সিডনির মেলব্যাগ-বাণিজ্য অধিকার সুরক্ষা ও প্রবাসে রমজান by অজয় দাশ গুপ্ত
ভদ্রমহিলাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যস্ত এবং প্রতিষ্ঠিত। অবশ্য নারী স্বাধীনতার এই দেশে কে যে কি আর কার যে কি মর্যাদা, বোঝা মুশকিল। ভদ্রমহিলা এসেই হাঁক দিলেন, ‘জীবনে আর যাই করি চীনের সঙ্গে ব্যবসা করব না।’ ব্যস্ত দুপুরবেলায় তাঁর উচ্চকিতকণ্ঠে অনেকেই ফিরে তাকাচ্ছিলেন।
কোন অজি চীনের সঙ্গে ব্যবসা করল কি না করল, তাতে গণচীনের কিছুই আসে-যায় না। তারপরও চীন নিয়ে অভিযোগ কিন্তু কম কিছু নয়। আমাদের দেশ বা এশিয়ার দেশের তুলনায় স্বপ্নের দেশ হলেও চীনের অর্থনৈতিক লেনদেন বিশেষত ব্যাংকিং আর সাধারণ স্তরে বাণিজ্য এখনও অনিয়ম, সময় ক্ষেপণে আর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশের নিয়মশৃঙ্খলা আর সুবিন্যস্ত জীবনপ্রবাহের সঙ্গে তুলনাও করা যায় না। তাই ভদ্রমহিলার ক্ষোভের কারণ অনুমান করাও কঠিন কিছু ছিল না। গোল বাঁধল তিনি যখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করতে শুরু করলেন। কপালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ চিন্তা করেই চেঁচাতে লাগলেন এনাদার কান্ট্রি ইজ বাংলাদেশ। এখন তো তার চুপ করে থাকা যায় না। এক্ষুণই না থামালে তাঁর ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগবে না। এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করি, বাংলাদেশে কি সমস্যা? কে বা কারা তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে? অসুবিধাই বা কি? হাতের কাগজখানা বের করে দেখালেন অনেক আগে কয়েক হাজার ডলার পাঠিয়ে দেয়ার রশিদ। ছোট্ট এক অভ্যর্থনা কক্ষে বসিয়ে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ভদ্রমহিলা তাঁর কাছে প্রেরিত ই-মেইল ও অন্যান্য যোগাযোগের সংরক্ষিত কপি দেখাতেও ভুললেন না। টাকা পাবার পরপরই আমাদের দেশের ব্যবসায়ী অন্য ভাষায় পত্রালাপ করতে শুরু করেছেন। মাল দেবেন না। বা দিতে কি অসুবিধা তা না লিখে, না জানিয়ে কেবলই সময় নষ্ট করছেন। একবার লিখছেনÑআমি ছুটিতে, একবার বলছেন হলিডেতে, কোনবার লিখছেন শপথ করছি এ হপ্তাতেই পাঠিয়ে দেব। ভদ্রমহিলাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে গুগল থেকে বের করে দেশের কিছু পরিচিতজনের ঠিকানা যোগাড় করে বিদায় দিয়েছিলাম বটে। কিন্তু এই অন্যায্য অসাধুতা আর দেশের নাম ডোবানোর বিচার হবে কিভাবে? ভদ্রমহিলা জানালেন, এর আগেও তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন, তাঁর সিডনিময় ছড়িয়ে থাকা চালু দোকানগুলোর জন্য মহিলাদের পোশাক ও সাজসজ্জার অলঙ্কার ইত্যাদি আমদানি করেছেন। দেরি হলেও বিঘœ বা হঠকারিতার মতো কিছু ঘটেনি। এ যাত্রায় তিনি বিরক্ত, ক্ষুব্ধ আর হতাশ। বলছিলেন, আমাদের দেশের সঙ্গে ব্যবসাই করবেন না আর। এই তাঁর প্রতিক্রিয়া। জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে এমন আচরণ ও ব্যবহার করে কেউ যেন পার না পায় বা যথাযথ শাস্তি ভোগ করে; এটা কাম্য বটে। কিন্তু কিভাবে তা নিশ্চিত করা সম্ভব?
উন্নত দেশে এমনকি আমাদের দেশেও ফেয়ার ট্রেডিং ডিপার্টমেন্টের অস্তিত্ব আছে। এদের কাজই হচ্ছে, এ ধরনের সমস্যা নিরসন বা অভিযোগের উত্তর দেয়া। প্রয়োজনে আইনী সাহায্য ও বিচারের ব্যবস্থা করে দেয়া। কিন্তু কোথায় পাব তারে? অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাইনি। কাজ হতো কি-না জানি না। ভদ্রমহিলা আরও অসুবিধা বা অন্য চক্করে পড়ত কি-না, তাও জানি না। তবে এটা নিশ্চিত, তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর রাগ ও উত্তেজনার প্রশমন সম্ভবপর হয়ে উঠত। তাছাড়া এটাই তো নিয়ম হওয়া উচিত। সহায়তা শব্দটির মানে তো তাই। সমাধান দিতে না পারলেও পাশে দাঁড়ানো। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ সবই উত্তেজনাপ্রবণ। কে যে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কে কার অভিভাবক; বোঝা মুশকিল। অথচ এগুলোই হওয়া উচিত মূল সমস্যা। বাংলাদেশের অবস্থান যে কোন মাপে চীনের তুলনায় নগন্য। চীনকেই যেখানে এড়িয়ে বাণিজ্য বা ব্যবসা সম্ভব, আমরা তো কোন, ছাড়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা, বিশেষত ক্ষুদ্র বা সাধারণস্তরে নিতান্ত সৎ ও নিষ্ঠাপরায়ণ। অল্প কিছু অসাধু যার উদ্দেশ্য বা অভীষ্ট পূরণে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত এমন ব্যবসায়ীর জন্য জাতীয় ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। একবার ভেবেছিলাম ঘটনাটি দূতাবাসের কাছে পাঠাই, তাঁদের নম্বর দিয়ে দিই; ফের ভাবলাম কি লাভ? তাঁরা ব্যস্ত তাঁদের সমস্যা নিয়ে। তা ছাড়া এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার সময়ইবা কোথায় আমাদের? সময় থাক বা না থাক, আজ আমরা এমন অবস্থানে এসে পৌঁছেছি এসব সমস্যার সমাধানে বিলম্ব হলে মেরুদ- দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশ-বিদেশে সৎ আর নিষ্ঠাবান বাঙালী ব্যবসায়ীদের তুলে ধরার দায়িত্ব জাতির। এহেন ঘৃণ্য অর্থলোভীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় বা কারা তা নিশ্চিত করেন, জানালে বিশ্ববাঙালী উপকৃত হবে। শয়তানও সাবধান হয়ে যাবে। আমাদের ভাবমূর্তি বা বাণিজ্যও তোপের মুখে পড়বে না। আমরা কি তা প্রত্যাশা করতে পারি?
পুনশ্চ
রমজানের প্রভাব দেশের মতো এখানেও চলমান। এক মাস সিয়াম সাধনা আর সংযমের স্রোতে ভাসমান বাঙালীর অন্যান্য কর্মকা- শ্লথ হয়ে পড়বে। তার আগেই সিডনি ঘুরে যাবেন প্রখ্যাত শিল্পী কনকচাঁপা, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলসের আমন্ত্রণে এই শিল্পীর আগমন ও অনুষ্ঠানের প্রধান কর্তা মোবারক হোসেন জানালেন সব কিছু চলছে ঠিকভাবে নির্দিষ্ট গতিতে। সম্ভবত রমজানের পূর্বে এটাই হবে শেষ বড় কোন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। রোজার মাস শেষ হলেই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিবস স্মরণে জেগে উঠবেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদক সাংবাদিক পিএস চুলু জানালেন এবারের শোক দিবসে প্রকাশিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও বঙ্গবন্ধুর ঔদার্য ও আন্তর্জাতিকতা নিয়ে কাজ হবে। আমরা অপেক্ষায় দিন গুনছি। আত্মজীবনীটি যে বিশ্বপ্রচার ও মনোযোগ কামনা করে; তা কিন্তু বলাই বাহুল্য।
উন্নত দেশে এমনকি আমাদের দেশেও ফেয়ার ট্রেডিং ডিপার্টমেন্টের অস্তিত্ব আছে। এদের কাজই হচ্ছে, এ ধরনের সমস্যা নিরসন বা অভিযোগের উত্তর দেয়া। প্রয়োজনে আইনী সাহায্য ও বিচারের ব্যবস্থা করে দেয়া। কিন্তু কোথায় পাব তারে? অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাইনি। কাজ হতো কি-না জানি না। ভদ্রমহিলা আরও অসুবিধা বা অন্য চক্করে পড়ত কি-না, তাও জানি না। তবে এটা নিশ্চিত, তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর রাগ ও উত্তেজনার প্রশমন সম্ভবপর হয়ে উঠত। তাছাড়া এটাই তো নিয়ম হওয়া উচিত। সহায়তা শব্দটির মানে তো তাই। সমাধান দিতে না পারলেও পাশে দাঁড়ানো। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ সবই উত্তেজনাপ্রবণ। কে যে কাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কে কার অভিভাবক; বোঝা মুশকিল। অথচ এগুলোই হওয়া উচিত মূল সমস্যা। বাংলাদেশের অবস্থান যে কোন মাপে চীনের তুলনায় নগন্য। চীনকেই যেখানে এড়িয়ে বাণিজ্য বা ব্যবসা সম্ভব, আমরা তো কোন, ছাড়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা, বিশেষত ক্ষুদ্র বা সাধারণস্তরে নিতান্ত সৎ ও নিষ্ঠাপরায়ণ। অল্প কিছু অসাধু যার উদ্দেশ্য বা অভীষ্ট পূরণে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত এমন ব্যবসায়ীর জন্য জাতীয় ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। একবার ভেবেছিলাম ঘটনাটি দূতাবাসের কাছে পাঠাই, তাঁদের নম্বর দিয়ে দিই; ফের ভাবলাম কি লাভ? তাঁরা ব্যস্ত তাঁদের সমস্যা নিয়ে। তা ছাড়া এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার সময়ইবা কোথায় আমাদের? সময় থাক বা না থাক, আজ আমরা এমন অবস্থানে এসে পৌঁছেছি এসব সমস্যার সমাধানে বিলম্ব হলে মেরুদ- দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশ-বিদেশে সৎ আর নিষ্ঠাবান বাঙালী ব্যবসায়ীদের তুলে ধরার দায়িত্ব জাতির। এহেন ঘৃণ্য অর্থলোভীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় বা কারা তা নিশ্চিত করেন, জানালে বিশ্ববাঙালী উপকৃত হবে। শয়তানও সাবধান হয়ে যাবে। আমাদের ভাবমূর্তি বা বাণিজ্যও তোপের মুখে পড়বে না। আমরা কি তা প্রত্যাশা করতে পারি?
পুনশ্চ
রমজানের প্রভাব দেশের মতো এখানেও চলমান। এক মাস সিয়াম সাধনা আর সংযমের স্রোতে ভাসমান বাঙালীর অন্যান্য কর্মকা- শ্লথ হয়ে পড়বে। তার আগেই সিডনি ঘুরে যাবেন প্রখ্যাত শিল্পী কনকচাঁপা, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলসের আমন্ত্রণে এই শিল্পীর আগমন ও অনুষ্ঠানের প্রধান কর্তা মোবারক হোসেন জানালেন সব কিছু চলছে ঠিকভাবে নির্দিষ্ট গতিতে। সম্ভবত রমজানের পূর্বে এটাই হবে শেষ বড় কোন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। রোজার মাস শেষ হলেই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিবস স্মরণে জেগে উঠবেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদক সাংবাদিক পিএস চুলু জানালেন এবারের শোক দিবসে প্রকাশিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও বঙ্গবন্ধুর ঔদার্য ও আন্তর্জাতিকতা নিয়ে কাজ হবে। আমরা অপেক্ষায় দিন গুনছি। আত্মজীবনীটি যে বিশ্বপ্রচার ও মনোযোগ কামনা করে; তা কিন্তু বলাই বাহুল্য।
No comments