ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলপথ মহাসড়ক অবরোধ :সংঘর্ষে আহত ৫০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিগত পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক ভঁূইয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাত ৯টার দিকে শহরের কোর্ট রোডের গোলাপ রেস্ট হাউসের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।এদিকে মাহমুদকে গ্রেফতারের জের ধরে গতকাল সোমবার পুলিশের সঙ্গে তার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।


বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা এদিন কয়েক ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ১০ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহত পুলিশের মধ্যে তিনজনএসআই রয়েছেন। তাদের দু'জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্র্শীরা জানান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার নিজ গ্রাম পৌর এলাকার ভাদুঘর থেকে সহাস্রাধিক লোকের একটি মিছিল ভাদুঘর ফাটা পুকুরপাড়ে উপস্থিত হয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সল মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সঞ্জয় সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর থানা) আবু শহীদ সারোয়ার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রবের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দু'পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ভাদুঘর রেললাইনে অবস্থান নেয়। পুলিশ রেললাইন থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশের প্রতি বৃষ্টির মতো পাথর ছুড়ে। এ সময় ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাদুঘর এলাকা অতিক্রমকালে ব্যাপক ভাংচুর করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকশ' পেট্রোল বোমা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও তাদের সরিয়ে দিতে শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। দফায় দফায় হামলায় সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সালাহ উদ্দিন, এসআই মাসুদ, এসআই আকবরসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন। দুপুর ২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পেঁৗছে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে ও রেললাইন থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকাগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস আখাউড়ার আজমপুর, ঢাকাগামী আন্তঃনগর মহানগর আখাউড়া রেলওয়ে জংশন ও শায়েস্তাগঞ্জগামী বাল্লা লোকাল ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়ে। এ ছাড়াও সকাল ১০টার দিকে মাহমুদ সমর্থকরা পৌর এলাকার পাইকপাড়া রামকানাই মার্কেটের সামনে ও পৌর আধুনিক মার্কেটের সামনে শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোডে টায়ার পুড়িয়ে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করে। রোববার রাতে তারা টিএ রোডে ২টি ট্রাক ভাংচুর করে এবং গোকর্ণ রোডে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
গুরুতর আহত এসআই সালাহ উদ্দিন ও এসআই মাসুদ রানাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এসআই আকবর, কনস্টেবল নাছির উদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তাক, গুলিবিদ্ধ পথচারী মাহমুদ হাসানসহ (১৪) অন্যদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে মাহমুদ সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রব বলেন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে আনুমানিক ৭০-৮০টি রাবার বুলেট ও ৩০-৪০টি কাঁদানে গ্যাস শেল নিক্ষেপ করা হয়। তিনি জানান, মাহমুদের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ১০ পুলিশ আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দুপুর ২টার দিকে রেলপথ অবরোধমুক্ত করা হয়।
এদিকে গ্রেফতারকৃত মাহমুদের ছোট ভাই মাকসুদুল হক রানা অভিযোগ করেন, রোববার রাতে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও বাড়ির মালপত্র তছনছ করে।

No comments

Powered by Blogger.