বুয়েট ভিসির পদত্যাগই একমাত্র সমাধান by মো. আশরাফুল ইসলাম

বর্তমান উপাচার্য বিভিন্ন অনিয়ম ও অসংগতিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। আমরা সব সময়ই এর প্রতিকার চেয়েছি। আজ যে ১৬ পয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে, সেটা তো গত এপ্রিল মাসে চিহ্নিত হয়েছে। আজ যদি নতুন করে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, এর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তিনি একটি সুবিধাভোগী শ্রেণী তৈরি করেছেন।


তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সংখ্যা যা-ই হোক, আমরা সত্যের পক্ষে যাঁরা আছি, বুয়েটের ঐতিহ্যকে যাঁরা আন্তরিকভাবে গ্রহণীয় বলে মনে করি, তাঁরা শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একাত্ম হয়েছে। তারাও দেখছে বিষয়গুলো। কারণ শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতাই নয়, একাডেমিক অনিয়মও তার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যা ছাত্রদেরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। একইভাবে আমরা প্রচারমাধ্যমের সহযোগিতা পাচ্ছি। প্রচারমাধ্যমে বিগত দিনে আমাদের প্রচেষ্টাগুলো নিয়ে তেমন লেখালেখি হয়নি। আমরাও সেটা চাইনি। কিন্তু যে মুহূর্তে ভিসি সাহেব সংশোধনের পথে না গিয়ে নিজের পথেই চলতে অনড় রইলেন, আমাদের উত্থাপিত দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করতে থাকলেন, তখন আমরাও আন্দোলনের পথ বেছে নিলাম। তবে স্পষ্টভাবে বলা দরকার, বুয়েটের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী- কেউ-ই কখনো উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই আমাদের আন্দোলনের পথও অহিংস থাকবে এবং তা আছেও। এখন তো বুয়েটের বাইরে থেকেও বলা হচ্ছে ভিসি, প্রোভিসিকে চলে যাওয়ার জন্য। সর্বজনীন দাবি বলতে পারেন। সম্পূর্ণ অদক্ষতা ও অনিয়ম যার অন্যতম পরিচয় তিনি নিজে থেকে চলে গেলে হয়তো আজ আমাদের এই আন্দোলনে যেতে হতো না। বলা হচ্ছে, আমাদের ১৬ দফা দাবির প্রায় পুরোটাই মেনে নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বক্তব্য এটা। একটা জিনিস দেখুন, সাধারণ অন্যায়ের কারণে বুয়েটের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের ভিসির পদত্যাগ দাবি করা হয়নি।
আলোচনার প্রসঙ্গে বলতে চাই, আমরা আলোচনাকে বরাবরই সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে মনে করেছি। যে কারণে আমরা উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে একের পর এক আলোচনা করেছি। আমরা তাঁকে অনিয়মগুলো অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ অবস্থাটা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়। বরাবরই তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। তার পরও আমরা বিশ্বাস করি, কোনো না কোনো পথ নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনার ফল সবাই জানে। তবে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। তাঁর কাছে যেসব তথ্য গেছে, তার সবই সঠিক ছিল না। আজ নিশ্চয়ই তিনি আমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। দেশের প্রচারমাধ্যমে আমাদের সমস্যাগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে বর্তমান ভিসির পদত্যাগ ও নতুন উপাচার্য নিয়োগের পর- এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে আনা ঠিক হবে না। কারণ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্নধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান। এর নিজস্ব একটা রীতি-প্রথা আছে। সেগুলো মানা হয়নি বলেই আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যখন রীতিগুলো মানা হবে, আমরা মনে করি, আর কোনো অসন্তোষ থাকবে না। আর এ জন্য চাই নতুন উপাচার্য।
কেউ কেউ এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক আবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে এটা ঠিক নয়। কারণ অর্ডিন্যান্সে এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে। তবে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ আছেন। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কাউকে না কাউকে ভোট দেন। এর সঙ্গে বুয়েটের কোনো সম্পর্ক নেই। বাইরে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার কারণে এখানে তার প্রতিফলন ঘটবে- এটা ঠিক নয়।
দলীয়করণের প্রসঙ্গ যদি বলা হয়, তাতেও হয়তো এতটা বিপত্তির কিছু হতো না। যদি নিয়মতান্ত্রিক পথে যেতেন। তেমন হলে আজ যে আন্দোলন হচ্ছে তারও প্রয়োজন হতো না। দলীয় লোক যদি যোগ্য হন, তাহলে কেন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস বাদ দিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এটাও ঠিক নয়। উপাচার্য নিজেই ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছেন। এ মুহূর্তে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হতে দেখা যায়। তারা এসেছে একান্তই মনের তাগিদে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তারা এই পথে আসছে। আমরা তাদের কথাও মনে রাখব। ছুটি ঘোষণার কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। আন্দোলন শেষে আমরা শীতকালীন ছুটি নেব না। সাপ্তাহিক ছুটিতেও ক্লাস করা
যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.