রোহিঙ্গাদের ফেরত নিন ॥ মিয়ানমারকে বাংলাদেশে ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দেনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিরজাল জাইনউদ্দিন মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, নৃতাত্ত্বিক ইস্যু তুলে কোন দেশই তাদের অধিবাসীদের অস্বীকার করতে পারে না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে তিনি মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।


শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিট দ্য প্রেস শীর্ষক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জাইনউদ্দিন বলেন, মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া প্রয়োজন। কারণ নৃতাত্ত্বিক কোন ইস্যু তুলে কাউকে বলা যায় না, তারা এ দেশের নাগরিক নয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা এখন শুধু সাধারণ একটি সমস্যা নয়, এটি বর্তমানে একটি মানবাধিকার সমস্যাও।
এদিকে রোহিঙ্গা বিষয়ে তীক্ষè নজর রাখছে আসিয়ান গ্রুপ। যদিও বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোন দেশই রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আসিয়ান অঞ্চলের এক অনলাইন রেডিওর খবরে বলা হয়েছে, আসিয়ানের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পর্যায়ে উত্থাপন করা হয়। গত শুক্রবার কম্বোডিয়ায় এ সংস্থাটির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উয়ানা মাউং এলউইন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ তোলেন। দুই দেশের মন্ত্রী আসিয়ানকে এ সম্পর্কে অবহিত করাসহ এ বিষয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করতে সম্মত হন।
আসিয়ান মহাসচিব বলেন, আসিয়ান গ্রুপ রোহিঙ্গা বিষয়ে চোখ-কান খোলা রাখছে। এ সময় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের বাইরে বাস করছে। বাংলাদেশ বা মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের রাখতে চাইছে না। তৃতীয় কোন দেশও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়।
এদিকে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত আশ্রয় শিবিরে পাঠানোই রোহিঙ্গা সমস্যার ‘একমাত্র সমাধান’ বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। গত বৃহস্পতিবার ইউএনএইচসিআরের প্রধান এ্যান্টনিও গার্টারের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তবে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টি নাকচ করেন গার্টার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন বা দায়িত্ব নেয়া ইউএনএইচসিআরের দায়িত্ব নয়।
রোহিঙ্গারা বিশেষ করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে বাস করছে। তবে মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। বিভিন্ন সময় সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়। এ সময় রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত পাঠায়। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন করে আলোচনায় আসে। মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, থেইন সেইন বলেছেন, ‘নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা আমাদের জনগণ, আমরা তাদের দায়িত্ব নেব। কিন্তু মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। রোহিঙ্গারা নৃতাত্ত্বিকভাবে আমাদের জনগণ নয়।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ সভাপতিত্ব করেন। এ সময় প্রেসক্লাবের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা মিট দ্য প্রেসে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.