বেঁচে থাকাই কষ্টের by গৌরব জি পাথাং
নটর ডেম কলেজে পড়ার সময় ড. সফিউদ্দিন আহমদের কাছ থেকে একটি গল্প শুনেছিলাম। গল্পটি এমন_ 'এক মেয়ে বনের মধ্যে বনের রাজা টারজানের মতো লালিত-পালিত হয়েছিল। জীবজন্তু, পশুপাখি সবই তার কথা শুনত। কারণ বনের পশুদের সঙ্গে তার খুব গভীর সম্পর্ক ছিল। কোনো পশুই তার কোনো ক্ষতি করত না। একদিন সেই মেয়েটির ইচ্ছা হলো মানুষের মাঝে থাকার। তাই সে বন ছেড়ে গ্রামে প্রবেশ করল।
আর যেদিন সে গ্রামে প্রবেশ করল সেদিনই মানুষের দ্বারা তার সম্ভ্রম হারাল। যেখানে বনের পশুরা মানুষের কোনো ক্ষতি করল না, সেখানে মানুষই মানুষের ক্ষতি করল।' এ গল্পের নায়িকা এখন আমাদের সমাজের সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। এমনি এক সত্যিকারের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৮ সালের ২ আগস্ট। গ্রাম ছেড়ে আসা নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর গ্রামের সাধারণ এক মেয়েকে সাতজন নরপশু ধর্ষণ করেছিল। এই মেয়েটি জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিল। আর প্রথম এসেই নরপশু দ্বারা ধর্ষিত হলো। সে স্বপ্ন দেখত চাকরি করবে এবং অর্থ উপার্জন করে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরবে শক্ত হাতে। ভাইবোনদের লেখাপড়া শেখাবে এবং আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলবে। কিন্তু হায়! জীবিকার সন্ধানে এসে প্রথমেই তার সম্ভ্রম হারাল।
বর্তমানে এ রকম অনেক মেয়েই জীবিকার সন্ধানে শহরে এসে তার সম্ভ্রম হারাচ্ছে। খবরের কাগজে প্রতিদিনই দেখি এ রকম নানা নির্যাতন, অত্যাচার ও ধর্ষণের খবর। জীবিকার সন্ধানে আসা সাধারণ মেয়েদের আশ্রয় হয় গার্মেন্ট, বিউটি পার্লার কিংবা বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে। এসব জায়গায় নির্যাতন, অত্যাচার ও শ্লীলতাহানি হয় বেশি। গাড়িতে চলতে গিয়েও নানা রকম অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের। গাড়িতে বসার জায়গা পায় না, দাঁড়ানোর মতো সুবিধাও পায় না। রাস্তায় নামলেই কেউ কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়। আর বাসায় যারা কাজ করে তাদের তো পরিশ্রমের শেষ নেই। খুব সকাল থেকেই কাজ শুরু করে; শেষ করে গভীর রাতে। তারা সবার পরে ঘুমাতে যায় কিন্তু সবার আগেই ঘুম থেকে ওঠে। তাদের কাজের পরিমাণ বেশি কিন্তু বেতন খুবই কম। একটু ভুল হলেই অত্যাচার ও নির্যাতনের খৰ তাদের ওপর নেমে আসে।
গারো সমাজের অনেক ছেলেমেয়েই এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। তাদের দুই চোখে স্বপ্ন টাকা উপার্জন করার। শহরের চোখজুড়ানো আলো তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তারা জানে না আলোর নিচে কত অন্ধকার। অনেকেই পরীক্ষায় পাস করতে পারে না বলে শহরে আসে। কেউ কেউ অভাবের কারণে, কেউ সংসারের প্রয়োজনে ও পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য আসে। সন্তানকে ছেড়ে দিয়ে পিতামাতাও নিশ্চিন্তে থাকে। একবারও ভাবে না_ তার ছেলেমেয়ে কী করে, কেমন আছে। টাকা পেয়ে অনেকেই খুশি হয়; কিন্তু জানে না ফুলের মধু আহরণ করতে গিয়ে কত আঘাত পেতে হয়। মেয়েরা পিপীলিকার মতো উজ্জ্বল আলোয় দিশেহারা হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। কেউ এ খবর রাখে না। একজন গারো মেয়ে হারিয়ে গেলে গারো সমাজ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়_ তারা কি সে খবর জানে? একজন গারো মেয়ে হারিয়ে যাওয়া মানে তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া; ভাষা, ঐতিহ্য, নতুন প্রজন্ম, বংশপরিচয় হারিয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাটা সত্যিই বড় কষ্টের। হায়রে জীবিকা! হায়রে অভাব-অনটন! তুমি শুধু জীবন নিয়ে খেলাই করছ না; একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিচ্ছ।
বনশ্রী প্রকল্প, রামপুরা, ঢাকা
বর্তমানে এ রকম অনেক মেয়েই জীবিকার সন্ধানে শহরে এসে তার সম্ভ্রম হারাচ্ছে। খবরের কাগজে প্রতিদিনই দেখি এ রকম নানা নির্যাতন, অত্যাচার ও ধর্ষণের খবর। জীবিকার সন্ধানে আসা সাধারণ মেয়েদের আশ্রয় হয় গার্মেন্ট, বিউটি পার্লার কিংবা বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে। এসব জায়গায় নির্যাতন, অত্যাচার ও শ্লীলতাহানি হয় বেশি। গাড়িতে চলতে গিয়েও নানা রকম অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের। গাড়িতে বসার জায়গা পায় না, দাঁড়ানোর মতো সুবিধাও পায় না। রাস্তায় নামলেই কেউ কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয়। আর বাসায় যারা কাজ করে তাদের তো পরিশ্রমের শেষ নেই। খুব সকাল থেকেই কাজ শুরু করে; শেষ করে গভীর রাতে। তারা সবার পরে ঘুমাতে যায় কিন্তু সবার আগেই ঘুম থেকে ওঠে। তাদের কাজের পরিমাণ বেশি কিন্তু বেতন খুবই কম। একটু ভুল হলেই অত্যাচার ও নির্যাতনের খৰ তাদের ওপর নেমে আসে।
গারো সমাজের অনেক ছেলেমেয়েই এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। তাদের দুই চোখে স্বপ্ন টাকা উপার্জন করার। শহরের চোখজুড়ানো আলো তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তারা জানে না আলোর নিচে কত অন্ধকার। অনেকেই পরীক্ষায় পাস করতে পারে না বলে শহরে আসে। কেউ কেউ অভাবের কারণে, কেউ সংসারের প্রয়োজনে ও পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য আসে। সন্তানকে ছেড়ে দিয়ে পিতামাতাও নিশ্চিন্তে থাকে। একবারও ভাবে না_ তার ছেলেমেয়ে কী করে, কেমন আছে। টাকা পেয়ে অনেকেই খুশি হয়; কিন্তু জানে না ফুলের মধু আহরণ করতে গিয়ে কত আঘাত পেতে হয়। মেয়েরা পিপীলিকার মতো উজ্জ্বল আলোয় দিশেহারা হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। কেউ এ খবর রাখে না। একজন গারো মেয়ে হারিয়ে গেলে গারো সমাজ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়_ তারা কি সে খবর জানে? একজন গারো মেয়ে হারিয়ে যাওয়া মানে তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া; ভাষা, ঐতিহ্য, নতুন প্রজন্ম, বংশপরিচয় হারিয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাটা সত্যিই বড় কষ্টের। হায়রে জীবিকা! হায়রে অভাব-অনটন! তুমি শুধু জীবন নিয়ে খেলাই করছ না; একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিচ্ছ।
বনশ্রী প্রকল্প, রামপুরা, ঢাকা
No comments