পহেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব by শাহরিয়ার সালাম

হেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব। অনেকেই হয়তো বলবেন, পহেলা অগ্রহায়ণ কত 'তারিখ'? তারপর ঘরের দেয়ালের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অথবা খবরের কাগজের উপরাংশে খুঁজবেন। প্রথমত, আমাদের নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব তারিখ, সাল তথা আমাদের সংস্কৃতি থেকে আমরা কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি, তার কিছুটা নজির এ থেকে অনুধাবন করা যায়। পাঠক, ক্ষমা করবেন, এই অবক্ষয় কমবেশি আমাদের প্রত্যেকেরই ঘটেছে।


বাংলা একাডেমী অনেক বছর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলা ও খ্রিস্টীয় তারিখটিকে মেলানোর জন্য। সে হিসেবে প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ খ্রিস্টীয় নভেম্বরের ১৫ তারিখ, পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল, আর পহেলা ফাল্গুন হচ্ছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। অবশ্য কিছু পঞ্জিকামতে তা ভিন্নরকম। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অন্তত ৭০ ভাগ চাকা ঘোরে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে। এখনো বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র কৃষিনির্ভর দেশ না হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি দিয়ে ঞযধহশং রোরহম ফধু পালন করে। ফসলের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানোর উৎসব এই ঞযধহশং রোরহম ফধু_যেটি মূলত নবান্ন উৎসবেরই অন্য নাম। তা প্রতিবছর এই নভেম্বর মাসেই উদযাপিত হয়। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি ছুটি দিয়ে বিশেষভাবে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করা হয়। শুধু স্থান-কাল-ভাষা ভেদে উৎসবের ধরন বা নাম ভিন্ন। কৃষিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন।
আমাদের দেশে সরকারি ছুটি তো দূরে থাক, পৃষ্ঠপোষকতা করা থেকেও অনেকটা নিশ্চুপ থাকছেন সবাই। এমনকি বাংলা সন (বঙ্গাব্দ) প্রসারেও সরকারসহ গুণীজনরা অনেকটাই নীরবতা পালন করছেন।
আশার কথা এই যে জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ বিগত ১৩ বছর যাবৎ নিয়মিত এ উৎসব উদ্যাপন করে অন্তত কিছুটা হলেও নবান্ন উৎসবকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নবান্ন উৎসব আবার সাড়ম্বরে উদ্যাপন শুরু হয়েছে। নিঃসন্দেহে জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ এর জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। এই পর্ষদের প্রচেষ্টায় নবান্ন উৎসব সবার মধ্যে আবার উপস্থাপিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ এরই সঙ্গে আরেকটি কাজ করে যাচ্ছে বাংলা তারিখকে জনপ্রিয় করার। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে কিছুটা হলেও কাজ হবে।
অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হয়ে আসছে। এ বছরও এই তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বরাবরের মতো প্রধানত লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রতিনিধিত্বশীল গান, নাচ, বাদ্য, গুণীজনের নবান্নকথন, কবিতা আবৃত্তি ও সেইসঙ্গে নবান্ন শোভাযাত্রা সমন্বয়ে দিনভর বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ। এ বছর উৎসব উদ্বোধন করছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, ছড়াকার ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ। অগ্রহায়ণ মাসের বিভিন্ন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানেই নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হবে সাড়ম্বরে। 'এসো মিলি সবে, নবান্নের উৎসবে' আবাহনের মধ্য দিয়ে নবান্নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক সবার মিলিত অংশগ্রহণে।

লেখক : সংস্কৃতিকর্মী

No comments

Powered by Blogger.