জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ-এক ধাপ অগ্রগতির পর...
জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে সাধারণ ধারণাই প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের মনে আছে, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির চতুর্থ লক্ষ্য পূরণে সাফল্যের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছিল। এমডিজির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্ট ও ইউএসএআইডি পরিচালিত এই জরিপেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নতির পথে। আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশের মাতৃস্বাস্থ্য একটা বড় ঝুঁকির মধ্যে থাকে প্রসবকালীন। আর ওই সময়ে মায়ের স্বাস্থ্যই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অপরিহার্য শর্ত। এ নিয়ে গত দুই দশকে বিশেষজ্ঞরাও মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। উলি্লখিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২০০৭ সালের পর চার বছরে প্রসবকালে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পাওয়ার হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশ হয়েছে। এই অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে যে ব্যবধান রয়ে গেছে, তা কমিয়ে আনতে না পারলে এর সুফল জাতীয়ভাবে পাওয়া যাবে না। আবার 'দক্ষ' স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তাও কিন্তু প্রশ্নহীন নয়। সংবাদমাধ্যমে এমন খবর বিরল নয় যে, নিছক অর্থপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যেই অনেকক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। আলোচ্য জরিপে বিষয়টিকে যথার্থই আশঙ্কাজনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এও উদ্বেগজনক যে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেই এমন কাণ্ড বেশি হয়। অর্থ ব্যয় করে নাগরিকরা যখন খানিকটা বাড়তি সেবা নিতে যান, তখন সাময়িক সুবিধার নামে দীর্ঘমেয়াদি এই ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে! কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দেবে বলে প্রত্যাশা।
নারীর সন্তান জন্মদানের গড় হার কমে যাওয়ার যে চিত্র জরিপে উঠে এসেছে, সেটাকে আমরা সতর্কতার সঙ্গে দেখতে চাই। অস্বীকার করা যাবে না যে, নারীর কর্মজীবনের সঙ্গে সন্তান জন্মদানের একটি বৈপরীত্য দেখা যায়। উন্নত বিশ্বে জীবনের এই দুই কক্ষের মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধার প্রতি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মনোযোগ ক্রমাগতই বাড়ছে। আমাদের দেশে নারীর কর্মতৎপরতা ক্রমে বাড়ছে। এর প্রভাবেই কি সন্তান জন্মদানের হার কমছে? এটা ঠিক যে, বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি। এই জরিপেও দেখা যাচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ৫ শতাংশ বেড়েছে। এই হার আরও বৃদ্ধিই কাম্য। কিন্তু সেটা নারীর মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা খর্ব করে কাম্য হতে পারে না। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভাববেন নিশ্চয়ই। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খেতে পাওয়ার হার গত চার বছরে বৃদ্ধি পাওয়াকে সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রভাব হিসেবেই দেখতে হবে। তারপরও শিশুপুষ্টির হার কমছে কেন_ খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রথম ছয় মাস-পরবর্তী সময়ে বাজারে সুলভ ও চটকদার খাদ্যের প্রতি নির্ভরতাই কি এর কারণ? মধ্যবিত্তের খাদ্যতালিকায় পুষ্টির টান পড়াও এ জন্য দায়ী হতে পারে। আমরা আশা করি, পরবর্তী জরিপে এ বিষয়গুলোও বিশ্লেষিত হবে। বস্তুত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মেধাবী জাতি গঠন করতে হলে প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশুকল্যাণের প্রতি নজর দেওয়ার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে যত তথ্য ও বিশ্লেষণ সুলভ হবে, কাজটি ততই সহজ হবে। জনমিতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক এই জরিপে সে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এক ধাপ অগ্রগতি।
নারীর সন্তান জন্মদানের গড় হার কমে যাওয়ার যে চিত্র জরিপে উঠে এসেছে, সেটাকে আমরা সতর্কতার সঙ্গে দেখতে চাই। অস্বীকার করা যাবে না যে, নারীর কর্মজীবনের সঙ্গে সন্তান জন্মদানের একটি বৈপরীত্য দেখা যায়। উন্নত বিশ্বে জীবনের এই দুই কক্ষের মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধার প্রতি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মনোযোগ ক্রমাগতই বাড়ছে। আমাদের দেশে নারীর কর্মতৎপরতা ক্রমে বাড়ছে। এর প্রভাবেই কি সন্তান জন্মদানের হার কমছে? এটা ঠিক যে, বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি। এই জরিপেও দেখা যাচ্ছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ৫ শতাংশ বেড়েছে। এই হার আরও বৃদ্ধিই কাম্য। কিন্তু সেটা নারীর মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা খর্ব করে কাম্য হতে পারে না। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভাববেন নিশ্চয়ই। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশু শুধু বুকের দুধ খেতে পাওয়ার হার গত চার বছরে বৃদ্ধি পাওয়াকে সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রভাব হিসেবেই দেখতে হবে। তারপরও শিশুপুষ্টির হার কমছে কেন_ খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রথম ছয় মাস-পরবর্তী সময়ে বাজারে সুলভ ও চটকদার খাদ্যের প্রতি নির্ভরতাই কি এর কারণ? মধ্যবিত্তের খাদ্যতালিকায় পুষ্টির টান পড়াও এ জন্য দায়ী হতে পারে। আমরা আশা করি, পরবর্তী জরিপে এ বিষয়গুলোও বিশ্লেষিত হবে। বস্তুত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মেধাবী জাতি গঠন করতে হলে প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশুকল্যাণের প্রতি নজর দেওয়ার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে যত তথ্য ও বিশ্লেষণ সুলভ হবে, কাজটি ততই সহজ হবে। জনমিতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক এই জরিপে সে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এক ধাপ অগ্রগতি।
No comments