এমন মৃত্যু মানা যায় না by লতিফা নিলুফার পাপড়ি
পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কতটা ভারী? যে পিতা সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছেন তিনিই এই ভারের কথা বলতে পারবেন। এই ভারের মধ্যেও রকমফের আছে। অসুখে পড়ে মারা যাওয়া সন্তানের যে ভার; দুর্ঘটনায় পরে অকালে নিহত হওয়া সন্তানের ভার সমান নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোঝা সন্তানের লাশ।
মিরসরাইয়ের হতভাগ্য পিতারা সেই বোঝাই বহন করেছেন। আর মায়েদের বুক এফোঁড়-ওফোঁড় হচ্ছে সন্তান হারানোর যন্ত্রণায়। ভাই-বোনেরা মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে আদরের ভাইকে হারিয়ে। সহপাঠী-স্বজন শোকে পাথর হয়ে আছে। এমন বিয়োগান্ত ঘটনা আগে তারা কি দেখেছে? তাই তো সবাই যেন নির্বাক। মুহূর্তে এত লাশ! তাও কচি কচি শিশুর। এত লাশ তারা রাখবে কোথায়? এত শোক সইবে কীভাবে?
এখন প্রশ্ন, এমন হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কে বা কারা? এক কথায় প্রশ্নের জবাব, রাষ্ট্র। রাষ্ট্র কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন তাদের অবহেলায় এমন মৃত্যু ঘটছে। আমরা দেখে আসছি সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে আগামী দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সুপারিশ থাকে। গত চলি্লশ বছর অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এরূপ ঘটনায় গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য আমার জানা নেই।
একটি পরিবারের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব যেমন পরিবারের প্রধানের, একটি রাষ্ট্রের সব মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু সরকারের। সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে রাষ্ট্রের জনগণ সেই আকাঙ্ক্ষায় ভোট দেয়। সরকারের পরিবর্তন ঘটায়। কিন্তু সেই যে বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে_ 'যে-ই যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ'। আমাদের ললাট লিখনই এমন। তাই তো বারবার আমরা সরকার বদল করি, তবু আমাদের ভাগ্য বদলায় না। আমরা অর্থাৎ এ দেশের জনগণও এতই ভালো মানুষ যে, সব কিছুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিই। সরকারগুলোর সব ব্যর্থতাকেই ক্ষমা করে দিই।
পিকআপ ভ্যানের চালকের ভুলের জন্য হোক আর অন্য যে কারণেই হোক চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের গত ১১ জুলাই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক কোমল প্রাণের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছি না। মিডিয়ার বদৌলতে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো_ এদিন মিরসরাই স্টেডিয়াম মাঠে বঙ্গবন্ধু আন্তঃস্কুল গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে মিনি ট্রাক খাদে পড়ে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর নিহত হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও এ খাতের বাজেটের দৈন্যদশা নিয়ে। আমার কয়েকটি প্রশ্ন। ক্রীড়ানুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কি আরও আন্তরিক হওয়া উচিত ছিল না? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একত্রে শতাধিক শিশু-কিশোরকে কীভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য মিনি ট্রাকে উঠতে দিলেন? ট্রাক-বাস ড্রাইভারদের কথায় এবার আসি। মদ খেয়ে হুঁশ হারানো এসব ড্রাইভার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকে। শত শত প্রাণ কেড়ে নিলেও শাস্তি অত্যন্ত লঘু। এ ক্ষেত্রে মনে পড়ে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে দ্রুতগামী হিউম্যানহলার রেঞ্জারের ধাক্কায় নিহত ১১ জন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের মৃত্যুর কথা। দীর্ঘ আট বছর পর গত ১০ মার্চ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ে রেঞ্জার চালকের তিন বছরের সাজা হয়। চালক অবশ্য দুর্ঘটনার পর থেকেই পলাতক।
এই পরিস্থিতিতে এখন একটাই উপায়; আর সেটা হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সচেতনতা। নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য চালকদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গাড়িগুলো যেন তারা সঠিক নিয়মে চালায় তার ব্যবস্থা করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্থের বিনিময়ে যেন কিনতে না পারে। জাল লাইসেন্স যেন না রাখে; সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। আমাদের দেশে তো বেশির ভাগ আইনের সেবক টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই ড্রাইভারদের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস দিয়ে দেয়। এগুলো অবশ্যই রোধ করতে হবে।
আরামবাগ, মৌলভীবাজার
এখন প্রশ্ন, এমন হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কে বা কারা? এক কথায় প্রশ্নের জবাব, রাষ্ট্র। রাষ্ট্র কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন তাদের অবহেলায় এমন মৃত্যু ঘটছে। আমরা দেখে আসছি সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে আগামী দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সুপারিশ থাকে। গত চলি্লশ বছর অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এরূপ ঘটনায় গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন তথ্য আমার জানা নেই।
একটি পরিবারের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব যেমন পরিবারের প্রধানের, একটি রাষ্ট্রের সব মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু সরকারের। সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে রাষ্ট্রের জনগণ সেই আকাঙ্ক্ষায় ভোট দেয়। সরকারের পরিবর্তন ঘটায়। কিন্তু সেই যে বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে_ 'যে-ই যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ'। আমাদের ললাট লিখনই এমন। তাই তো বারবার আমরা সরকার বদল করি, তবু আমাদের ভাগ্য বদলায় না। আমরা অর্থাৎ এ দেশের জনগণও এতই ভালো মানুষ যে, সব কিছুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিই। সরকারগুলোর সব ব্যর্থতাকেই ক্ষমা করে দিই।
পিকআপ ভ্যানের চালকের ভুলের জন্য হোক আর অন্য যে কারণেই হোক চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের গত ১১ জুলাই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক কোমল প্রাণের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছি না। মিডিয়ার বদৌলতে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো_ এদিন মিরসরাই স্টেডিয়াম মাঠে বঙ্গবন্ধু আন্তঃস্কুল গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে মিনি ট্রাক খাদে পড়ে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর নিহত হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও এ খাতের বাজেটের দৈন্যদশা নিয়ে। আমার কয়েকটি প্রশ্ন। ক্রীড়ানুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কি আরও আন্তরিক হওয়া উচিত ছিল না? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একত্রে শতাধিক শিশু-কিশোরকে কীভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য মিনি ট্রাকে উঠতে দিলেন? ট্রাক-বাস ড্রাইভারদের কথায় এবার আসি। মদ খেয়ে হুঁশ হারানো এসব ড্রাইভার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকে। শত শত প্রাণ কেড়ে নিলেও শাস্তি অত্যন্ত লঘু। এ ক্ষেত্রে মনে পড়ে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে দ্রুতগামী হিউম্যানহলার রেঞ্জারের ধাক্কায় নিহত ১১ জন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের মৃত্যুর কথা। দীর্ঘ আট বছর পর গত ১০ মার্চ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ে রেঞ্জার চালকের তিন বছরের সাজা হয়। চালক অবশ্য দুর্ঘটনার পর থেকেই পলাতক।
এই পরিস্থিতিতে এখন একটাই উপায়; আর সেটা হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সচেতনতা। নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য চালকদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গাড়িগুলো যেন তারা সঠিক নিয়মে চালায় তার ব্যবস্থা করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্থের বিনিময়ে যেন কিনতে না পারে। জাল লাইসেন্স যেন না রাখে; সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। আমাদের দেশে তো বেশির ভাগ আইনের সেবক টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই ড্রাইভারদের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস দিয়ে দেয়। এগুলো অবশ্যই রোধ করতে হবে।
আরামবাগ, মৌলভীবাজার
No comments