ঢাকা চিড়িয়াখানায় এসেছে আটটি প্রাণী, মন্ত্রীর এপিএসের দুই দেশ সফর-২৭০টি পশুপাখির বেশির ভাগই শিগগির আসছে না by সেলিম জাহিদ

ঢাকা চিড়িয়াখানার জন্য যে ২৭০টি বন্য প্রাণী ও পাখি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আটটি প্রাণী গতকাল শুক্রবার এসেছে। তবে বাকিগুলোর অধিকাংশ শিগগির আসছে না। ২৭০টির মধ্যে ৫৪টি বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও বাকিগুলো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি ৯৫ লাখ টাকা।


ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, এক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা চিড়িয়াখানার পরিবেশ ‘যথেষ্ট মানসম্মত’ নয় জানিয়ে নয়টি প্রাণী সরবরাহ করতে চাইছে না। দুর্লভ একটি প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে না। বাকিগুলো সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
এসব পশুপাখি কেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোছাদ্দেক হোসেন জানান, দেশে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় পাখিজাতীয় প্রাণী পরে আনা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সব পশুপাখি আসছে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এসব পশুপাখি কেনার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে এসব পশু সরবরাহের কার্যাদেশ পায় ফ্যালকন ট্রেডার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২৮ প্রজাতির ২১৮টি পশুপাখি আমদানি করার কথা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। বাকিগুলো আনার কথা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।
এসব পশুপাখি আনার জন্য আমদানিকারক ঠিকাদারের খরচে সরকারি দুটি প্রতিনিধিদল গত মার্চে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে কোনো পশুপাখি আনা হচ্ছে না।
পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গত ২৪ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে যে ২৫টি প্রাণী আনার জন্য প্রাক্-জাহাজীকরণ অনুসন্ধান (পিএসআই) করে, সেগুলোর মধ্যে আটটি গতকাল দুপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানায় এসেছে। এগুলো হলো: দুটি সাদা গন্ডার, দুটি সাদা সিংহ ও চারটি হায়েনা। ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোহেল আহমেদ জানান, তিনটি করে জেব্রা, গ্রেটার কুদু, উটপাখি ও অরিক্স আগামী সপ্তাহে আসবে।
তবে পিএসআই করলেও এক জোড়া জিরাফ, এক জোড়া শিম্পাঞ্জি ও অপর একটি প্রাণী শিগগির আসছে না। এ সম্পর্কে সোহেল আহমেদ জানান, বিমান ভাড়া না পাওয়ায় এগুলো আনতে দেরি হচ্ছে। বাকিগুলো কবে আসবে, তা তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় পিএসআই করতে যাওয়া ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোসাদ্দেক হোসেন, প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিলটন কুমার সাহা, ঢাকা চিড়িয়াখানার প্রাণী পুষ্টি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামাল, জু অফিসার অসীম কুমার দাস ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাকিফ-উল-আজম। জোহানেসবার্গের এক খামারে এই পিএসআই হয়।
সফর-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওই পিএসআই হওয়ার সময় মন্ত্রীর এপিএস ছিলেন জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে কেপটাউনে মন্ত্রীর সঙ্গে। মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। মন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী ও এপিএস পৃথক বিমানে সরাসরি কেপটাউনে যান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বুধবার তাঁর দপ্তরে বলেন, ‘মৎস্য বিষয়ে সেমিনারে অংশ নিতে আমি কেপটাউনে যাই।’
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার আগে অস্ট্রেলিয়া সফরসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা চিড়িয়াখানার জন্য পশুপাখি আমদানি সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও চিড়িয়াখানা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে এই সফর। এই সফরের প্রতিনিধিদলে ছিলেন মন্ত্রীর এপিএস, একজন যুগ্ম সচিব, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা চিড়িয়াখানার অধ্যক্ষ (কিউরেটর)। এই সফরেও মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ছিলেন।
দুই প্রতিনিধিদলেই তাঁর এপিএসের থাকা প্রসঙ্গে আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বাইরে গেলে সে (এপিএস) সাপোর্টিং হিসেবে যায়। ওষুধ-বড়ি খেতে হয়, সে না থাকলে এগুলো কে করবে?’ অস্ট্রেলিয়ায় নিজের যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর উন্নত দেশ। সেখানকার চিড়িয়াখানার অবস্থা কী, তারা কীভাবে করেছে, সে অভিজ্ঞতা নিতে গেছি। তা ছাড়া ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু অ্যান্ড অ্যাকুরিয়ামের (ওয়াজা) সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারেও তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
চিড়িয়াখানার পরিবেশ ‘যথেষ্ট মানসম্মত’ নয়: আমদানিকারক ফ্যালকন ট্রেডার্স জানায়, তিনটি কলোবাস বানর, এক জোড়া ম্যানড্রিল ও দুই জোড়া ব্ল্যাক ম্যাঙ্গাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় না পেয়ে তাঁরা চেক প্রজাতন্ত্রের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহের চেষ্টা করেন। প্রাণীগুলো সরবরাহের আগে ওই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা চিড়িয়াখানায় এসব প্রাণীর নিবাসের পরিবেশ-পরিমাপ, এ-সংক্রান্ত ছবি এবং তত্ত্বাবধানকারীর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চায়। এসব তথ্য পাঠানোর পর প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা চিড়িয়াখানার পরিবেশ ‘নট আপ টু দ্য মার্ক’ (যথেষ্ট মানসম্মত) জানিয়ে প্রাণীগুলো সরবরাহে অপারগতা জানায়।
ফ্যালকন ট্রেডার্স জানায়, তারা আমদানি তালিকার অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী এক জোড়া ব্ল্যাক প্যান্থারসহ ২০টি প্রাণী কেনার জন্য কানাডার মন্ট্রিলের এক বন্য প্রাণী ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাঁর কাছ থেকে দরও এনেছিল। দর বেশি হওয়ায় কেবল এক জোড়া ব্ল্যাক প্যান্থার কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী কেবল এই প্রাণী বিক্রি করতে রাজি নন। ফ্যালকনের স্বত্বাধিকারী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চিড়িয়াখানার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো একটি পশুপাখির জেলখানা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে এটি বলেছি।’

No comments

Powered by Blogger.