কৃষকের দুর্ভোগ-অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে
কৃষকের বেহাল দশা। পাটের দাম কম, উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই শঙ্কিত কৃষকরা। পাট বিক্রি করে কৃষক পয়সার মুখ দেখেছে বছর দুই আগে। সেই আশায় আশায় পাট বুনেছেন নজর দিয়ে তাঁরা। এদিকে পাটকলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। রপ্তানির মাত্রা পূরণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এখন পর্যন্ত। রপ্তানিকারকরা পাট কিনতে চাইছে না আগের মতো। কমে গেছে বিশ্ববাজারেও পাটের চাহিদা।
তার প্রভাব এভাবে পড়বে বাংলাদেশে, তা বোধ হয় সরকারও ভাবতে পারেনি। ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যে পাট রপ্তানি হতো, তার পরিমাণ কমে গেছে সেখানকার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে। পাটের অন্যতম ক্রেতা দেশ তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে তারা ক্রয় কমিয়ে দেওয়ায়ও পাট রপ্তানি কমে গেছে। তুরস্কের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে যে রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে, তাকে স্বাভাবিক মনে করলেও নতুন বাজার খোঁজা হয়নি কেন তা তলিয়ে দেখতে হবে। শুধু তা-ই নয়, পাটের বিকল্প বাজার তৈরির ব্যাপারেও সরকারের কার্যকর পদেক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। বিদেশে পাটের চাহিদা কমে যাবে_এই বিষয় সরকারের আগেই বোঝা উচিত ছিল। পশ্চিমের দেশগুলোতে ইতিপূর্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে, তা সব মহলেরই আগে থেকে জানা ছিল। সেই মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের কৃষকদের ওপর পড়বে_এটা জানার পরই সরকারের উচিত ছিল বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিশেষ করে ২০১০ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য পাটের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করাটা অপরিহার্য হওয়ার পরও সরকার সেদিকে নজর দেয়নি। আইনটি কার্যকর হলে এই মুহূর্তে যে ১১০০ কোটি টাকার পাট গুদামে পড়ে আছে তা থাকত না। আর কৃষকেরও যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে তাও কমে যেত। ভারতের পাটের ৯০ ভাগ ব্যবহার করছে তারা নিজেরা। সেখানে সরকারি কাজে ব্যবহার হওয়াটাই ছিল মুখ্য। বাংলাদেশে আইন হওয়ার পরও কোন কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না ভেবে দেখতে হবে। পাটকে বাঁচানোর জন্য সরকারের উচিত আইন কার্যকর করা। পাশাপাশি বিদেশে বিকল্প বাজার খোঁজাও জরুরি।
অন্যদিকে কৃষককে বিপাকে পড়তে হয়েছে চালের দাম নিয়েও। এমনো দেখা গেছে, কোনো কোনো এলাকায় দেড় মণ চাল বিক্রি করেও এক মণ সার পান না তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে কৃষকের দুর্ভোগ এখন চরমে। দেশের এই কৃষকদের বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের। সামগ্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হলে অথবা কৃষককে বাঁচাতে হলে অবশ্যই চাল ও পাটের উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দর নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে কৃষক ধান ও পাট চাষ কমিয়ে দেবে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
No comments