আকিজ বিড়ি কারখানায় গুলি-দুই শ্রমিকের লাশ দাফন কাজে যাননি শ্রমিকেরা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আকিজ বিড়ি কারখানায় আনসারের গুলিতে নিহত দুই শ্রমিকের লাশ গতকাল সোমবার দাফন করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল কাজে যাননি। দৌলতপুর ও কুষ্টিয়া শহরে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে।


পেটে গুলিবিদ্ধ শ্রমিক নজরুল ইসলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, আকিজ বিড়ি কারখানার শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম ও মিন্টু আহমেদের লাশের ময়নাতদন্ত গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়। বিকেলে দৌলতপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জানাজা শেষে ভাংগাপাড়া এলাকায় পাশাপাশি দুটি কবরে তাঁদের দাফন করা হয়।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল আকিজ বিড়ি কারখানার কোনো শ্রমিক কাজে যাননি। শ্রমিকেরা জানান, গতকাল সারা দিন তাঁরা দৌলতপুরের বৈরাগীরচর ও ভাংগাপাড়া এলাকায় মিছিল করেছেন। বিকেলে আকিজ বিড়ি কারখানার পাশে হোসেনাবাদ স্কুল মাঠে তাঁরা সমাবেশ করেন। এলাকাবাসীও সমাবেশে যায়। বিকেল পাঁচটার দিকে সমাবেশে উপস্থিত হন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ও পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারকে ছয় লাখ টাকা করে এবং আহত শ্রমিকদের তিন লাখ টাকা দেওয়া ও আকিজ বিড়ি কারখানার ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাঁকে পদচ্যুত করার দাবি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক এ সময় মালিক পক্ষের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে মাইকে ঘোষণা দেন, তাঁদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরেও মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিড়ি শ্রমিকেরা।
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রোববার আকিজ বিড়ি কারখানায় মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আনসার সদস্যদের গুলিতে দুই শ্রমিক নিহত হন। ওই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
‘কাকে বাপ বইলি ডাকবে’
‘ম্যালা আদরের মেয়ি আমার, ওর বাবা আনন্দ পায়ি নাম রাখে খুশি। এই খুশির মুখ এখন কে দেখবে। খুশি বড় হয়ি কাকে বাপ বইলি ডাকবে।’ ১০ মাসের শিশুসন্তান বুকে জড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন রোজিনা খাতুন। তিনি নিহত মিন্টু আহমেদের স্ত্রী। মা, স্ত্রী আর ১০ মাসের মেয়ে খুশিকে নিয়ে মিন্টুর পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন মিন্টু। গতকাল সোমবার বিকেলে ভাংগাপাড়া এলাকায় মিন্টুর বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ সময় বিলাপ করে অচেতন হয়ে যান মিন্টুর স্ত্রী রোজিনা। মূর্ছা যাচ্ছিলেন মিন্টুর মা বেদেনা খাতুন।
তিন মাসের ছেলে আবদুর রহমানকে নিয়ে নির্বাক বসে ছিলেন রাকিবুলের স্ত্রী মিতা খাতুন। বিকেল চারটার দিকে বৈরাগীরচর গ্রামে রাকিবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে কোলে নিয়ে বিলাপ করছেন মিতা। মা, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ছিল রাকিবুলের পরিবার। রাকিবুলই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম।
স্ত্রী মিতা বিলাপ করে বলেন, ‘আমার খাটার (আয় করা ব্যক্তি) লোক চলি গেল, আমার ছেলেক এখন কে মানুষ করবি, কে বড় করি তুলবি।’
দুই শ্রমিকের বাড়িতেই কান্নার রোল। বৈরাগীরচর ও ভাংগাপাড়া গ্রামবাসীর সব পথ যেন মিশেছে তাঁদের বাড়িতে। সান্ত্বনা দিতে এসে সবার চোখ ভিজে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.