প্রচ্ছদ রচনা-কে ধরিবে গণতন্ত্রের হাল!-সংসদীয় কমিটিতে অবৈধ সদস্য

সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। জনকল্যাণে সরকারের কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, সে বিষয়ে সুপারিশও করে সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া দুর্নীতিসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ কিংবা কারো নৈতিক স্খলন সম্পর্কিত অভিযোগ পেলেও সংসদীয় উপকমিটি গঠন করে তদন্তের অধিকার রাখে। এ কারণে সংসদীয় কমিটিগুলোকে মিনি পার্লামেন্টও বলা হয়।


মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বিভিন্ন বিষয়ে ৪৯টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিরল। কিন্তু রাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে সুশাসনকে শানিত করার জন্য যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ সেই কমিটিই পরিচালিত হচ্ছে নিয়মবহির্ভূত সদস্য দ্বারা। শর্ষের মধ্যেই যে ভূতের আছর তারই বহিঃপ্রকাশ নিয়ে সবিস্তারে লিখেছেন সফেদ সিরাজ

সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সব কমিটি গঠন করা গণতন্ত্রের শুভ সকালের সূচনা বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ এর আগেই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক প্রকট শাসন দেখে জাতি। তাই সে ধরনের শাসকরা যাতে কখনোই আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল। আর এটি করতে গেলে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি। এর মধ্যে একটি হলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গঠন ও তা কার্যকর করা। কিন্তু সেই সংসদীয় কমিটি যখন অবৈধভাবে গঠিত হয়েছে বলে জানা যায়, তখন মনের মধ্যে দানাবাঁধা গণতান্ত্রিক আশাটুকু আবার দপ করে নিভে যায়। এটা ঠিক যে এর আগে কোনো সরকারই সব সংসদীয় কমিটি গঠন করতে পারেনি। মাত্র কয়েকটি কমিটি গঠন করেই ক্ষান্ত হয়েছে তারা। অন্যদিকে তাদের কর্মকাণ্ড ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু মহাজোট সরকারের সময় জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি লঙ্ঘন করে অনেক সংসদ সদস্য কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। তবে এটি না ঘটলে বিষয়টি আসলেই নতুন দিগন্তের সূচনা করত। মহাজোট সরকারের গঠন করা সংসদীয় কমিটিগুলো হলো_সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পিটিশন কমিটি, লাইব্রেরি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, সংসদ কমিটি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী সংসদীয় কমিটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী সংসদীয় কমিটি, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ৪৫টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জন সংসদ সদস্য বিধি লঙ্ঘন করে সংসদীয় কমিটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একজন করে সংসদ সদস্যও রয়েছেন। এসব সংসদ সদস্য সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে প্রভাব খাটাচ্ছেন। অন্যদিকে সরকার নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও এত সংসদীয় কমিটির মাত্র একজন নারী আছেন কমিটির সভাপতি হিসেবে। অন্যরা সবাই পুরুষ।

সংসদীয় কমিটির অবৈধ সদস্য যাঁরা
সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৮৮(২) ধারা অনুযায়ী এমন কোনো সদস্য সংসদীয় কমিটিতে নিযুক্ত হবেন না, যাঁদের ব্যক্তিগত, আর্থিক ও প্রত্যক্ষ স্বার্থ কমিটিতে বিবেচিত হতে পারে এমন বিষয় সংশ্লিষ্ট আছে। কিন্তু তদবিরের মাধ্যমে কোনো কোনো সংসদ সদস্য সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্য হয়েছেন। চতুর্থ অধিবেশনে পাঁচটি সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হলেও বিধি লঙ্ঘন করে গঠিত কমিটিগুলোর পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এর পরও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু দু-একজন সংসদ সদস্য ছাড়া অন্যদের বাদ দেওয়া হয়নি।
কার্যপ্রণালি বিধি অনুসারেই সংসদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭৪ সালের ২২ জুলাই কার্যপ্রণালি বিধি গৃহীত হয় সংসদে। কার্যপ্রণালি বিধি সংবিধানেরই অংশ। সংবিধানের ৭৫(১)ক অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'সংসদ কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা এবং অনুরূপ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা সংসদের কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হইবে।' অন্যদিকে সংবিধানের ৭৬(১)গ-তে বলা হয়েছে, 'সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে নির্দিষ্ট সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে অন্যান্য স্থায়ী কমিটি গঠিত হইবে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিধি লঙ্ঘন করে কমিটিতে থাকা সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আ হ ম মোস্তফা কামাল, নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, শেখ মুজিবুর রহমান, নসরুল হামিদ, এম আবদুল লতিফ, চয়ন ইসলাম, বজলুল হক, টিপু মুনশি, আবদুল ওয়াদুদ, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, তাজুল ইসলাম, গাজী গোলাম দস্তগীর, বিএনপির মোশাররফ হোসেন এবং জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া। এই সংসদ সদস্যরা নিজেদের তথ্য গোপন করে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় সংসদের একজন কর্মকর্তা জানান। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে যদি জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ তাঁদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতেন, তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটত। সংসদীয় কমিটিগুলো হতো আরো স্বচ্ছ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সংসদীয় কমিটি গঠনেই যেখানে বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেখানে তাদের কাজ কতটুকু জনসাধারণের কাছে প্রশংসিত হবে তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যায়। আর এ সংশয় সত্যে পরিণত হয় বিধিবহির্ভূতভাবে কমিটিতে ঠাঁই করে নেওয়া কয়েকজনের কর্মকাণ্ডে।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকি মামলা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন এনবিআরের মামলাগুলো নিয়ে প্রায়ই অসন্তোষ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে লোটাস কামাল বক্তব্য দেন। যেসব আয়করদাতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের সঙ্গে এনবিআরের সমঝোতা প্রস্তাবের সুপারিশ করেছেন তিনি। আয়কর প্রদানের শর্ত শিথিলের সুপারিশও করেন তিনি। জানা গেছে, তিনি নিজেও এনবিআরের কাছে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির এসব সুপারিশের ফলে অস্বস্তিবোধ করছে এনবিআর।
সূত্র মতে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে নির্বাচিত এই এমপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম দি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস। স্বার্থসংশ্লিষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ কমিটির দ্বন্দ্ব এখন চরমে। এমনকি যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও করেছে এই কমিটি। তবে ওই অভিযোগ শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট। নিজের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন সময় এই সংসদীয় কমিটি কাজ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
লঞ্চ পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হারবার সার্ভিস লিমিটেডের মালিক সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বরিশাল-৩ আসন থেকে নির্বাচিত গোলাম কিবরিয়া। তিনি নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির উপদেষ্টা। ফারহান নেভিগেশন নামে তাঁর একটি প্রতিষ্ঠান আছে। গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় এটির উল্লেখ ছিল। তাঁরা দুজনই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে নিজ ব্যবসাসংক্রান্ত একাধিক সুপারিশ করে থাকেন। আর তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখেন বলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়।
ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি মোশাররফ হোসেন বিদেশে শ্রমিক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান বে ইস্টার্নের কর্ণধার হয়েও শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য। রাজবীথি ট্রাভেলস নামে হজ ও ওমরার জন্য বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরবে লোক পাঠানো প্রতিষ্ঠানের মালিক ঝালকাঠি-২ থেকে নির্বাচিত এমপি বজলুল হক। তিনি হয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। এই সংসদ সদস্যরা নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন সময় সংসদীয় কমিটিকে ব্যবহার করে থাকেন।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে নির্বাচিত চয়ন ইসলাম, রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি ও রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত আবদুল ওয়াদুদ_তিনজনই তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিকারক ও বস্ত্রখাত সম্পর্কিত ব্যবসায়ী। এ তিন সংসদ সদস্যই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। অন্যদিকে টিপু মুনশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও সদস্য। আর চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সুকুমার রঞ্জন ঘোষ হলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সদস্য।
এসব সংসদ সদস্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক সুপারিশ করে থাকেন। ফলে সংসদীয় কমিটিগুলো সত্যিকার অর্থে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার বদলে নিজেরাই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র হয় বাধাগ্রস্ত।
এই সংসদ সদস্যদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অবৈধভাবে সংসদীয় কমিটিতে থাকলেও কেউ পদত্যাগ করবেন না। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা এ ধরনের কোনো বিধি-বিধানের কথা জানতেন না। তবে জানার পরও তাঁরা পদত্যাগ করতে রাজি নন।
আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই বৃত্তে যেন দুটি ফুল। এক দল ক্ষমতায় গিয়ে বিগত সরকার কোনো কাজ করেনি বলে সমালোচনা করে। আবার অন্য দলটি বিরোধী দলে গিয়ে শুধু বিরোধিতার কারণেই সরকারের সমালোচনা করে। অথচ দুই দলই কিন্তু ক্ষমতায় থাকার সময় আগের সরকারের করা ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করে। তাই সংসদীয় কমিটিতে বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যদের ঠাঁই দিয়ে মহাজোট সরকার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে এর যে ব্যত্যয় ঘটবে না তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তখন তারা একটি ছুঁতো খুঁজবে যে আওয়ামী লীগ সরকারই তো এমন করে গেছে। বিএনপি একবারও বলবে না, মহাজোট সরকারই সংসদীয় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব সংসদীয় কমিটি গঠন করেছে। আবার যদি আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসে তখন সংসদীয় কমিটিগুলো পুনর্গঠনের সময় একই অনিয়মের পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। কারণ ইতিমধ্যে পরবর্তী সংসদ সদস্যদের কাছে এ বার্তা পেঁৗছে যাবে যে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হলফনামা গোপন করে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে স্থান করে নেওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ধরা পড়লেও বাদ দেওয়া হয় না। তাই বিধিবহির্ভূত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের বর্তমান সরকারকেই বাদ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। প্রায় ৪০ বছর আগে দুর্গম পথে চলা দেশের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক করতে এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ সংসদ সদস্যরাও জবাবদিহিতার ঊধর্ে্ব নন। আইন সবার জন্য সমান_এই আপ্তবাক্যটি শুধু কাগজ-কলমে নয়, বাস্তবেও এর প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ।

কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন মাত্র একজন নারী
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সরকারে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনার প্রস্তাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় আনুপাতিক হারে বিরোধী দলের সদস্যদেরও কমিটির সভাপতি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় এবারও নবম জাতীয় সংসদের শুরুতেই কমিটি গঠন করে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে একটি বাদে সব কমিটির সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে পুরুষদের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সস্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মমতাজ বেগম ছাড়া সব কমিটির সভাপতিই পুরুষ। পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তা শহীদ মেজর মাহমুদুল হাসান স্বপনের মা ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য আলহাজ মমতাজ বেগম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের পর সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে এ কমিটির সভাপতি ছিলেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর এই সংসদীয় কমিটি গঠন করা হলে মমতাজ বেগমকে নির্বাচিত করা হয়। তাই নবম জাতীয় সংসদের চলমান একাদশ অধিবেশন পর্যন্ত পুনর্গঠিত সংসদীয় কমিটির একমাত্র তিনিই কোনো সংসদীয় কমিটির নারী সভাপতি। বেশ দক্ষতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে আর কোনো নারী সংসদ সদস্যকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার পরিকল্পনা নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার আবার ক্ষমতায় এলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

পাশের দেশের চেয়ে ক্ষমতাহীন সংসদীয় কমিটি
সংসদীয় কমিটিগুলো বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তদন্ত করতে এ সময়ে ১১৯টি উপকমিটি গঠন করে। সংসদীয় মূল কমিটি ও উপকমিটি মিলে গত তিন বছরে প্রায় এক হাজার ৫০০টি বৈঠক করেছে। তবে এসব বৈঠকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত, সংসদীয় কমিটিগুলোর ক্ষমতা না থাকায় এসব বৈঠক কার্যকর হচ্ছে না। সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি বিল মন্ত্রিসভায় আটকে যাওয়ায় বিলটি পাস করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সংসদীয় কমিটির ক্ষমতাও বাড়েনি। পাশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সংসদীয় কমিটিগুলো খুবই শক্তিশালী ও কার্যকর। সেখানে দুই ধরনের সংসদীয় কমিটি বিদ্যমান। এর একটি অ্যাডহক কমিটি, অন্যটি স্থায়ী কমিটি। সেখানে অ্যাডহক কমিটি বিশেষ কোনো কারণে গঠিত হয়। নির্দিষ্ট দায়িত্ব শেষ হলে এই কমিটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর। অনেকটা এ দেশের সদ্য বিলুপ্ত সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির মতো। ভারতের সংসদীয় কমিটি এক বছরের জন্য গঠিত হলেও বাংলাদেশে বেশির ভাগ কমিটি পুনর্গঠিত না হয়ে সরকারের শেষ মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এ কারণে এ দেশের সংসদীয় কমিটিগুলো একসময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। ভারতের সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিলগুলো আসার পর কমিটির সদস্যদের সর্বময় ক্ষমতা থাকে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করার। তাঁদের সুপারিশগুলোই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ নিয়ে সংসদীয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই প্রায় মতবিরোধ দেখা দেয়।
উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০১০ উত্থাপন, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১১, জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি (সাক্ষী তলব, দলিলপত্র দাখিল) আইন, ২০১১
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০১০ বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিলটি উত্থাপনের সময় আপত্তি করেছিলেন। তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও এটি উত্থাপন করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়। বিলে উপজেলা পরিষদে নির্বাচিতদের অপসারণ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া উপজেলা পরিষদের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে, রাষ্ট্র পরিপন্থী বা নৈতিক স্খলনের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে, অসদাচরণ, দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে বা উপজেলার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য দায়ী হলে সরকার উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা সদস্যসহ যেকোনো সদস্যকে অপসারণ করতে পারবে। এ ছাড়া বিলের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কার্যাবলি সম্পাদন করবেন। বিলের ২ ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে যাবতীয় দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কোনো ব্যক্তি নিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু এসব ধারার তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাঁদের দাবির মুখে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিলটির ওসব বিতর্কিত ধারা বাতিলের পক্ষে মত দেয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখে গত এক বছরেও বিলটির ধারাগুলো বাতিল করতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। এতেই প্রমাণিত হয় কমিটির ক্ষমতা খুবই সীমিত।
অন্যদিকে বহুল আলোচিত দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১১ দিয়ে সংসদীয় কমিটিগুলোর অসহায়ত্ব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। ওই বিলে বলা হয়েছে অনুমোদন ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো মামলা করতে পারবে না। প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে 'ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এর বিধান আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে।' ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৯৭-এ বলা রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে কোনো মামলা করতে হলে সরকারের পূর্বানুমতি অবশ্যই নিতে হবে। এর আগে দুর্নীতি দমন ব্যুরো কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক যে কারো বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিলটির বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, এ সংশোধনী পাস হলে দুর্নীতি দমন কমিশন আরো দুর্বল হবে। মহাজোট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ সংশোধনীর বিপক্ষে। কিন্তু মহাজোটের আরেক প্রভাবশালী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই সংশোধনীর পক্ষ নিয়েছেন। তাই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এই সংশোধনীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও কিছু করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি আমলারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন হলেও আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। এতে সহজেই অনুমান করা যায়, আমাদের দেশের সংসদীয় কমিটিগুলোর ক্ষমতা এখনো পর্যাপ্ত নয়।
জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি (সাক্ষী তলব, দলিলপত্র দাখিল) আইন, ২০১১ নামে একটি খসড়া বিল তৈরি করেছিল আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় সংবিধানের ৭৬(৩) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ওই আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে। এর আগে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি খসড়াটি নিয়ে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। মূলত সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই খসড়া আইনটি প্রণয়ন করা হয়। সংসদীয় কমিটিতে সাক্ষীদের হাজিরা ও দলিলপত্র দাখিলে বাধ্যবাধকতা রেখে তৈরি আইনের খসড়াটি গত ৩০ মে মন্ত্রিসভায় উঠলে তা নাকচ হয়ে যায়। অন্যদিকে সরকার ও তার আমলাদের কাছে খর্ব হয় সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা।

No comments

Powered by Blogger.