বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে নাঃ দরকার সার্বিক সামাজিক আন্দোলন
আর্থ-সামাজিক কারণে সেই প্রাচীন অভিশপ্ত জীবন এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা। দারিদ্র্য, অসচেতনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার যূপকাষ্ঠে বলির শিকারে পরিণত হচ্ছে শিশু-কিশোরীরা। অপরিণত বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা বিয়ে সম্পর্কে কোনো বোধবুদ্ধি হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে তাদের।
মনোদৈহিক বিকাশের আগেই সংসার জীবনের এই নিদারুণ অভিজ্ঞতার পরিণতি সম্পর্কে জেনেও অভিভাবকরা শিশু-কিশোরীকে তুলে দিচ্ছে বরের হাতে। তারপর শুরু হচ্ছে তার ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন। এভাবেই নারীর পৃথিবী সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে বাল্যবিয়ের মাধ্যমে। আইন করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না।
বিশ্বের যে কয়টি দেশে বাল্যবিয়ের হার বেশি, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এক পরিসংখ্যান মতে, গ্রামাঞ্চলে এখনও ৭০ শতাংশ মেয়েকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া হয়। ফলে কিশোরী মা ও সদ্যজাত শিশুমৃত্যুর হারই শুধু বাড়ছে না, প্রতিনিয়ত নানারকম মানসিক-শারীরিক ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হচ্ছে অপরিণত বয়স্ক বধূকে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন রিপোর্ট-২০০৯-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে যা বলা হয়েছে, তা রীতিমত ভয়াবহ, উদ্বেগজনক। রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশের বেশি মেয়ের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগেই। চিকিত্সক ও মনোবিদদের মতে, অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহিত মেয়েরা মানসিক, শারীরিক ও যৌনজীবনে মনো-দৈহিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বেড়ে যায় তাদের প্রসবজনিত জটিলতার ঝুঁকি। প্রাপ্তবয়স্ক মায়েদের চেয়ে এ ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি। প্রসবজনিত কারণে মায়ের মৃত্যুঝুঁকির পাশাপাশি সন্তানের মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
বাল্যবিয়ে রোধ করার জন্য বাংলাদেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। যথাসময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানালে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার বিহিতও রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতার পটভূমি এখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল তো বটেই, কদাচিত্ শহরাঞ্চলেও গোপনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অশিক্ষাই এখন পর্যন্ত বাল্যবিয়ের মূল কারণ। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, একটি গ্রামে বা সংশ্লিষ্ট পরিবারে কেউ শিক্ষিত থাকলে এ ধরনের বিয়ের বিরুদ্ধে তিনি বাধার সৃষ্টি করেন। বিয়েজনিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিম্ন মর্যাদা ভোগ করে। স্কুলে পড়াশোনা এক অর্থে বাল্যবিয়ের জন্য অব্যর্থ ব্যবস্থা না হলেও অন্যতম বর্ম। এতে মেয়েদের মধ্যে উচ্চমানসিকতা, সচেতনতা এবং নিজের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে ধারণা জন্মে—বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইনের ইতিহাস থেকেও এ কথা প্রমাণিত। এ জন্য সরকার অবৈতনিক শিক্ষা, উপবৃত্তির ব্যবস্থা করায় যথেষ্ট সুফল পাওয়া গেলেও বাল্যবিয়ের সংখ্যা ও প্রবণতা আশানুরূপভাবে কমছে না। বাল্যবিয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দরিদ্র-নিরক্ষর পরিবারে এখনও কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করা হয়। বয়স্ক মেয়ের নিরাপত্তাহীনতা বোধ তাদের কম বয়সে বিয়ে দেয়ার মানসিকতা তৈরি করে। এও সত্য যে, সমাজে বখাটের উত্পাত বেড়েছে। এ কারণে স্কুলগামী কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনার খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বয়স বাড়লে বেশি বেশি যৌতুক গোনার আশঙ্কাও করেন তারা। নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। ফলে পড়াশোনার বয়সে স্কুল ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয় মেয়েরা। দেশে যৌতুকবিরোধী আইনও বিদ্যমান। তারপরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না কেন—এ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অশিক্ষার হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন তথা কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। লক্ষ্য করা গেছে, বর্তমানে অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা বিশেষত গার্মেন্ট শিল্পে কাজ করছে। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করতে না পারলেও অনেকে কমবেশি স্বনির্ভরতার সুযোগ পাচ্ছে, পরিবেশগত ভিন্নতার কারণে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বিয়ের ব্যাপার নিয়ে তারা নিজেরাই ভাবতে শিখছে, পরিবারেও তার মতামতের গুরুত্ব তৈরি হচ্ছে। কাজেই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নারী শিক্ষার হার বাড়ানো, নিরাপত্তার আবহ সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। উপরন্তু বিদ্যমান সমাজকাঠামোর পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে শুধু আইন করে বাল্যবিয়ে রোধ করা যাবে না। এ জন্য দরকার সার্বিক সামাজিক আন্দোলন।
বিশ্বের যে কয়টি দেশে বাল্যবিয়ের হার বেশি, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এক পরিসংখ্যান মতে, গ্রামাঞ্চলে এখনও ৭০ শতাংশ মেয়েকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া হয়। ফলে কিশোরী মা ও সদ্যজাত শিশুমৃত্যুর হারই শুধু বাড়ছে না, প্রতিনিয়ত নানারকম মানসিক-শারীরিক ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হচ্ছে অপরিণত বয়স্ক বধূকে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন রিপোর্ট-২০০৯-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে যা বলা হয়েছে, তা রীতিমত ভয়াবহ, উদ্বেগজনক। রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশের বেশি মেয়ের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগেই। চিকিত্সক ও মনোবিদদের মতে, অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহিত মেয়েরা মানসিক, শারীরিক ও যৌনজীবনে মনো-দৈহিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বেড়ে যায় তাদের প্রসবজনিত জটিলতার ঝুঁকি। প্রাপ্তবয়স্ক মায়েদের চেয়ে এ ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি। প্রসবজনিত কারণে মায়ের মৃত্যুঝুঁকির পাশাপাশি সন্তানের মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
বাল্যবিয়ে রোধ করার জন্য বাংলাদেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। যথাসময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানালে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার বিহিতও রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতার পটভূমি এখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল তো বটেই, কদাচিত্ শহরাঞ্চলেও গোপনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অশিক্ষাই এখন পর্যন্ত বাল্যবিয়ের মূল কারণ। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, একটি গ্রামে বা সংশ্লিষ্ট পরিবারে কেউ শিক্ষিত থাকলে এ ধরনের বিয়ের বিরুদ্ধে তিনি বাধার সৃষ্টি করেন। বিয়েজনিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিম্ন মর্যাদা ভোগ করে। স্কুলে পড়াশোনা এক অর্থে বাল্যবিয়ের জন্য অব্যর্থ ব্যবস্থা না হলেও অন্যতম বর্ম। এতে মেয়েদের মধ্যে উচ্চমানসিকতা, সচেতনতা এবং নিজের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে ধারণা জন্মে—বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইনের ইতিহাস থেকেও এ কথা প্রমাণিত। এ জন্য সরকার অবৈতনিক শিক্ষা, উপবৃত্তির ব্যবস্থা করায় যথেষ্ট সুফল পাওয়া গেলেও বাল্যবিয়ের সংখ্যা ও প্রবণতা আশানুরূপভাবে কমছে না। বাল্যবিয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দরিদ্র-নিরক্ষর পরিবারে এখনও কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করা হয়। বয়স্ক মেয়ের নিরাপত্তাহীনতা বোধ তাদের কম বয়সে বিয়ে দেয়ার মানসিকতা তৈরি করে। এও সত্য যে, সমাজে বখাটের উত্পাত বেড়েছে। এ কারণে স্কুলগামী কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনার খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বয়স বাড়লে বেশি বেশি যৌতুক গোনার আশঙ্কাও করেন তারা। নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। ফলে পড়াশোনার বয়সে স্কুল ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয় মেয়েরা। দেশে যৌতুকবিরোধী আইনও বিদ্যমান। তারপরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না কেন—এ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অশিক্ষার হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন তথা কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। লক্ষ্য করা গেছে, বর্তমানে অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা বিশেষত গার্মেন্ট শিল্পে কাজ করছে। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করতে না পারলেও অনেকে কমবেশি স্বনির্ভরতার সুযোগ পাচ্ছে, পরিবেশগত ভিন্নতার কারণে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বিয়ের ব্যাপার নিয়ে তারা নিজেরাই ভাবতে শিখছে, পরিবারেও তার মতামতের গুরুত্ব তৈরি হচ্ছে। কাজেই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নারী শিক্ষার হার বাড়ানো, নিরাপত্তার আবহ সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। উপরন্তু বিদ্যমান সমাজকাঠামোর পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে শুধু আইন করে বাল্যবিয়ে রোধ করা যাবে না। এ জন্য দরকার সার্বিক সামাজিক আন্দোলন।
No comments