলেন স্বয়ং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বেনজেমার পাস থেকে পাওয়া বলটা তিনি সহজেই বাড়াতে পারতেন ডি মারিয়ের দিকে। জায়গা, সময় দুটোই ছিল। কিন্তু তা না করে পর্তুগিজ উইঙ্গার নিজেই শট নিলেন। বারের ওপর দিয়ে গেল সেই শট। আর তারপর সানচেজের গোলে বার্সেলোনার সমতা ফেরানো বদলে দিল ম্যাচের ছবিটাও। দুয়েকটা যা-ও সুযোগ তৈরি করছিল রিয়াল সেগুলোও পূর্ণতা পাওয়ার আগেই আটকে দেন সন্দেহাতীতভাবে ম্যাচের সেরা তারকা কার্লেস পুয়োল।
প্রথমার্ধে লড়াইটা সমানে সমানে হলেও দ্বিতীয়ার্ধে স্পষ্টত বার্সেলোনারই প্রাধান্য। ৫৩ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া জাভির শটটা হয়তো সোজা গেলে ঠেকিয়েই দিতেন ক্যাসিয়াস, কিন্তু সেটা গেল রিয়াল ডিফেন্ডার মার্সেলোর গায়ে লেগে বেশ খানিকটা দিক পরিবর্তন করে। এভাবে বার্সার হয়ে নিজের ৬০০তম ম্যাচে গোল করে দলকে এগিয়ে দিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। এর কিছুক্ষণ পরই আলন্সোর পাস থেকে পাওয়া বলে হেড করে গোল করার সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! ম্যাচে রিয়ালের ভাগ্য যেন তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। বাকি সময়টা বার্সা তাদের আর সুযোগ দেয়নি বরং রোনালদো মিস করার পর পাল্টা আক্রমণ থেকে মেসির পাস দানি আলভেসের ক্রস হয়ে পেঁৗছে যায় রিয়ালের বঙ্,ে উড়ে এসে সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের হেড এবং গোল! ৬৬ মিনিটে বার্সা এভাবে কফিনে শেষ পেরেকটাও ঠুকে দেওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় ছিল না রিয়াল মাদ্রিদ। টেন অ্যাকশন, গোল ডটকম, ইএসপিএন, এএফপি

No comments

Powered by Blogger.