শুল্ক বাবদ সরকার প্রায় ৭,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে, জ্বালানি তেল আমদানির ব্যয় তিন গুণ হচ্ছে by মামুন আবদুল্লাহ
তিন বছরের ব্যবধানে দেশে জ্বালানি তেল আমদানির ব্যয় বেড়ে তিন গুণ হতে চলেছে। দেশে নতুন স্থাপিত সরকারি-বেসরকারি ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানিব্যয় বৃদ্ধি পায় বলে জানা গেছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, এই ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অর্থসংস্থানে হিমশিম খাচ্ছে তেল আমদানি ও বিপণনে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা বিপিসি। দেশের কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তেল আমদানির ঋণপত্র সহজে খুলতে রাজি হচ্ছে না।
কেননা, দেশের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সোনালী, জনতা ও অগ্রণী) কাছে বিপিসির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তার পরও ব্যাংকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনার কারণে বিপিসিকে তেল আমদানির অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা বেশিদিন সম্ভব নাও হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বিপিসির পরিচালক (অর্থ) সারফউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টেনেটুনে কোনোমতে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছি। জানি না, এটা কত দিন সম্ভব হয়। অনাদায়ী টাকার কারণে এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও আর সহজে আমদানি ঋণপত্র খুলতে চাইছে না।’
আমদানিব্যয় বাড়ছে: বিপিসি সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অশোধিত তেলের (ক্রুড অয়েল) পরিমাণ ১১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বাকি তেল পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়। ওই বছর তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।
পরের বছর (২০১০-১১ অর্থবছরে) বিপিসি ২৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করে প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন শোধিত-অশোধিত জ্বালানি তেল।
বিপিসির হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর, ২০১১) তেল আমদানি হচ্ছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। এ জন্য ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
অর্থবছরের পরবর্তী ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ২০১২) জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি তেল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই বাড়তি তেল আমদানির পরিমাণ ঠিক করা হয়। বর্তমান বাজারদর হিসাব করে ওই ছয় মাসের চাহিদামতো তেল আমদানির জন্য বিপিসিকে খরচ করতে হবে ২১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।
তিন জ্বালানি তেলে লোকসান: সরকার সর্বশেষ ১০ নভেম্বর পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে বাড়ানোর পরও বিপিসি সর্বাধিক ব্যবহূত জ্বালানি ডিজেল বিক্রি করে প্রতি লিটারে লোকসান দিচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ টাকা। চলতি অর্থবছরে বিপিসি ৩৮ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এই পরিমাণ ডিজেল বিক্রির জন্য বিপিসির লোকসান প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
একইভাবে বিপিসি প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লোকসান দিচ্ছে ছয় টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিপিসিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য অন্তত ১৭ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে হবে, যা বিক্রি করে বিপিসির লোকসান হবে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা।
দেশে কেরোসিনের চাহিদা প্রায় সোয়া চার লাখ টন। আর প্রতি লিটারে বিপিসি লোকসান দেয় প্রায় ১৭ টাকা। তাই চলতি অর্থবছর শেষে কেরোসিন বিক্রি থেকে বিপিসির লোকসান অন্তত ৮০০ কোটি টাকা হবে।
ফলে দাম আর না বাড়ালে চলতি বছরে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ও কেরোসিন খাতে বিপিসির লোকসান হবে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। বিপিসির সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আরও জানা গেছে, এই তিন ধরনের জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ।
অবশ্য এই লোকসান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারণ বিপিসি তেল আমদানিতে প্রতি লিটারে প্রায় সাড়ে নয় টাকা হারে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়। ফলে চলতি বছর ৬৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির বিপরীতে সরকার প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। সে হিসাবে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির তথা সরকারের প্রকৃত লোকসান হবে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে অকটেন ও বিমানের জ্বালানি জেট ফুয়েল বিক্রি করে বিপিসি সামান্য লাভ করছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপিসির ক্রমাগত লোকসান সত্ত্বেও তেল আমদানির অর্থ জোগান দিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। তাই তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে না।’ তবে সরকার বন্ড ছেড়ে তেল আমদানির টাকার সংস্থান করতে পারে বলে তিনি জানান।
কেননা, দেশের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সোনালী, জনতা ও অগ্রণী) কাছে বিপিসির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তার পরও ব্যাংকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনার কারণে বিপিসিকে তেল আমদানির অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা বেশিদিন সম্ভব নাও হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বিপিসির পরিচালক (অর্থ) সারফউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টেনেটুনে কোনোমতে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছি। জানি না, এটা কত দিন সম্ভব হয়। অনাদায়ী টাকার কারণে এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও আর সহজে আমদানি ঋণপত্র খুলতে চাইছে না।’
আমদানিব্যয় বাড়ছে: বিপিসি সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অশোধিত তেলের (ক্রুড অয়েল) পরিমাণ ১১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বাকি তেল পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়। ওই বছর তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।
পরের বছর (২০১০-১১ অর্থবছরে) বিপিসি ২৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করে প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন শোধিত-অশোধিত জ্বালানি তেল।
বিপিসির হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর, ২০১১) তেল আমদানি হচ্ছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। এ জন্য ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
অর্থবছরের পরবর্তী ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ২০১২) জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি তেল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই বাড়তি তেল আমদানির পরিমাণ ঠিক করা হয়। বর্তমান বাজারদর হিসাব করে ওই ছয় মাসের চাহিদামতো তেল আমদানির জন্য বিপিসিকে খরচ করতে হবে ২১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।
তিন জ্বালানি তেলে লোকসান: সরকার সর্বশেষ ১০ নভেম্বর পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে বাড়ানোর পরও বিপিসি সর্বাধিক ব্যবহূত জ্বালানি ডিজেল বিক্রি করে প্রতি লিটারে লোকসান দিচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৭ টাকা। চলতি অর্থবছরে বিপিসি ৩৮ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এই পরিমাণ ডিজেল বিক্রির জন্য বিপিসির লোকসান প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
একইভাবে বিপিসি প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লোকসান দিচ্ছে ছয় টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিপিসিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য অন্তত ১৭ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে হবে, যা বিক্রি করে বিপিসির লোকসান হবে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা।
দেশে কেরোসিনের চাহিদা প্রায় সোয়া চার লাখ টন। আর প্রতি লিটারে বিপিসি লোকসান দেয় প্রায় ১৭ টাকা। তাই চলতি অর্থবছর শেষে কেরোসিন বিক্রি থেকে বিপিসির লোকসান অন্তত ৮০০ কোটি টাকা হবে।
ফলে দাম আর না বাড়ালে চলতি বছরে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ও কেরোসিন খাতে বিপিসির লোকসান হবে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। বিপিসির সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আরও জানা গেছে, এই তিন ধরনের জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ।
অবশ্য এই লোকসান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারণ বিপিসি তেল আমদানিতে প্রতি লিটারে প্রায় সাড়ে নয় টাকা হারে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়। ফলে চলতি বছর ৬৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির বিপরীতে সরকার প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। সে হিসাবে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির তথা সরকারের প্রকৃত লোকসান হবে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে অকটেন ও বিমানের জ্বালানি জেট ফুয়েল বিক্রি করে বিপিসি সামান্য লাভ করছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপিসির ক্রমাগত লোকসান সত্ত্বেও তেল আমদানির অর্থ জোগান দিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। তাই তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে না।’ তবে সরকার বন্ড ছেড়ে তেল আমদানির টাকার সংস্থান করতে পারে বলে তিনি জানান।
No comments