সমঝোতা বা পিলখানায় অভিযান চালানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল-হত্যাযজ্ঞ মামলার সাক্ষ্যে নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন
বিডিআর বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহী জওয়ানদের সঙ্গে সমঝোতা অথবা পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে অভিযান চালানোর জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে আদালতকে জানিয়েছেন নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন আহমেদ।
এটিই প্রথম সশস্ত্র বাহিনীর কোন প্রধানের আদালতে পোশাক পরিহিত অবস্থায় সাক্ষ্য প্রদানের ঘটনা। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। উপস্থিত অনেক আইনজীবীই আদালতে সশস্ত্র বাহিনীর কোন প্রধানের পোশাক পরিহিত অবস্থায় সাক্ষ্য প্রদানের ঘটনায় আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মাঠে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে শুরু হয়। আদালত ছিল জনাকীর্ণ। আদালতে সরকার ও আসামিপক্ষের বহু আইনজীবী ও মিডিয়া কর্মী উপস্থিত ছিলেন। দুই দফায় বিরতির পর বিকেল পৌনে ৫টায় আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়। সোমবার নৌবাহিনীপ্রধানসহ ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। আগামী ১৮ জুলাই বুধবার আদালতের কার্যক্রম আবার শুরু হবে। ততদিন কার্যক্রম মুলতবি করার ঘোষণা দেয় আদালত। কার্যক্রম চলাকালে পোশাক পরিহিত অবস্থায় আদালতে হাজির হন নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁর জবানবন্দী আদালতে উপস্থাপন করেন।
নৌবাহিনীপ্রধান আদালতকে জানান, সকাল ১০টায় রাজধানীর পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে গ-গোলের খবর পাওয়ার পর দুপুর ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ডাক আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বাসভবন যমুনায় গেলে সেখানে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ ও বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। দুই বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে আমরা (তিন বাহিনীর প্রধানগণ) সমঝোতা অথবা সামরিক অভিযানের কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিডিআর সদস্যরা সমঝোতার জন্য আসছে।
তিন বাহিনী প্রধানের যমুনায় অবস্থানকালেই ডিএডি তৌহিদসহ ১২-১৪ জন বিডিআর সদস্য আসেন। তাঁরাও বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিডিআর সদস্যরা উচ্চস্বরে এবং উত্তেজিতভাবে কথা বলছিলেন। বিডিআর দল সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা সংসদে পাস করার দাবি তোলে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পিলখানার ভেতরে সেনা কর্মকর্তাদের অবস্থা সম্পর্কে বিডিআরের দলটির কাছে জানতে চান। বিডিআর দলটি জানায়, তাঁরা ভাল আছেন।
বৈঠক যোগদানকারী বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও। তিনি আমাদের দেখিয়ে বলেন, এখানে তিন বাহিনীর প্রধানগণ আছেন, আত্মসর্মপণ না করলে তারা কঠিন এ্যাকশনে যাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমার মৌখিক আশ্বাসের পর বিডিআর সদস্যরা আত্মসমর্পণে সম্মত হয়ে পিলখানায় ফিরে যান।
বৈঠককালে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার কথা বিডিআর সদস্যরা স্বীকার করেননি। নৌবাহিনীপ্রধান আরও জানান, তিনি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নৌবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছিলেন।
সাক্ষ্য প্রদান শেষে বিশেষ এজলাসে জহিরউদ্দিন আহমেদকে প্রথমে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। এরপর তাঁকে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী শামীম সরদার জেরা করেন। নৌবাহিনীপ্রধান জেরার সময় আইনজীবীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এরপর আসামি ডিএডি মীর্জা হাবিবুর রহমানের পক্ষে সরকার নিযুক্ত আইনজীবী নূরুল ইসলাম নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরা করতে দাঁড়ালে তাঁকে বাধা দেন আসামি নিজেই। আসামি আদালতে বলেন, আমি আইনজীবী নিয়োগ করিনি। তবে নৌবাহিনীপ্রধানকে আমার জেরা করার ইচ্ছে আছে। আসামি নিজেই নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরা করার অনুমতি চান আদালতের কাছে।
আসামির এমন আবদারের বিষয়ে আদালত জানায়, কেউ আইনজীবী নিয়োগ না করলে সরকারপক্ষ থেকে তাঁর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া আসামি নিজে কাউকে জেরা করা আইনে নেই। কিন্তু আসামি হাবিবুর রহমান তা মানতে আপত্তি করেন। পরে নৌবাহিনীপ্রধানকে আর আসামির পক্ষে জেরা করা সম্ভব হয়নি। আসামিও আর নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে নৌপ্রধানকে জেরা শেষ হয়। এরপর তিনি আদালত থেকে বের হন। এ সময় নৌপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, একজন বাহিনীর প্রধান হিসেবে এবং পোশাকে আমি প্রথম এই আদালতে সাক্ষ্য দিলাম। সমঝোতার পক্ষে মত দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই তো আমাদের নিজেদের মধ্যেই। ভাই বা আত্মীয়স্বজন। এজন্যই সমঝোতার পক্ষে মত দেয়া হয়।
গত ৪ জুলাই এ আদালতের বিচারক অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ আকতারুজ্জামান এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানকে তলব করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত দাবিদাওয়া আদায়ের নামে রাজধানীর পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে ইতিহাসের জঘন্যতম সেই বিডিআর বিদ্রোহের সূচনা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে পিলখানা বিডিআর দরবার হলে বার্ষিক দরবার শুরু হয়। এরই মধ্যে দরবার হলে উপস্থিত জওয়ানরা জাগো বলে হুঙ্কার দিয়ে দরবার হল ত্যাগ করে। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিমকে টেনে হিঁচড়ে বের করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্রাগার লুট করে। বিদ্রোহী সিপাহী মাঈন লুণ্ঠিত অস্ত্র নিয়ে দরবার হলে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করে। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য চৌকস সেনা কর্মকর্তারা মাঈনকে নিরস্ত্র করে ফেলেন। এরপরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শত শত বিদ্রোহী অস্ত্রাগার লুট করে অস্ত্র হাতে দরবার হলে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিতে পুরো দরবার হল ঝাঁঝরা হয়ে যায়। বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর চালাতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন। একে একে বাসা থেকে ধরে এনে হত্যা করতে থাকে সেনা কর্মকর্তাদের। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারিও একইভাবে চলে হত্যাকা-। টানা দু’দিনে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। হত্যার পর সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহ ম্যানহোল দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। অনেকের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। গণকবর দেয়া হয় অনেক সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ। হত্যাযজ্ঞের পর দ্রুত লাশ গুম করতে মৃতদেহগুলো খুবই আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে, ম্যানহোলে, নর্দমায়।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় একটি বিদ্রোহ আইনে এবং আরেকটি ফৌজদারী আইনে মামলা হয়। রাজধানীর লালবাগ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ফৌজদারী আইনে মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এ মামলাটির বিচার চলছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাঠে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার মাঠে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে শুরু হয়। আদালত ছিল জনাকীর্ণ। আদালতে সরকার ও আসামিপক্ষের বহু আইনজীবী ও মিডিয়া কর্মী উপস্থিত ছিলেন। দুই দফায় বিরতির পর বিকেল পৌনে ৫টায় আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়। সোমবার নৌবাহিনীপ্রধানসহ ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। আগামী ১৮ জুলাই বুধবার আদালতের কার্যক্রম আবার শুরু হবে। ততদিন কার্যক্রম মুলতবি করার ঘোষণা দেয় আদালত। কার্যক্রম চলাকালে পোশাক পরিহিত অবস্থায় আদালতে হাজির হন নৌবাহিনীপ্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁর জবানবন্দী আদালতে উপস্থাপন করেন।
নৌবাহিনীপ্রধান আদালতকে জানান, সকাল ১০টায় রাজধানীর পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে গ-গোলের খবর পাওয়ার পর দুপুর ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ডাক আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বাসভবন যমুনায় গেলে সেখানে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ ও বিমানবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। দুই বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে আমরা (তিন বাহিনীর প্রধানগণ) সমঝোতা অথবা সামরিক অভিযানের কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিডিআর সদস্যরা সমঝোতার জন্য আসছে।
তিন বাহিনী প্রধানের যমুনায় অবস্থানকালেই ডিএডি তৌহিদসহ ১২-১৪ জন বিডিআর সদস্য আসেন। তাঁরাও বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিডিআর সদস্যরা উচ্চস্বরে এবং উত্তেজিতভাবে কথা বলছিলেন। বিডিআর দল সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা সংসদে পাস করার দাবি তোলে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পিলখানার ভেতরে সেনা কর্মকর্তাদের অবস্থা সম্পর্কে বিডিআরের দলটির কাছে জানতে চান। বিডিআর দলটি জানায়, তাঁরা ভাল আছেন।
বৈঠক যোগদানকারী বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও। তিনি আমাদের দেখিয়ে বলেন, এখানে তিন বাহিনীর প্রধানগণ আছেন, আত্মসর্মপণ না করলে তারা কঠিন এ্যাকশনে যাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমার মৌখিক আশ্বাসের পর বিডিআর সদস্যরা আত্মসমর্পণে সম্মত হয়ে পিলখানায় ফিরে যান।
বৈঠককালে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার কথা বিডিআর সদস্যরা স্বীকার করেননি। নৌবাহিনীপ্রধান আরও জানান, তিনি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নৌবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছিলেন।
সাক্ষ্য প্রদান শেষে বিশেষ এজলাসে জহিরউদ্দিন আহমেদকে প্রথমে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। এরপর তাঁকে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী শামীম সরদার জেরা করেন। নৌবাহিনীপ্রধান জেরার সময় আইনজীবীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এরপর আসামি ডিএডি মীর্জা হাবিবুর রহমানের পক্ষে সরকার নিযুক্ত আইনজীবী নূরুল ইসলাম নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরা করতে দাঁড়ালে তাঁকে বাধা দেন আসামি নিজেই। আসামি আদালতে বলেন, আমি আইনজীবী নিয়োগ করিনি। তবে নৌবাহিনীপ্রধানকে আমার জেরা করার ইচ্ছে আছে। আসামি নিজেই নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরা করার অনুমতি চান আদালতের কাছে।
আসামির এমন আবদারের বিষয়ে আদালত জানায়, কেউ আইনজীবী নিয়োগ না করলে সরকারপক্ষ থেকে তাঁর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া আসামি নিজে কাউকে জেরা করা আইনে নেই। কিন্তু আসামি হাবিবুর রহমান তা মানতে আপত্তি করেন। পরে নৌবাহিনীপ্রধানকে আর আসামির পক্ষে জেরা করা সম্ভব হয়নি। আসামিও আর নৌবাহিনীপ্রধানকে জেরার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে নৌপ্রধানকে জেরা শেষ হয়। এরপর তিনি আদালত থেকে বের হন। এ সময় নৌপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, একজন বাহিনীর প্রধান হিসেবে এবং পোশাকে আমি প্রথম এই আদালতে সাক্ষ্য দিলাম। সমঝোতার পক্ষে মত দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই তো আমাদের নিজেদের মধ্যেই। ভাই বা আত্মীয়স্বজন। এজন্যই সমঝোতার পক্ষে মত দেয়া হয়।
গত ৪ জুলাই এ আদালতের বিচারক অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ আকতারুজ্জামান এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল জহিরউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানকে তলব করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত দাবিদাওয়া আদায়ের নামে রাজধানীর পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে ইতিহাসের জঘন্যতম সেই বিডিআর বিদ্রোহের সূচনা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে পিলখানা বিডিআর দরবার হলে বার্ষিক দরবার শুরু হয়। এরই মধ্যে দরবার হলে উপস্থিত জওয়ানরা জাগো বলে হুঙ্কার দিয়ে দরবার হল ত্যাগ করে। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিমকে টেনে হিঁচড়ে বের করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্রাগার লুট করে। বিদ্রোহী সিপাহী মাঈন লুণ্ঠিত অস্ত্র নিয়ে দরবার হলে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করে। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য চৌকস সেনা কর্মকর্তারা মাঈনকে নিরস্ত্র করে ফেলেন। এরপরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শত শত বিদ্রোহী অস্ত্রাগার লুট করে অস্ত্র হাতে দরবার হলে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিতে পুরো দরবার হল ঝাঁঝরা হয়ে যায়। বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর চালাতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন। একে একে বাসা থেকে ধরে এনে হত্যা করতে থাকে সেনা কর্মকর্তাদের। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারিও একইভাবে চলে হত্যাকা-। টানা দু’দিনে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। হত্যার পর সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহ ম্যানহোল দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। অনেকের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। গণকবর দেয়া হয় অনেক সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ। হত্যাযজ্ঞের পর দ্রুত লাশ গুম করতে মৃতদেহগুলো খুবই আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে, ম্যানহোলে, নর্দমায়।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় একটি বিদ্রোহ আইনে এবং আরেকটি ফৌজদারী আইনে মামলা হয়। রাজধানীর লালবাগ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ফৌজদারী আইনে মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এ মামলাটির বিচার চলছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাঠে স্থাপিত ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে।
No comments