ছদ্মবেশে চোরচক্র-গৃহকর্মীর অধিকারই সুরক্ষার চাবিকাঠি
গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে খোদ ঘরের মধ্যে যদি চোর কিংবা শিশু অপহরণকারী চক্র বাসা বাঁধে, তাহলে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। বুধবারের সমকালের অপরাধ পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম নগরের এমন পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। রয়েছে কয়েকটি অঘটনেরও উল্লেখ। বস্তুত এই চিত্র কেবল চট্টগ্রামের নয়।
রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে মাঝে মধ্যে গৃহকর্মী সংক্রান্ত বিড়ম্বনার ঘটনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। স্বীকার করতে হবে, দুর্ভাগ্যবশত নামমাত্র খাওয়া-পরা ও পারিশ্রমিকে অন্যের ঘরে কাজ করতে এসে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর খবরও আমাদের পড়তে হয়। গৃহকর্তা কিংবা কর্ত্রীর আচরণ কীভাবে কখনও কখনও অমানবিকতারও সীমানা ছাড়িয়ে যায়, তাও আমরা জানি। কিন্তু তাই বলে গৃহকর্মীর প্রতারণা, চোর ও অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ কিংবা ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্রের সদস্যেরই ছদ্মবেশে গৃহপ্রবেশের ঘটনাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। এ থেকে উত্তরণের জন্য সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন গৃহকর্মী নিয়োগ ও তাদের সুযোগ-সুবিধা, অধিকারের বিষয়টিকে বিধিবদ্ধ করা। নিভৃত অথচ জরুরি এই সেবা এখন চলছে ব্যক্তির মর্জিমাফিক। গৃহকর্মীজনিত বিড়ম্বনাগুলো এই ইস্যুতে নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের ধারাবাহিক অবহেলারই ফল। নেহাত পেটের দায়ে দিন-রাত সংসারের ঘানি টানা অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়টি আমরা যেভাবে এড়িয়ে চলেছি, তাই এখন বিষবৃক্ষ হিসেবে মাথা তুলতে শুরু করেছে। এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতিই ঘটবে। আমরা জানি, খসড়া 'গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১০' অনেক দিন ধরেই ঝুলে রয়েছে। খসড়া নীতিমালায় দেশের সব সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মীর সঙ্গে নিয়োগকর্তার চুক্তিতে কাজের ধরন, মজুরি, কর্মঘণ্টা, বিশ্রাম, ছুটি, লেখাপড়া, থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি সেখানে গৃহকর্মীর অনুমোদিত ঠিকানা ও পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এগুলো নিশ্চিত হলে চুরি, প্রতারণা, শিশু অপহরণের ঘটনা কমে আসবে বলেই প্রত্যাশা।
No comments