ফের মূল্যবৃদ্ধি-জ্বালানির জ্বালা চলবেই!

র্থমন্ত্রী সিএনজির দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বুধবার এবং এমন ধারণাও মিলেছিল যে, যানবাহনের অপরিহার্য জ্বালানি হয়ে ওঠা এ গ্যাসের দাম ক্রমে ডিজেলের কাছাকাছি নির্ধারণ করতে সরকার আগ্রহী। সাংবাদিকদের সঙ্গে তার আলোচনায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো আভাস ছিল না। কিন্তু একদিন যেতে না যেতেই নির্বাহী আদেশে কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।


মুক্তবাজার অর্থনীতির দাপটে সমতার ধারণা অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। কিন্তু সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে 'সমাজতন্ত্রের সমতার নীতি' অনুসরণ করেছে_ গরিবের কেরোসিন থেকে ধনীদের অকটেন সবকিছুতেই বৃদ্ধি লিটারে ৫ টাকা করে। এখন আরও একটি পদক্ষেপ অত্যাসন্ন বলেই মনে হয়_ সিএনজির দাম বাড়ানো। এটা করার প্রক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই ডিজেলের বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবেন! মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে এবং এ পণ্যের প্রায় সবটাই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। ক্রয়মূল্যের তুলনায় কম দামে দেশের বাজারে বিক্রির কারণে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও বিপুল এবং কোনো কোনো হিসাবে বছরে তা ২০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বেসরকারি খাতে স্থাপন করা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানি তেল সরবরাহেও সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমবে এমন আশা নেই, বরং শঙ্কা আরও বৃদ্ধির। পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে অগ্রগতির ধারা তাতে জ্বালানির চাহিদা আরও বাড়তে থাকবে। এ অবস্থায় কেনা দামের সঙ্গে সমন্বয় করে না চললে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতির নানা শাখায়। সরকারের এ মত একেবারে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু উৎপাদন খাত ও জনজীবন উভয় ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব সামলাতে সরকারের হাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প অবশ্যই রয়েছে। যেমন, দেশে নতুন তেল শোধনাগার স্থাপন করা। তেল আমদানির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং কমিশন ভোগসহ কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটতে না দেওয়া। গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে সচেষ্ট হওয়া এবং এ ক্ষেত্রে 'নাইকো কেলেঙ্কারির' পুনরাবৃত্তি রোধ করা। পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের জীবন-জীবিকার স্বার্থ নিশ্চিত করে কয়লার উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ। সৌরবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাসের মতো বিকল্প জ্বালানির জোগান বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান। এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ক্ষেত্রে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর 'সরকারকা মাল দরিয়া মে ডাল' মনোভাবে অবশ্যই পরিবর্তন আনা চাই। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিতে পড়বেই। এর শেষ কোথায় সেটাও জানা নেই। সরকারে যারা থাকে তাদের জন্য এটা শাঁখের করাতের মতো। কিন্তু সরকারি প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হলে এবং ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে জনগণের মূল্যবৃদ্ধিজনিত ক্ষোভ-রোষের মাত্রাও কিছুটা সীমিত হতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.