বড় হার তবু সন্তুষ্টি by সামীউর রহমান
করাচির আঞ্চলিক দলে খেললেও জাতীয় দলে শেষ পর্যন্ত জায়গা হয়নি রশিদ হাসানের। সেই আক্ষেপটা ঘুচিয়েছেন মেয়ে নিদা রশিদ দার। তাঁর ঘূর্ণি জাদুতেই মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে নাকাল বাংলাদেশ মহিলা দল। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান মহিলা দল ৭৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের মহিলা দলকে। 'ঐতিহাসিক' টুর্নামেন্টের জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মাঠের খেলায় বেরিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মলিন চেহারাটা।
সেই সঙ্গে ঢাকাতেই শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে দেখা করার প্রত্যাশার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সানা মীর।
কার্তিকের শেষ সকালের হিম হিম বাতাসে এখনো ঈদের ছুটির গন্ধ। মহিলা বিশ্বকাপের ম্যাচেও তাই ক্লাব হাউসের একটি অংশ পরিপূর্ণ। গ্যালারিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁদের অনেকের হাতেই পপকর্নের ঠোঙা, সন্তান-পরিজনসহ এসেছেন অনেকটা বনভোজনের মেজাজে। মাঝে মাঝে চড়া সুরে বেজে ওঠা হিন্দি গানও যেন সেই আমেজ এনে দেয়। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির ভেতর এমন 'পিকনিক মুডের' দর্শকদের সামনেই খেলছিলেন সালমা খাতুনরা। কুয়াশামাখা সকালে খানিকটা আলো ছড়িয়েছিলেন তিনিই। পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরে পাকিস্তানের অধিনায়ক সানা মীরকে ফিরিয়ে প্রথম উৎসবের উপলক্ষটা এনে দিয়েছিলেন। বোলার ছিলেন লতা মণ্ডল। দ্বিতীয় উইকেট পতনেও তাঁর প্রত্যক্ষ হাত, বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগানো কানিতা জলিলকে ফিরিয়েছেন লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। সতীর্থ জাহানারা আলমের একমাত্র উইকেটপ্রাপ্তিতেও আছে সালমার অবদান। মিডঅফে নিদা রশিদের ক্যাচটা তালুবন্দি করেছেন সালমাই। কিন্তু দিনশেষে ক্রিকেটটা দলীয় খেলা, আর দলের অন্য সবাই অধিনায়কের পথটা অনুসরণ করতে না পারাতেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৭৩ রানে হার।
অথচ শুরুটা হয়েছিল আশাজাগানিয়া। ২০০৯ সালে, মহিলা বিশ্বকাপের গত আসরে ষষ্ঠ হয়েছিল পাকিস্তান, গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। মহিলা ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের পথচলা ১৯৯৭ সাল থেকে, বাংলাদেশের শুরুটা ঠিক তার ১০ বছর পর। জয়ের আশা তাই অনেকটাই দূর অস্তাচলে। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান সানা, দলীয় সংগ্রহ তখন মাত্র ১১। তৃতীয় উইকেটের পতন দলের ৫৬ রানে, তখনই উঁকি দিচ্ছিল পাকিস্তানকে অল্পতেই বেঁধে ফেলার স্বপ্ন। কিন্তু ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার মহড়ায় সেই স্বপ্ন ধরা দিল না বাস্তবে। জীবন পাওয়া বিসমা মারুফ চতুর্থ উইকেট জুটিতে জাইরা ওয়াদুদকে নিয়ে যোগ করেন ৭৮ রান। এভাবেই সালমাদের হাত থেকে ম্যাচের রাশ ফসকে যাওয়া শুরু। ৩০ রান করে জাইরা ফিরে গেলেও বিসমা রয়ে যান গলার কাঁটা হয়ে। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হওয়ার আগে ম্যাচসেরা বিসমা খেলেছেন ৭৯ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষবেলায় পরপর দুই বলে বিসমা ও মাসুমা জুনাইদকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন খাদিজাতুল কুবরা। কিন্তু ইনিংসের শেষ বলে উইকেট পড়লেও সেটা যোগ হয়নি তাঁর খাতায়, কারণ, সাদিয়া ইউসুফ হয়েছেন রান আউট! তার পরও বাংলাদেশের সফলতম বোলার খাদিজা। ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে তাঁর শিকার ৪ উইকেট। সালমা তাঁর অফস্পিনে নিয়েছেন ২ উইকেট। সকালের শিশির কাজে লাগিয়ে চমৎকার মিডিয়াম পেসে ৬ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন পান্না ঘোষ।
সবশেষ পাঁচটি এক দিনের ম্যাচে বাংলাদেশ মহিলা দলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ১৮৮ রানের। গতকাল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তান তোলে তার চেয়ে একটু বেশি, ১৯৭। অথচ তাতেই যেন জয়ের স্বপ্নটা হয়ে যায় ফিকে। এরপর ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেই স্বপ্ন ক্ষণে ক্ষণে রং হারিয়েছে, ঝাপসা হয়ে এসেছে গ্যালারি থেকে ভেসে আসা উৎসাহের বার্তা। ৭ ওভার ৪ বল আগেই ১২৪ রানে অল আউট বাংলাদেশ দল। জয় তখনো ৭৫ রান দূরে। বাংলাদেশ দলের ৬ ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পেঁৗছালেও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি কেউই। সর্বোচ্চ ১৯ রান আয়েশা আকতারের, তবে স্কোর কার্ডে সবচেয়ে বেশি রান 'মিস্টার এঙ্ট্রা'র। ২৫টি অতিরিক্ত রান দিয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা, যার আফসোসটা বড় ব্যবধানে জয়ের পরেও শোনা গেছে তাঁদের অধিনায়কের কণ্ঠে।
কোচ মমতা মাবেনের চোখে এই দলের সামর্থ্য আছে নিয়মিত দেড় শ রান করার। হয়তো কোনো এক আশীর্বাদধন্য দিনে এই দেড় শ'র কোটা ছাড়িয়ে দুই শ ছুঁই ছুঁই রানও নাকি করতে পারবেন তাঁর দলের মেয়েরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সামর্থ্যের চেয়ে ২০-৩০টা রান কমই করেছে বলে মনে করেন কোচ। ৪টি টেস্ট ও ৪০টি ওয়ানডে খেলা এই কোচ সবই দেখেছেন পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গির চশমা দিয়ে। কিন্তু সাদা চোখে ব্যাডমিন্টনের ভক্ত সালমা, বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করা আয়েশা, ১৫০০ মিটারের দৌড়বিদ চামেলি কিংবা আনসারে চাকরি করা পান্না ঘোষরা ক্রিকেট মাঠে কিছুটা হলেও যে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন, সেই প্রাপ্তিই বা কম কিসে! যে দেশে নারী অধিকার মানে বাসে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত আসন, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাও তো অনেকটা দুঃসাহসিকতার পর্যায়েই পড়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৫০ ওভারে ১৯৭
বিসমা ৭৯, কানিতা ৩৩, জাইরা ৩০, নিদা ১৫, নাঈন ১০; খাদিজা ১০-০-৪১-৪, সালমা ১০-৩-২৬-২, পান্না ৬-০-১৭-১
বাংলাদেশ : ৪২.৪ ওভারে ১২৪
আয়েশা ১৯, লতা ১৪, চামেলি ১৪, ফারজানা ১২, পান্না ১০, রুমানা ১০
ফল : পাকিস্তান ৭৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : বিসমা মারুফ (পাকিস্তান)
কার্তিকের শেষ সকালের হিম হিম বাতাসে এখনো ঈদের ছুটির গন্ধ। মহিলা বিশ্বকাপের ম্যাচেও তাই ক্লাব হাউসের একটি অংশ পরিপূর্ণ। গ্যালারিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁদের অনেকের হাতেই পপকর্নের ঠোঙা, সন্তান-পরিজনসহ এসেছেন অনেকটা বনভোজনের মেজাজে। মাঝে মাঝে চড়া সুরে বেজে ওঠা হিন্দি গানও যেন সেই আমেজ এনে দেয়। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির ভেতর এমন 'পিকনিক মুডের' দর্শকদের সামনেই খেলছিলেন সালমা খাতুনরা। কুয়াশামাখা সকালে খানিকটা আলো ছড়িয়েছিলেন তিনিই। পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরে পাকিস্তানের অধিনায়ক সানা মীরকে ফিরিয়ে প্রথম উৎসবের উপলক্ষটা এনে দিয়েছিলেন। বোলার ছিলেন লতা মণ্ডল। দ্বিতীয় উইকেট পতনেও তাঁর প্রত্যক্ষ হাত, বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগানো কানিতা জলিলকে ফিরিয়েছেন লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। সতীর্থ জাহানারা আলমের একমাত্র উইকেটপ্রাপ্তিতেও আছে সালমার অবদান। মিডঅফে নিদা রশিদের ক্যাচটা তালুবন্দি করেছেন সালমাই। কিন্তু দিনশেষে ক্রিকেটটা দলীয় খেলা, আর দলের অন্য সবাই অধিনায়কের পথটা অনুসরণ করতে না পারাতেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৭৩ রানে হার।
অথচ শুরুটা হয়েছিল আশাজাগানিয়া। ২০০৯ সালে, মহিলা বিশ্বকাপের গত আসরে ষষ্ঠ হয়েছিল পাকিস্তান, গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। মহিলা ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের পথচলা ১৯৯৭ সাল থেকে, বাংলাদেশের শুরুটা ঠিক তার ১০ বছর পর। জয়ের আশা তাই অনেকটাই দূর অস্তাচলে। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান সানা, দলীয় সংগ্রহ তখন মাত্র ১১। তৃতীয় উইকেটের পতন দলের ৫৬ রানে, তখনই উঁকি দিচ্ছিল পাকিস্তানকে অল্পতেই বেঁধে ফেলার স্বপ্ন। কিন্তু ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার মহড়ায় সেই স্বপ্ন ধরা দিল না বাস্তবে। জীবন পাওয়া বিসমা মারুফ চতুর্থ উইকেট জুটিতে জাইরা ওয়াদুদকে নিয়ে যোগ করেন ৭৮ রান। এভাবেই সালমাদের হাত থেকে ম্যাচের রাশ ফসকে যাওয়া শুরু। ৩০ রান করে জাইরা ফিরে গেলেও বিসমা রয়ে যান গলার কাঁটা হয়ে। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হওয়ার আগে ম্যাচসেরা বিসমা খেলেছেন ৭৯ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষবেলায় পরপর দুই বলে বিসমা ও মাসুমা জুনাইদকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন খাদিজাতুল কুবরা। কিন্তু ইনিংসের শেষ বলে উইকেট পড়লেও সেটা যোগ হয়নি তাঁর খাতায়, কারণ, সাদিয়া ইউসুফ হয়েছেন রান আউট! তার পরও বাংলাদেশের সফলতম বোলার খাদিজা। ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে তাঁর শিকার ৪ উইকেট। সালমা তাঁর অফস্পিনে নিয়েছেন ২ উইকেট। সকালের শিশির কাজে লাগিয়ে চমৎকার মিডিয়াম পেসে ৬ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন পান্না ঘোষ।
সবশেষ পাঁচটি এক দিনের ম্যাচে বাংলাদেশ মহিলা দলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ১৮৮ রানের। গতকাল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তান তোলে তার চেয়ে একটু বেশি, ১৯৭। অথচ তাতেই যেন জয়ের স্বপ্নটা হয়ে যায় ফিকে। এরপর ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেই স্বপ্ন ক্ষণে ক্ষণে রং হারিয়েছে, ঝাপসা হয়ে এসেছে গ্যালারি থেকে ভেসে আসা উৎসাহের বার্তা। ৭ ওভার ৪ বল আগেই ১২৪ রানে অল আউট বাংলাদেশ দল। জয় তখনো ৭৫ রান দূরে। বাংলাদেশ দলের ৬ ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পেঁৗছালেও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি কেউই। সর্বোচ্চ ১৯ রান আয়েশা আকতারের, তবে স্কোর কার্ডে সবচেয়ে বেশি রান 'মিস্টার এঙ্ট্রা'র। ২৫টি অতিরিক্ত রান দিয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা, যার আফসোসটা বড় ব্যবধানে জয়ের পরেও শোনা গেছে তাঁদের অধিনায়কের কণ্ঠে।
কোচ মমতা মাবেনের চোখে এই দলের সামর্থ্য আছে নিয়মিত দেড় শ রান করার। হয়তো কোনো এক আশীর্বাদধন্য দিনে এই দেড় শ'র কোটা ছাড়িয়ে দুই শ ছুঁই ছুঁই রানও নাকি করতে পারবেন তাঁর দলের মেয়েরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সামর্থ্যের চেয়ে ২০-৩০টা রান কমই করেছে বলে মনে করেন কোচ। ৪টি টেস্ট ও ৪০টি ওয়ানডে খেলা এই কোচ সবই দেখেছেন পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গির চশমা দিয়ে। কিন্তু সাদা চোখে ব্যাডমিন্টনের ভক্ত সালমা, বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করা আয়েশা, ১৫০০ মিটারের দৌড়বিদ চামেলি কিংবা আনসারে চাকরি করা পান্না ঘোষরা ক্রিকেট মাঠে কিছুটা হলেও যে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন, সেই প্রাপ্তিই বা কম কিসে! যে দেশে নারী অধিকার মানে বাসে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত আসন, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাও তো অনেকটা দুঃসাহসিকতার পর্যায়েই পড়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৫০ ওভারে ১৯৭
বিসমা ৭৯, কানিতা ৩৩, জাইরা ৩০, নিদা ১৫, নাঈন ১০; খাদিজা ১০-০-৪১-৪, সালমা ১০-৩-২৬-২, পান্না ৬-০-১৭-১
বাংলাদেশ : ৪২.৪ ওভারে ১২৪
আয়েশা ১৯, লতা ১৪, চামেলি ১৪, ফারজানা ১২, পান্না ১০, রুমানা ১০
ফল : পাকিস্তান ৭৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : বিসমা মারুফ (পাকিস্তান)
No comments