ইরানের বিরুদ্ধে এক হতে পারছে না পশ্চিমারা-হামলায় নারাজ জার্মানি পক্ষে ব্রিটেন

রানের 'সন্দেহজনক' পরমাণু কার্যক্রম ঠেকানোর পথ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কাকে নাকচ করে দিয়েছে জার্মানি। তবে এর বিপরীত অবস্থান নিয়েছে ব্রিটেন। তারা সংকট নিরসনে ইরানে সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিকে বাতিল করে দিতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থানও অভিন্ন। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে অটল রয়েছে রাশিয়া ও চীন।


জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেল গতকাল সোমবার বলেছেন, ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করবে না জার্মানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পেঁৗছানোর পর গতকাল ভেস্টারভেল বলেন, 'সামরিক হস্তক্ষেপ করার আলোচনায় আমরা অংশ নেব না। আমরা মনে করি, এ ধরনের আলোচনা পাল্টা হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি।'
তবে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে আপত্তি নেই ব্রিটেনের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ সামরিক হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, 'এখনই আমরা কিছু ভাবছি না। আমরা সামরিক হামলার আহ্বান জানাচ্ছি না বা এর পক্ষে সমর্থন জোগানোরও চেষ্টা করছি না। একই সঙ্গে আমরা চাই, ভবিষ্যতের জন্য সব বিকল্পই আমাদের সামনে থাকা প্রয়োজন।' ইইউ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল এ কথা বলেন তিনি। হেগ বলেন, 'আমরা সামনের মাসগুলোতে ইরানের ওপর শান্তিপূর্ণ উপায়ে চাপ বাড়াব। দুই ভাবে আমরা আগ্রসর হব; আমরা তাদের (ইরান) সঙ্গে আলোচনা করব এবং একই সঙ্গে কঠোর অবরোধ আরোপের মধ্য দিয়ে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করব।'
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁলা জুপে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
২৭ সদস্যের ইইউ বৈঠকে ইরানের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। কূটনীতিকরা জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আবারও অবরোধ আরোপের ব্যাপারে বেঁকে বসেছে রাশিয়া ও চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোওয়াইয়ের হনলুলুতে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (অ্যাপেক) সম্মেলনের ফাঁকে এ ব্যাপারে রাশিয়া ও চীনকে রাজি করানোর চেষ্টা চালায় ওবামা প্রশাসন। তবে সফল হয়নি। সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, 'এ ব্যাপারে আর কী করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহ তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।' তিনি এই বৈঠকের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনতাওয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা দাবি করেছে, কারো সঙ্গে ঐকমত্যে পেঁৗছাতে পারেননি ওবামা।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হয়নি। তাঁর দপ্তর থেকে জানানো হয়, মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, 'ইরান পরমাণু বোমা তৈরির পথে ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি এগিয়েছে। একেবারে প্রমাণিত তথ্যগুলোই আইএইএর প্রতিবেদনে এসেছে। তবে বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি এর চেয়েও বেশি কিছু ঘটছে।' তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি দেননি। আইএইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু অস্ত্রের উপকরণ তৈরি করছে ইরান।
ইরানে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে দুই কুয়েতি আটক : ইরানে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে কুয়েতের দুই নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স গতকাল এ তথ্য জানায়। ফার্স জানায়, তাদের কাছ থেকে গোয়েন্দাগিরির নানা সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। সূত্র : এএফপি, গালফ নিউজ, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.