শীতের পুষ্টিকর সবজি
ঋতুবৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে গ্রীষ্মের পরই আসে শীত। এ সময় প্রকৃতি সাজে নতুন করে। ভূমিতে ফলতে থাকে নতুন নতুন সবজি। শীতের শিশিরসিক্ত টাটকা সবজি যেমন মজাদার, তেমনি পুষ্টিকরও। শীতে বাজারে গেলে নানা ধরনের সবজির সঙ্গে দেখা যায় আমাদের অতি পরিচিত আমিষ জাতীয় সবজি কপি। তবে বাংলাদেশে নানা প্রজাতির কপির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বেশি জনপ্রিয়।
মজার ব্যাপার হলো, কপি পালং, লেটুস শ্রেণীভুক্ত হলেও এটি মোটেও শাক নয়। কপি সরিষা পরিবারের ব্রাসিকা প্রজাতির সবজি।
আমাদের দেশে যে ধরনের ফুলকপি জন্মে, তার আদিভূমি ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা। তবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ বছর আগে বাঁধাকপি ইউরোপে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়_ গ্রিস, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সসহ বেশ কিছু দেশে এর প্রধান প্রধান জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বেশি পরিচিত এবং চাষ হচ্ছে অধিক পরিমাণে।
আমাদের দেশে মূলত কপি শীত মৌসুমে পাওয়া যায়। কারণ শীতল ও আর্দ্র জলবায়ুতেই সাধারণত কপি চাষ হয়। ফুলকপি দ্বিবর্ষজীবী গাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এর অনেক বর্ষজীবী জাতও আছে। দ্বিবর্ষজীবী জাতগুলো শীতপ্রধান অঞ্চলে জন্মে। আমাদের দেশে ইদানীং ফুলকপির সংকর জাত বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতের মধ্যে রয়েছে কার্তিকা, অগ্রহায়ণী, পোষাণী, মেইন ক্রপ, ট্রপিক্যাল গ্রো-৫৫, হোয়াইট ব্যারন, আর্লিপাটনা, স্নোবল ওয়াই, সুপ্রিমাক্স, মাঘী বেনারসি, মাউন্টেন, এলাগন, রাক্ষসী, পুশা দীপনী প্রভৃতি। আমাদের দেশে অসংখ্য জাতের বাঁধাকপিরও চাষ হচ্ছে। তাইওয়ানের ইয়োসিন গোত্রীয় বাঁধাকপি থেকে বাংলাদেশে প্রভাতি নামে একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জাতের মধ্যে আছে জার্সিওয়েক ফিল্ড, চার্লসটন, কোপেনহেগেন, গ্গ্নোরি, গোাল্ডেন ক্রস, স্টোনহেড, ডেনিস বলহেড, ব্রান্স উইক, ড্রামহেড, ভালগা, আলফা, হায়ভেটার ইত্যাদি।
কপি অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপাদেয় একটি সবজি। এটি পুষ্টিগুণেও অনন্য। ফুলকপিতে আমিষ, শর্করা, পটাশ ও ভিটামিন-বি যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। ভাজি-তরকারি হিসেবে ফুলকপি খাওয়া হয় এবং মুখরোচক শিঙ্গাড়া, পুরি, ফুলরিতে ব্যবহৃত হয়। বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন-ও এবং সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবণ। আমাদের দেশে সাধারণত ভাজি হিসেবেই বাঁধাকপি বেশি ব্যবহৃত হয়। ইদানীং অবশ্য তরকারি ও সালাদ হিসাবেও খাওয়া হচ্ছে। অনেকে কপি কাঁচা খেয়ে থাকেন। আমাদের দেশে কাঁচা কপি খাওয়া অল্প হলেও বিদেশে কিন্তু কাঁচা কপি খাদকের সংখ্যাই বেশি।
পুষ্টিগুণে ফুলকপির ক্ষেত্রে আধা কাপ রান্না করা ফুলকপির [৬০ গ্রাম ওজন] পুষ্টিগুণ যথাক্রমে প্রোটিন ১.৫ গ্রাম, ০.১ গ্রাম ফ্যাট, ৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট. ১৫ ক্যালরি এনার্জি, খনিজ পদার্থ ২৩ মিলিগ্রাম, ০.৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ১১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
আবার বাঁধাকপির ক্ষেত্রে আধা কাপ কুঁচানো বাঁধাকপির [৫০ গ্রাম ওজন] পুষ্টিগুণ ০.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.১ গ্রাম ফ্যাট, ২.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১২ ক্যালরি এনার্জি। ভিটামিনের মধ্যে থায়ামিন ৩০ মাইক্রোগ্রাম, রাইব্রোফ্লিভিন ২৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩৯ মিলিগ্রাম । আর খনিজ পদার্থের মধ্যে ২৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ১৬মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম এবং ২৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
পুষ্টিগুণে অনন্য এ সবজিটি ইতিমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দামেও তুলনামূলকভাবে সস্তা। কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়ার জন্য সহজেই কিন্তু এ সবজিটি সংগ্রহ করা যায়।
হাসান মাহমুদ রিপন
No comments