কৃষিবিজ্ঞানীদের পেশা ত্যাগ-দেশের জন্য অশনি সংকেত

বরটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বিদেশে। কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পেশা। এটা কৃষিপ্রধান একটি দেশের জন্য কল্যাণকর খবর নয়। খাদ্যঘাটতি থাকলেও বাংলাদেশ আজ খাদ্যপণ্য উৎপাদনে যে সাফল্য দেখিয়েছে, তার পেছনে রয়েছে দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদান।


কিন্তু এই বিজ্ঞানীরা যখন পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নেন বা নিতে বাধ্য হন, তখন বুঝতে হবে তাঁদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তা ভবিষ্যতে দেশের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
'কৃষিবিজ্ঞানী হারাচ্ছে দেশ' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে কৃষিবিজ্ঞানীদের নানা হতাশার কথা উঠে এসেছে। কৃষি বিষয়ে পড়ালেখা করে নিজেদের কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে মেধাবী। এই মেধাবী মানুষরা একটি স্বপ্ন নিয়েই শুরু করেছিলেন নিজেদের পেশাগত জীবন। কিন্তু দীর্ঘ পেশাগত জীবন পেরিয়ে আসার পরও যখন তাঁদের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বইতে হয়, তখন তাঁরা হতাশ হবেন_এটাই স্বাভাবিক। সেই হতাশা থেকেই অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন বা পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এতে দেশ হারাচ্ছে মেধাবী সন্তানদের। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে কৃষিবিজ্ঞানীদের নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে। তাঁরা বলেছেন, প্রশাসন বা অধ্যাপনাসহ যেকোনো পেশায় বিনোদন ছুটি রয়েছে। নেই কেবল কৃষিবিজ্ঞানীদের। এ বিভেদ তুলে দেওয়ার জন্য গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। নেই কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ। জানা গেছে, সারা বিশ্বে কৃষিবিজ্ঞানীদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। এই সময় দেশে কৃষিবিজ্ঞানী প্রয়োজন। আজ বিশ্বজুড়ে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। এখন নতুন নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবনসহ কৃষিতে নতুন করে বিপ্লব আনতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীরা এই কাজে পালন করবেন অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু এখন তাঁরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এ খবরটি দেশের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। ফসলের নতুন জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কোনো পুরস্কার বা সম্মাননার ব্যবস্থা নেই। কৃষিপ্রধান অন্য দেশগুলোতে এ ধরনের আবিষ্কারের জন্য রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা দেওয়া হয় বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম যেখানে গতিশীল করা দরকার সেখানে তা আরো দুর্বল হচ্ছে। গবেষকদের নূ্যনতম সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে কৃষিবিজ্ঞানীরা দেশ ছাড়ছেন। কেউ কেউ দেশে থেকেও পেশা পাল্টাচ্ছেন। এটা কৃষির জন্য বড় ধরনের অশনি সংকেত এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সমস্যা দূর করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও মেধা পাচার রোধে সরকারের দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
যেহেতু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষিতে সাফল্যের শতভাগ কৃতিত্ব দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের, অতএব তাঁদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। অন্যথায় দেশের মেধা অন্য খাতে চলে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.