২০ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হবেই : জাবি ভিসি-শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন স্থগিত করার দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। এই নির্বাচন স্থগিত হলে ভবিষ্যতে আর নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে না। আগামী ২০ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হবেই। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।


গতকাল সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ''বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ১৯(২) ধারা অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ সদস্যদের স্থলে পরবর্তী 'সাকসেসর' না আসা পর্যন্ত পূর্ববর্তী সদস্যদের মেয়াদ বহাল আছে। সুতরাং বর্তমান সিনেট সদস্যদের দিয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের আইনগত কোনো বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, ১৩ হাজার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচন চান। অল্পসংখ্যক শিক্ষকের অযৌক্তিক দাবিতে নির্বাচন স্থগিত করা হবে না।'' আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যাবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, 'আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। সিন্ডিকেট ও সিনেটে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীলতার পেছনে সরকারের খামখেয়ালিপনা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, '১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত। প্রশাসনের অনুরোধ উপেক্ষা করে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক অধিকারের অপচর্চা করছেন। প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে সেখানে কাউকে ঢুকতে না দেওয়া গণতান্ত্রিক আচরণ নয়-কি?। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ শিক্ষকদের স্বাধীনতা দিয়েছে বলে তাঁরা স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারেন না।' উপাচার্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
উপাচার্য বলেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ জন্য সর্বাগ্রে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন স্থগিত করতে পারলে কর্তৃপক্ষ স্বস্তিবোধ করত। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিনটে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি আছে। সেসব ক্যাটাগরিতে অতিদ্রুত নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ও জাকসু প্রতিনিধি নির্বাচন খুবই সময়সাপেক্ষ বিষয়। তদুপরি রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমতাবস্থায় সিনেটের বিভিন্ন ক্যাটাগরির নির্বাচন শেষ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। উপাচার্য আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আন্দোলন পরিহার করে ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ২০ জুলাই বিশেষ সিনেট সভা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করবেন এবং ১৯৭৩ অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন।
মতবিনিময় সভায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য, রেজিস্ট্রার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের আন্দোলন অব্যাহত : এ দিকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন স্থগিতের দাবিতে গতকালও সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ প্রশাসনিক ভবনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। সকাল ৭টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের তিনটি প্রবেশদ্বারে শিক্ষকরা অবস্থান নেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান করেন। শিক্ষকদের বাধার কারণে প্রশাসনিক ভবন দ্বিতীয় দিনের মতো তালাবদ্ধ ছিল। অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশে অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক হানিফ আলী, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক রশীদ হারুন, ড. শরীফ উদ্দীন, মীর ফেরদৌস হোসাইন, লুৎফুল এলাহী লিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার ও বুধবার কর্মবিরতিসহ সর্বাত্মক ধর্মঘট এবং বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.