বিশেষ শ্রেণীর লুণ্ঠন ব্যবস্থাই এই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি!

ইএমএফের শর্ত পূরণ করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সরকার সাময়িক সুবিধা ভোগ করবে ঠিকই, কিন্তু দেশের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের পর্যায়ক্রমিক হারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এরই মধ্যে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাদের কী হবে? তাদের দিকে কে তাকাবে? জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারি নীতি কি শুভ ফল বয়ে আনবে?আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।


তারা নির্বাচনের আগে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে অবস্থা বিরাজমান, তা নীরব ব্যাপক দুর্নীতির ফলেই সৃষ্ট। মাত্র সাত মাসের মধ্যে তিন-তিনবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হলো। আর ফার্নেস অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি করা হলো চারবার! জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে দেখা দেবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। জ্বালানি এমন একটি জিনিস, যার মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে দ্রুত মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রের অর্থনীতি, উৎপাদন ব্যবস্থা, কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার জন্য অনুঘটকের কাজ করে। তাহলে জ্বালানিতে দফায়-দফায় কেন এই মূল্যবৃদ্ধি?
সরকার কারণ হিসেবে যা দেখাতে চাচ্ছে তা খুব বেশি যৌক্তিকতার পর্যায়ে পড়ে না। বিশ্ববাজারে যখন তেলের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে সরকার তখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে এর মূল্যবৃদ্ধি করছে। এমনিতেই কৃষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের আরো অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর সব ধরনের যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের আয় মোটেও বাড়েনি। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় মজুদ রাখা তেল বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
আইএমএফের শর্ত পূরণ করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সরকার সাময়িক সুবিধা ভোগ করবে ঠিকই, কিন্তু দেশের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের পর্যায়ক্রমিক হারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এরই মধ্যে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাদের কী হবে? তাদের দিকে কে তাকাবে? জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারি নীতি কি শুভ ফল বয়ে আনবে?
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। তারা নির্বাচনের আগে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে অবস্থা বিরাজমান, তা নীরব ব্যাপক দুর্নীতির ফলেই সৃষ্ট।
সরকার যে হারে দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে উঠছে, জনগণকে দারিদ্র্যের প্রান্তসীমায় পেঁৗছে দিচ্ছে, ক্ষমতার পালাবদলের কুক্ষিগত সংস্কৃতিতে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে জনগণের আস্থাহীনতার স্তরে গিয়ে ঠেকছে, তাতে দিশেহারা জনগণের বিরাট বিস্ফোরণ যেন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা দেবে গভীর সংকট!
এ অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় রাজস্ব ব্যয় ও দুর্নীতির লাগাম টেনে এর রোধ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নীতি বাস্তবায়ন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই! যদিও অনেক কালক্ষেপণ হয়ে গেছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের জন্য অবশ্যই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্পায়ন সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের সফল কর্মসূচিই পারে রাষ্ট্রের আসন্ন সংকট মোচন করতে। নতুবা বিশেষ শ্রেণীর লুণ্ঠন ব্যবস্থা_জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধির ফল জনগণ কড়ায়-গণ্ডায় পুষিয়ে দেবে ইতিহাসের বাঁক বদলে!

No comments

Powered by Blogger.