গভীর রাতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ রাবিতে, একজনের মৃত্যু-ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, ৮ জন বহিষ্কার ॥ তদন্ত কমিটি by মামুন-অর-রশিদ ও সাইফুর রহমান আকন্দ
নতুন কমিটি ঘোষণার এক মাসের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ছাত্র রাজনীতির বলি হলো ছাত্রলীগ কর্মী। এবার নিজেদের কোন্দলে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছাত্রলীগের কর্মী ও চতুর্থ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল সোহেল। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিপক্ষের গুলি তার কপাল ভেদ করেছিল। এ ঘটনার পর রাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে রাত থেকেই ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ধ্যায় জরুরী সিন্ডিকেট সভা বসে। সভায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
রবিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের সময় গুলিতে কপাল ছিদ্র হয়ে যায় তার। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সোমবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। নিহত সোহেলের বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার সাবদি গ্রামে। সে আব্দুস সালাম সরকারের বড় ছেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই- বাংলা হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাবিতে পদ্মা সেতুর নামে টাকা উঠানো শুরু করে ছাত্রলীগ। এ টাকা উঠানো নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম মাদার বখশ হলে গিয়ে সভাপতি আহমেদ আলীকে উদ্দেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এরই জের ধরে রাত সাড়ে ১১টায় সভাপতি গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পদ্মা সেতুর টাকা তোলা নিয়ে নয়, সভাপতি না সাধারণ সম্পাদক কার শক্তি বেশি এ নিয়ে বিতর্কের ঘটনা সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে রূপ নেয়।
এরই জের ধরে গভীর রাতে উভয়পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হলে পুরো ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় হলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে মাদার বখশ হলের সামনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপুর কর্মীরা সভাপতি আহমেদ আলীকে উদ্দেশ করে কটূক্তি শুরু করে। এ নিয়ে দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে উভয়গ্রুপের কর্মীরা রড, রামদা, হাঁসুয়া ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পরস্পরের মোকাবেলায় অবস্থান নেয়। সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা অবস্থান নেয় মাদার বখ্শ হলের দোতলার ছাদে এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হলের সামনে। এর মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এতে একটি গুলি এসে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী সোহেলের কপালে লাগে। তার মাথা বুলেটবিদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রাতেই গুরুতর অবস্থায় সোহেলকে প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুপুরে সোহেলের মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাস জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। আতঙ্কে অনেকেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
এদিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের পর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও হল কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে বের হলেও তাদের আটক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পুলিশ কয়েক ঘণ্টা পর সভাপতি গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে। এ সময় পুলিশের বেপরোয়া আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। তাদের ঘুম থেকে তুলে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ তল্লাশির সময় শিক্ষার্থীদের রুমের হিটার ও আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। গভীর রাতে পুলিশ হলে তল্লাশি চালালেও কোন কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। এসব ঘটনার পর ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে গভীর রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনাটিকে রাতে তুচ্ছ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা শোনার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়। সভাপতি আহমেদ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। পদ্মা সেতুর টাকা তোলা নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নয়। সভাপতি গ্রুপের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মমিনুল ইসলাম জানান, সোহেলের কপালে গুলি লাগার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া তার শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে ছাত্রলীগ এবং সোহেলের পরিবারের পক্ষে পৃথক মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।
মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে রাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি জানান, দুপুরে সোহেলের মৃত্যুর পর নগরীর বিভিন্ন থানা থেকে আরও পুলিশ সদস্যদের ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসে দৃষ্টি রাখছেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
ছাত্রলীগের ৮ জন বহিষ্কার ॥ এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহিল সোহেল মারা যাওয়ার পর বর্তমান কমিটির ৮ নেতাকর্মীকে দল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু এ তথ্য জানিয়েছেন।
বহিষ্কৃতরা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন, সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, তাজমহল হিরো, প্রচার সম্পাদক লিটন, উপ-দফতর সম্পাদক আতিক, কর্মী তামিম ও সেতু।
সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু জানান, ঘটনার পর যাতে আর কোন অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কর্মীদের গুলিতে নিহত ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহিল সোহেলের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোক প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। রাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম কবীরকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত এ সভা চলে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহান।
রবিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের সময় গুলিতে কপাল ছিদ্র হয়ে যায় তার। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সোমবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। নিহত সোহেলের বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার সাবদি গ্রামে। সে আব্দুস সালাম সরকারের বড় ছেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই- বাংলা হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাবিতে পদ্মা সেতুর নামে টাকা উঠানো শুরু করে ছাত্রলীগ। এ টাকা উঠানো নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম মাদার বখশ হলে গিয়ে সভাপতি আহমেদ আলীকে উদ্দেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এরই জের ধরে রাত সাড়ে ১১টায় সভাপতি গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পদ্মা সেতুর টাকা তোলা নিয়ে নয়, সভাপতি না সাধারণ সম্পাদক কার শক্তি বেশি এ নিয়ে বিতর্কের ঘটনা সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে রূপ নেয়।
এরই জের ধরে গভীর রাতে উভয়পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হলে পুরো ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় হলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে মাদার বখশ হলের সামনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপুর কর্মীরা সভাপতি আহমেদ আলীকে উদ্দেশ করে কটূক্তি শুরু করে। এ নিয়ে দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে উভয়গ্রুপের কর্মীরা রড, রামদা, হাঁসুয়া ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পরস্পরের মোকাবেলায় অবস্থান নেয়। সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা অবস্থান নেয় মাদার বখ্শ হলের দোতলার ছাদে এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হলের সামনে। এর মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এতে একটি গুলি এসে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী সোহেলের কপালে লাগে। তার মাথা বুলেটবিদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রাতেই গুরুতর অবস্থায় সোহেলকে প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুপুরে সোহেলের মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাস জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। আতঙ্কে অনেকেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
এদিকে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের পর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও হল কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে বের হলেও তাদের আটক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পুলিশ কয়েক ঘণ্টা পর সভাপতি গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে। এ সময় পুলিশের বেপরোয়া আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। তাদের ঘুম থেকে তুলে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ তল্লাশির সময় শিক্ষার্থীদের রুমের হিটার ও আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। গভীর রাতে পুলিশ হলে তল্লাশি চালালেও কোন কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। এসব ঘটনার পর ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে গভীর রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনাটিকে রাতে তুচ্ছ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা শোনার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়। সভাপতি আহমেদ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। পদ্মা সেতুর টাকা তোলা নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব নয়। সভাপতি গ্রুপের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মমিনুল ইসলাম জানান, সোহেলের কপালে গুলি লাগার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া তার শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে ছাত্রলীগ এবং সোহেলের পরিবারের পক্ষে পৃথক মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।
মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে রাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি জানান, দুপুরে সোহেলের মৃত্যুর পর নগরীর বিভিন্ন থানা থেকে আরও পুলিশ সদস্যদের ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসে দৃষ্টি রাখছেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
ছাত্রলীগের ৮ জন বহিষ্কার ॥ এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহিল সোহেল মারা যাওয়ার পর বর্তমান কমিটির ৮ নেতাকর্মীকে দল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু এ তথ্য জানিয়েছেন।
বহিষ্কৃতরা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন, সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, তাজমহল হিরো, প্রচার সম্পাদক লিটন, উপ-দফতর সম্পাদক আতিক, কর্মী তামিম ও সেতু।
সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু জানান, ঘটনার পর যাতে আর কোন অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় কর্মীদের গুলিতে নিহত ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহিল সোহেলের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোক প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। রাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম কবীরকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত এ সভা চলে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহান।
No comments