প্রশাসনে মন্ত্রী-এমপিদের তদবির by লঙ্ঘিত হচ্ছে চাকরিবিধি
জনপ্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিদের তদবির, ডিও লেটার প্রেরণের সংস্কৃতি বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের। যখন যে দল বা জোট ক্ষমতায় আসছে, তখন সে দল বা জোট নিজেদের পছন্দ অনুসারে পদোন্নতি প্রদান, ওএসডি করা ও বদলি বিষয়ে মৌখিক নির্দেশ, ডিও লেটার প্রেরণ করছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে অনুযায়ী
প্রশাসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কালের কণ্ঠের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এ প্রবণতা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা হয়েছে, প্রশাসনের কর্মচারীদের পক্ষে তদবির আইনত নিষিদ্ধ হলেও অনেক মন্ত্রী-এমপিই তা মানছেন না। বদলি, ওএসডি থেকে দ্রুত পদায়ন, জ্যেষ্ঠতা প্রদান, প্রেষণে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সব কাজে তাঁরা হস্তক্ষেপ করছেন। উল্লেখ্য, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, 'কোনো সরকারি কর্মচারী তাঁর চাকরি-সংক্রান্ত কোনো বিষয় কোনো দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোনো সরকারি কর্মচারীর উপর রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বহিঃপ্রভাব খাটাইতে বা খাটাইবার চেষ্টা করিতে পারিবেন না।' শুধু আচরণ বিধিমালার এই একটি শর্ত মেনে চললে বাংলাদেশের প্রশাসন অনেক স্বচ্ছ, জবাবদিহিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন এ শর্তের কথা মনে রাখেন না, তেমনি মন্ত্রী, এমপি এবং রাজনৈতিক নেতারা এ শর্তকে গুরুত্ব দেন না। ফলে দেশের প্রশাসনে রাজনৈতিকীকরণ এবং রাজনৈতিক প্রভাব একদিকে যেমন কারো জন্য সুবিধা এনে দিচ্ছে, অন্যদিকে এতে কাউকে হতে হচ্ছে বঞ্চিত। আর স্বাভাবিক কারণেই প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। আবার ডিও লেটার হলো এমন এক বিশেষ ব্যবস্থা, যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই চালু রয়েছে। ডিও লেটার একটি সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা। এটি একটি ব্যক্তিগত দৃষ্টি আকর্ষণের চিঠি। সরকারি কাজের নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যেতে ডিও লেটার প্রদানের ব্যবস্থা থাকে। এই মর্যাদাপূর্ণ চিঠি লিখতে হয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নাম উল্লেখ করে। সুতরাং এটি সচরাচর প্রেরণের বিষয় নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ডিও লেটার হয়ে দাঁড়িয়েছে সব ধরনের তদবিরের হাতিয়ার।
দেশে প্রশাসনে হস্তক্ষেপের এ সংস্কৃতি জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই বন্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরের ফলে হয়তো একজন কারো পদোন্নতি হয়, হয়তো কোনো বঞ্চিত কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাঁর প্রাপ্য পেয়ে থাকেন। তবে ব্যক্তিবিশেষের জন্য কাজ হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এ সংস্কৃতি ভয়ানক ক্ষতিকর ফলাফল বয়ে আনে। এতে অন্যায্য হস্তক্ষেপেরও আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আনুগত্য তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দলীয়করণের শিকার হয়ে থাকেন। আমরা জানি, রাজনৈতিক নেতারা কাজ করে থাকেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে। যদি তা-ই হয়, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে তাঁদের প্রশাসনকে যথাযথ কাজ করতে দেওয়া উচিত। প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিয়ম থেকে বিরত হতে বাধ্য হবেন। প্রশাসনবিষয়ে অভিজ্ঞ দেশের সচেতন নাগরিকরা মনে করে, চাকরিবিধিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে জ্যেষ্ঠতা মেনে চলার ব্যবস্থা রাখা দরকার। বেশ কিছুদিনে সরকার তিন স্তরে পদোন্নতি দেওয়ার ফলে মাথাভারী প্রশাসন তৈরি হয়েছে। এ পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। অন্যদিকে দেশের শত শত কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সরকারই প্রশাসনে অন্যায় হস্তক্ষেপ করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থার ব্যত্যয় ঘটা প্রয়োজন। মন্ত্রী ও এমপিদের কাছে জনগণ দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে- এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।
দেশে প্রশাসনে হস্তক্ষেপের এ সংস্কৃতি জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই বন্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরের ফলে হয়তো একজন কারো পদোন্নতি হয়, হয়তো কোনো বঞ্চিত কর্মকর্তা বা কর্মচারী তাঁর প্রাপ্য পেয়ে থাকেন। তবে ব্যক্তিবিশেষের জন্য কাজ হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এ সংস্কৃতি ভয়ানক ক্ষতিকর ফলাফল বয়ে আনে। এতে অন্যায্য হস্তক্ষেপেরও আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আনুগত্য তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দলীয়করণের শিকার হয়ে থাকেন। আমরা জানি, রাজনৈতিক নেতারা কাজ করে থাকেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে। যদি তা-ই হয়, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে তাঁদের প্রশাসনকে যথাযথ কাজ করতে দেওয়া উচিত। প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিয়ম থেকে বিরত হতে বাধ্য হবেন। প্রশাসনবিষয়ে অভিজ্ঞ দেশের সচেতন নাগরিকরা মনে করে, চাকরিবিধিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে জ্যেষ্ঠতা মেনে চলার ব্যবস্থা রাখা দরকার। বেশ কিছুদিনে সরকার তিন স্তরে পদোন্নতি দেওয়ার ফলে মাথাভারী প্রশাসন তৈরি হয়েছে। এ পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। অন্যদিকে দেশের শত শত কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সরকারই প্রশাসনে অন্যায় হস্তক্ষেপ করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থার ব্যত্যয় ঘটা প্রয়োজন। মন্ত্রী ও এমপিদের কাছে জনগণ দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে- এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।
No comments