ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অভিমত-দুর্নীতির কারণে আস্থার সংকটে ভারতের রাজনীতি

দুর্নীতি ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অচলাবস্থা ভারতের অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডবি্লউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদরা এই মত ব্যক্ত করেছেন। ভারত সরকারকে অবিলম্বে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।মুম্বাইয়ে গতকাল সোমবার ডবি্লউইএফের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়।


৪০টি দেশের প্রায় ৭০০ প্রতিনিধি যোগ দেয় এতে। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়িরা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন, এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিকে বাঁচাতে খুব দ্রুত রাজনৈতিক সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার। অর্থনীতির চাকা উল্টো দিকে ঘুরছে উল্লেখ করে তাঁরা সরকারের প্রতি জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১০ সালের দুর্নীতির সূচকে ভারতের অবস্থান ৮৭ নম্বরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের বড় ধরনের কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনায় জনগণের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। দুর্নীতিবিরোধী আইন পাসের দাবিতে সমাজকর্মী আন্না হাজারের অনশন আন্দোলনে বেকায়দায় পড়ে যায় মনমোহন সরকার। দুর্নীতির কারণে ভারতের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে বলে সর্বস্তরেই সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) যেখানে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ ছিল, চলতি ২০১১-২০১২ অর্থবছরে তা নেমে ৭ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে কমে গেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোগ্যপণ্য ও আবাসন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গোদরেজ গ্রুপের চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ বলেন, 'ভারতে আমরা যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে সফল হই, তাহলে এখানে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভারতের জিডিপির মাত্রা বাড়বে।'
ভারতের সবচেয়ে ধনী এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মুকেশ আম্বানি বলেন, 'গণতান্ত্রিক শাসন যেহেতু কার্যকর আছে, কাজেই আমরা স্থবির হয়ে যাব এটা বলা যাবে না। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা মেটাতে হলে বিংশ শতাব্দীর চিন্তা-ভাবনা বদলাতে হবে। আমাদের একমত হয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে
ছুটতে হবে।'
ভারতের পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিমন্ত্রী ফরুক আবদুল্লাহ দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অবনতির জন্য ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোকে দোষারোপ করেছেন। আর ভারতের দুর্র্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কর্মী কিরণ বেদি বলেন, পার্লামেন্টের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের মধ্যেই দুর্নীতিবিরোধী আইন পাস না করলে, তাঁরা আবারও আন্দোলন শুরু করবেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.