শিক্ষক এমপিও বন্ধ থাকবে অনির্দিষ্টকাল প্রজ্ঞাপন জারি by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

নির্দিষ্টকালের জন্য নতুন শিক্ষক এমপিওভুক্তি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শাখা চালু করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা (এমপিও সুবিধা) পাবেন না। অথচ বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সারা দেশের প্রায় ৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন শাখা চালুর আবেদন করে রেখেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা।


গত ১৩ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত এমপিও নির্দেশিকা-২০১০-এ যা-ই থাকুক না কেন, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ জারির পর থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার বিপরীতে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে। তাঁদের বেতন-ভাতা সরকার বহন করবে না। এর আগে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণী শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজেটে অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় শিক্ষকদের নতুন এমপিও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে এমন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে এখনই নতুন শাখা চালুর দরকার নেই। তবুও বিভিন্ন মহলের তদবিরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাখা চালুর অনুমোদন দিতে হয়। এতে সরকারের বিপুল অর্থ নষ্ট হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণহারে শাখা চালুর প্রবণতা বন্ধ করাও এ পদক্ষেপ গ্রহণের অন্যতম একটি কারণ।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি পর্যায়ের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা চালু করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। পরে যাচাই-বাছাই করে শাখা চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার শিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়োজনীয় শাখা খুলতে পারে। এতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি নতুন শ্রেণী শাখা চালু করলে নতুন পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়। আর তাঁদের এমপিও সুবিধা দিতে হয় সরকার থেকে। শাখা চালুর নামে অনেক অখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এ সুযোগ নেয়। দেখা যায়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় শাখা চালু করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এতে বিনা কারণে সরকারকে অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এমনিতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। তার ওপর বিনা কারণে নতুন শিক্ষক এমপিও দেওয়ার নামে টাকা খরচ। এসব বন্ধ করতেই মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো শাখা খোলার অনুমোদন পেলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও পাবেন না।
শিক্ষক নেতাদের প্রতিবাদ : অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষক এমপিওভুক্তি বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভঁূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার একদিকে শিক্ষার প্রসারের কথা বলছে। অন্যদিকে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষার সংকোচন ঘটাচ্ছ। সরকার এটা করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, 'নতুন শিক্ষকদের এমপিও সুবিধা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও ফি হিসেবে বেশি টাকা আদায় করবে। কারণ বেশি ফি ও বেতন আদায় করতে না পারলে শিক্ষকদের ভাতা দেওয়া যাবে না। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশি টাকা নেওয়াকে সরকারই একভাবে বৈধ করে দিল। আশা করি, এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার ওই প্রজ্ঞাপন থেকে সরে আসবে।'
আওয়ামী লীগপন্থী সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য হলে অবশ্যই তা চাইবেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত শিক্ষকদের এমপিও দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা।

No comments

Powered by Blogger.