মিসর নিয়ে দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্র!
মিসরের ক্ষমতাকেন্দ্রের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বে মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে, তা ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির নীতিনির্ধারকেরা। গণতন্ত্রের জন্য মিসরের মানুষের পাহাড়সম আকাঙ্ক্ষার চাপ, অন্যদিকে জেনারেল ও ইসলামপন্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক বজায় রাখা—দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য মেলাতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পিটার মানডাভিলে বলেন, ‘মিসর নিয়ে কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য রকমভাবে অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে ওয়াশিংটন প্রশাসন। বর্তমানে দেশটিতে মার্কিন প্রভাব কার্যত নেই বললেই চলে।’ পিটার মানডাভিলে কিছুদিন আগ পর্যন্ত ওই অঞ্চলের জন্য ইসলামি রাজনীতি বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের পরিণতি, ইসলামপন্থীদের উত্থান, ইসরায়েলের মিসরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ—এসব বিষয় কেন্দ্র করে মিসরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন পথে যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় মিসরের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া বা বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন প্রশাসন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফরেও মিসর নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই দ্বিধার প্রতিফলন দেখা গেছে। গত শনিবার দুই দিনের সফরে হিলারি মিসর যান।
মিসরের নতুন প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থী নেতা মোহাম্মদ মুরসি ও সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধান ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাওয়ির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতার লড়াইয়ের বিবদমান এ দুই পক্ষের কারও জন্যই স্পষ্ট কোনো ‘মেসেজ’ (বার্তা) ছিল না হিলারির।
হিলারির পরিকল্পনা ছিল, মিসর সফরে গেলে দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে তিনি জনসমক্ষে ভাষণ দেবেন। এ নিয়ে লিখিত বক্তব্যও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু একূল-ওকূল সব কূল রক্ষা করতে গিয়ে হিলারির বক্তব্যের ভিন্ন তিনটি খসড়া তৈরি করা হয়। শেষ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ঠিক করা সম্ভব হয়নি। পরে হিলারির সফরসূচি থেকে জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি বাতিল করা হয়। মিসরের ঘোলাটে পরিস্থিতিই মার্কিন প্রশাসনকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে ভাবা হচ্ছে।
মিসরের জেনারেলরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক মার্কিন চাপ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু মিসর সফরে গিয়ে হিলারি জেনারেলদের অবাধ্যতা নিয়ে জোরালো কিছু বলেননি। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা প্রসঙ্গে তিনি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কোনো অভিযোগ আনেননি। এর পরিবর্তে তিনি দেশটির পার্লামেন্ট ও সংবিধান বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ‘ঐক্যে’র কথা বলেছেন।
দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, সেনাবাহিনীর সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরোধে আড়াল থেকে ইসলামপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। এ দাবিতে তাঁরা মিসরের মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতারা বলছেন, মিসর বিষয়ে মার্কিন নীতি নিয়ে তাঁরা এখনো গভীর সংশয়ে রয়েছেন। দ্য হিন্দু।
No comments