গণমাধ্যম-শিল্পীর সম্মান বনাম সম্মানী by সুপা সাদিয়া

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যাশা বর্তমান সরকারের তা থেকে পিছিয়ে রয়েছে সরকারি গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন। এই গণমাধ্যম দুটির অতিসত্বর ডিজিটাল যন্ত্রপাতি স্থাপন ও যুগোপযোগী অনুষ্ঠানমালার উন্নতি, সে সঙ্গে শিল্পীদের সম্মানী দেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা


এক সময় বাংলাদেশ বেতার কিংবা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র উপায়। এর আকর্ষণ কমতে শুরু করে দেশে স্যাটেলাইটের প্রভাবে। তবুও সবাই এ কথা এখনও স্বীকার করবেন যে, সরকারি এই মাধ্যম দুটির আকর্ষণ হয়তো কমেছে, কিন্তু কমেনি জনপ্রিয়তা কিংবা প্রয়োজনীয়তা। এখনও গ্রামাঞ্চলের মানুষ নিয়মিত এই দুটি মাধ্যম থেকেই খুঁজে নেয় তাদের বিনোদন, জেনে নেয় আবহাওয়ার খবর। আর যারা দূর পথ পাড়ি দেয় মাছের ট্রলি নিয়ে তাদের জন্য এখনও আস্থা আর ভরসার নাম বাংলাদেশ বেতার। এক সময় বেতার শিল্পীদের সম্মান ছিল ঈর্ষণীয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনজুড়ে ছিল তাদের বিচরণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জোগানোর কাজ করে যেতেন বাংলাদেশ বেতারের শিল্পীরা। আর তাই এই দুই মাধ্যমের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী কলাকুশলীদের জন্যই টিকে যাচ্ছে বেসরকারি টিভি বা রেডিও। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যারা কাজ করছেন, যাদের কল্যাণে এই মিডিয়াগুলো এত জনপ্রিয় তারা এই বাংলাদেশ বেতার কিংবা বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী। আর সেই মায়ার বাঁধনে এখনও অনেকে ছুটে যান তাদের সেই প্রিয় গণমাধ্যমগুলোতে। কিন্তু এখানে তাদের যথাযথ জীবন-জীবিকা চলে না বলেই তারা ফিরে যাচ্ছেন বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে।
আধুনিকীকরণের অভাব, যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা, কারিগরি দুর্বলতা নানা কারণে এই সরকারি গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা বিলীন হওয়ার পথে। সঙ্গে যুক্ত আছে শিল্পীদের অসম্মানজনক সম্মানী। সম্মানী বৃদ্ধির জন্য শিল্পীরা বহুবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, প্রতিবারই আশ্বাস ছিল শিল্পীদের শেষ ভরসা। তার ওপর গত জুলাই থেকে কণ্ঠভোটে পাসকৃত ২০১০ সালের অর্থবিলে যোগ হয়েছে এই সম্মানীর ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন। এই টাকা সরকারের রাজস্ব শাখায় জমা হতো। সব মিলিয়ে শিল্পীরা অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন, যাদের জীবন নির্বাহ এখনও চলছিল সরকারি এই গণমাধ্যম দুটি থেকে। আর যারা প্রাণের টানে ছুটে যেতেন, তাদের মনে তখন একটাই প্রশ্ন, শখের তোলা কত! একটি প্রতিষ্ঠানে যেতে-আসতে যে খরচ তাও তো আসছে না।
তবে গত ৫ মার্চ সবার জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এলো। মন্ত্রিসভা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত শিল্পীসম্মানীর ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন মওকুফ করার বিধান রেখে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪, সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশোধিত আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চসহ যে কোনো মাধ্যমে কর্মরত শিল্পীরা এ কর মওকুফের সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা অনুষ্ঠান নির্মাতা, ক্রেতা, পরিচালক ও নাট্যকাররাও উৎসে করের আওতামুক্ত হবেন। আসুন একটি সুন্দর উদ্যোগকে জানাই সাধুবাদ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যাশা বর্তমান সরকারের তা থেকে পিছিয়ে রয়েছে সরকারি গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন। এই গণমাধ্যম দুটির অতিসত্বর ডিজিটাল যন্ত্রপাতির স্থাপন ও যুগোপযোগী অনুষ্ঠানমালার উন্নতি, সে সঙ্গে শিল্পীদের সম্মানী দেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা। তবেই দেশের ঐতিহ্যবাহী এই গণমাধ্যম দুটিকে চিরন্তন এবং আকর্ষণীয় করে রাখা সম্ভব।

সুপা সাদিয়া :সংস্কৃতিকর্মী
supasadia@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.