মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই-ছেলেদের মতোই ভুল করল মেয়েরা

বাড়ি থেকে হাতে লিখে নিয়ে আসা 'বাংলার নারী জেগে ওঠো...' মোটা কাগজের বোর্ডটা তখনও ড্রেসিংরুমের পাশে জ্বলজ্বল করছিল_ দূরের স্কোর বোর্ড যতই চোখ পাকিয়ে বলুক বাংলাদেশ হেরেছে ৭৩ রানে। পাকিস্তানিদের ১৯৮ রান তাড়া করতে নেমে ১২৪ রানে গুটিয়ে গেছে ঘরের মেয়েরা। কাগজের ওই বোর্ড মালিকের মুখে তখনও বাংলার নারীর জয়গান।


'আজ পারেনি,একদিন ঠিকই পারবে আমাদের মেয়েরা।' সমর্থক ওই ভদ্রমহিলার কথা শুনতে পাননি সালমারা। তবে সকালে যখন সাকিব আল হাসান বোনদের খেলা দেখতে এসেছিলেন, তখন ভাইয়ের কথাটিও মন ভরে শুনেছিলেন সবাই। 'হারার আগে হেরো না...। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে
যেও...।' সাকিবের কথামতো চেষ্টাও করেছিলেন সবাই; কিন্তু পারেননি। শারীরিক গঠন আর অনভিজ্ঞতার কাছে হেরে যান বাংলাদেশি মেয়েরা। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সে কথাই জানিয়ে যান দলের কোচ মমতা মাবেন। 'আমি আগেও বলেছি, আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখনও আমরা শিক্ষানবিস। প্রতিদিনই শিখছি। আজই যেমন ফার্সদ্ব ইয়ার থেকে মেয়েরা ফোর্থ ইয়ারে উত্তীর্ণ হয়েছে। হারার কোনো অজুহাত আমি দেব না। তবে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান বিসমাহ মারুফের কয়েকটি ক্যাচ না ফেললে ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। ওদের যদি আমরা ১৬০ রানের মধ্যে আটকে দিতে পারতাম, তাহলে জয়ের একটা সম্ভাবনা থাকত। তবে আমরা পারিনি আমাদের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে টিকে থাকতে না পারায়।'
ম্যাচ শেষে মমতা মাবেনের এ আক্ষেপ খুব চেনা চেনা মনে হয়েছিল, কারণ হারার পর মুশফিকদের কোচ স্টুয়ার্ট লও এমনভাবেই আফসোস করে থাকেন। এদিন এ একটি জায়গায় বেশ মিল ছিল মুশফিকদের সঙ্গে সালমাদের। মিডল অর্ডারে কোনো বড় জুটি গড়তে পারেননি সালমারা ধৈর্যের অভাবের কারণেই। ১ উইকেটে ৫০ রান তোলার পর, পরের ৫ উইকেট পড়ে যায় ৩৬ রানে। যার বেশির ভাগই বল হাওয়ায় তুলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। গ্রুপের প্রথম ম্যাচটি হেরে গিয়েই পয়েন্ট তালিকায় তিন নম্বরে নেমে এসেছে বাংলাদেশ। তবে সবার নিচে আছে আয়ারল্যান্ড। গতকাল বিকেএসপির মাঠে আইরিশদের নিয়ে রীতিমতো ক্রিকেট ব্যাকরণের ক্লাস নিয়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপের মেয়েরা। দুই ওপেনারের সেঞ্চুরি দিয়ে ৪ উইকেটে ২৭৬ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাড়া করতে নেমে ৬৩ রানে অল আউট আইরিশরা। প্রথম ম্যাচটি হেরে এখন এ আয়ারল্যান্ডকেই পাখির চোখ ধরেছে বাংলাদেশ। 'সত্যি কথা বলতে কী, পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জয়ের আশাটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের। পাকিস্তানের সঙ্গে সেটা আমরা পারিনি। এখন আয়ারল্যান্ডকে হারাতেই হবে আমাদের। যদি টুর্নামেন্টের ছয় নম্বরে থাকতে হয় তাহলে আইরিশদের হারানোর কোনো বিকল্প নেই। জাপান দলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আয়ারল্যান্ড ম্যাচটাই আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কাল (আজ) জাপানের সঙ্গে আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই।' বাংলাদেশি কোচ মমতা মাবেনের কথাতেই পরিষ্কার, পাকিস্তানের সঙ্গে হারটা সালমাদের জন্য মোটেই হোঁচট ছিল না। কেননা শক্তি এবং শারীরিক গঠনে পাকিস্তানিদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলার মেয়েরা। আর সে কারণেই এদিন সোজা ব্যাট চালিয়েও বল সীমানার কাছে নিতে পারেননি ফারজানারা। বাধ্য হয়েই তাই রান নিতে হয়েছে বল উঁচুতে তুলে। এবং ব্যাট চালাতে হয়েছে আড়াআড়ি করে। যে কারণে সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন দলের অন্যতম ব্যাটসম্যান সালমা খাতুন। দু'দলের ফিল্ডিংয়েও শারীরিক উচ্চতার ফায়দা তুলেছেন পাকিস্তানের মেয়েরা। এদিন ৭৯ রান করা বিসমাহ মারুফের অন্তত তিনটি ক্যাচ তালুতে ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। সেখানে পান্নার ক্যাচটি প্রায় মাটি থেকে তুলে নিয়েছেন আবিদি। দু'দলের শক্তির পার্থক্য স্বীকার করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সানা মীর নিজেও। 'এশিয়ান গেমসের ফাইনালে যে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে খেলেছিলাম, তার চেয়ে আজকের এ দলটি বেশ ভালো। তবে তাদের প্রধান ব্যাটসম্যান সালমা ১ রানে ফিরে যাওয়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।' শুধু সালমার ব্যাটে রান না আসার কারণেই নয়, দিনের শুরুতে ৫৬ রানে ৩ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর চতুর্থ উইকেট জুটিতে পাকিস্তানি মেয়েরা ৭৮ রান করেন, বাংলাদেশ কোচ মমতা মাবেন মনে করেন ওখানেই পিছিয়ে যায় ঘরের মেয়েরা।
আসরের প্রথম দিন মিরপুরে সালমারা খুশির খবর দিতে না পারলেও ফতুল্লা থেকে দারুণ একটি ম্যাচের খবর এসেছে। যেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শ্রীলংকাকে ৬ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা। নিজেরা ১১৪ রানে অল আউট হওয়ার পর লংকানদের পরে ১০৮ রানে গুটিয়ে দেয় ম্যান্ডেলার দেশের মেয়েরা। আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিনও চারটি ম্যাচ রয়েছে। বিকেএসপিতে সালমারা মুখোমুখি হবেন জাপানের। পাশের মাঠেই আমেরিকার মেয়েরা লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ফতুল্লায় পাকিস্তানিদের সঙ্গে খেলবে আইরিশরা। আর মিরপুরে শ্রীলংকানদের সঙ্গে টক্কর দিতে নামবে ডাচ মেয়েরা। মিরপুরের এ ম্যাচটিই স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলায় সম্প্রচার করার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.