ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি by সাইদ সিদ্দিকী

ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল দেশ। তাও আবার একবার নয়। থেকে থেকে কয়েকবার কেঁপে উঠেছে পুরো দেশ, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা। গত বুধবার (১১ এপ্রিল) সংঘটিত এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মূলত ইন্দোনেশিয়ায়।


সাগরতলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৮.৬ হলেও বাংলাদেশে এর কম্পনের মাত্রা ছিল ৩ বা এর চেয়ে কিছুটা বেশি। তাই চট্টগ্রামের কয়েকটি বহুতল ভবন হেলে পড়া ছাড়া আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা শোনা যায়নি। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ভূমিকম্পে এ দেশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ_ এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহলে কোনো মতান্তর নেই। কিছুদিন আগে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফট বিশ্বের ১৭০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৬টি দেশকে \'চরম ঝুঁকিপূর্ণ\' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। আর এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। এত গুরুতর সংবাদের পরও এ নিয়ে সরকার দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি। যৎসামান্য যা নেওয়া হয়েছে তাও আবার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ঝুঁকি মোকাবেলায় ৭০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনেছে। অপ্রতুল হলেও এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে ৭৫ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হয়েছে, সেটি এখনও তালিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এসব ভবনের ব্যাপারে এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভূমিকম্প-পরবর্তী প্রস্তুতি আরও লেজেগোবরে। দেশে ভূমিকম্প-পরবর্তী যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র দরকার এখনও তার অর্ধেকও নির্মিত হয়নি। ১৯৯১ সালে উপকূলে ভয়াবহ দুর্যোগের পর পাঁচ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে সময় নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশে কতটি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার এর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। তিনি তখন পাঁচ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রের কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। অথচ এই ২০১২ সালে এসেও দেশে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা তিন হাজারের মতো, যা জনসংখ্যা অনুপাতে খুবই নগণ্য। এর মধ্যে আবার এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে_ Prevention is the better then cure. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও আমরা এই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারি।
sayd.rahman@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.