সাদাকালো-সঠিক পরিচালনায় এখনো সম্ভব চিনি উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন by আহমদ রফিক
স্বাধীনতার ঠিক পর পরই চিনিকলসহ উৎপাদনমুখী নানা শিল্প-কারখানা জাতীয়করণের আওতায় আসে। সেটা অবশ্য পাকিস্তানি মালিকানার কারণে। পাকিস্তান আমলের 'পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন' (ইপিআইডিসি) সম্প্রসারিত হয়ে অনেকটা শিল্প করপোরেশন জন্ম নেয়, যেমন রসায়নশিল্প করপোরেশন,
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন ইত্যাদি। উদ্দেশ্য অধিগ্রহণ করা শিল্প-কারখানাগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বেসরকারি খাতে ব্যক্তিগত মালিকানার পাকিস্তানি কম্পানিগুলো রীতিমতো লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। চিনি উৎপাদন কারখানাগুলো এগুলোর অন্যতম। প্রথমদিকে ভালোই চলছিল সরকারি পরিচালনায় একদা বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান। নিজে বিসিআইসির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার দু-একজন কর্মকর্তার কাছে যাতায়াত ছিল। তখন দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত 'শিল্প ভবনে' ছিল সংস্থাগুলোর কার্যালয়। সে সুবাদে জানতে পারি যে চিনি কারখানাগুলো উৎপাদনে ও বাণিজ্যে ভালোই চলছে এবং এ কথাও শুনি যে দেশ চিনি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশ থেকে আর চিনি আমদানি করতে হচ্ছে না।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এ তথ্য নিঃসন্দেহে ছিল শুভ সংবাদের মতো। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, পরিস্থিতির বিপরীত চিত্র আমাদের শিল্প খাতে দুর্দশা তৈরি করে এবং তা তৈরি হয় দেশ ও দশের জন্য। দুর্নীতি ও লুটপাট শিল্প খাতের চিত্রটা পাল্টে দেয়। শিল্প-কারখানাগুলো গুনতে থাকে লোকসান। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার তখন একটা বড় উদাহরণ ছিল 'আদমজী পাটকল'। এসব ইতিহাস সবারই জানা। এর মধ্যেও যে কারণে হোক, চিনি কারখানাগুলো ভালোই চলছিল। পরে সেগুলোও দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার। স্বভাবতই উৎপাদনে ঘাটতি, লোকসান ইত্যাদি। বেশ কিছু সময় পর এমন খবরও কাগজে দেখেছি যে কৃষকের আখ ক্ষেতে শুকাচ্ছে- চিনিকলগুলো নির্বিকার। এসব ঘটনার পেছনে ছিল নানা কীর্তিকলাপ। চিনি উৎপাদন ব্যাহত। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে চিনি। হাতের কাছে পুরনো তথ্যগুলো এখন নেই। থাকলে বিশদ লেখা যেত। কিন্তু তার প্রয়োজন নেই। এতকাল পর চিনিশিল্প, চিনির উৎপাদন ও লাভ-লোকসান নিয়ে লিখতে বসার কারণ আর কিছু নয়, দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন- যে প্রতিবেদনের শিরোনাম '১৫ চিনিকলে লোকসান ৮২৯ কোটি টাকা'। সেই সঙ্গে ছোট টাইপে লেখা- 'বছরে সচল থাকে মাত্র দুই-তিন মাস'। কী চমৎকার ঘটনা। বিস্তারিত বিবরণে তথ্য-উপাত্ত পরিবেশনের জন্য প্রতিবেদক সাংবাদিককে আন্তরিক ধন্যবাদ।
চিনিবিষয়ক এ সংবাদে মনে পড়ে যায় বাহাত্তর-তিয়াত্তরের ঘটনাবলি। নিঃসন্দেহে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। চিনির চাহিদাও বেড়েছে। যুক্তি দেখানো হতে পারে, সে জন্যই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না চিনিকলগুলোর উৎপাদন। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে চিনি। কিন্তু ঘটনা তো আসলে তা নয়। হলেও পাল্টা যুক্তি হিসেবে বলা যায়, দেশের চাহিদা মেটাতে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাঁচাতে নতুন চিনিকল স্থাপন করা হলো না কেন? দেশে আখ চাষের কমতি নেই। চাহিদা থাকলে চাষের মাত্রা বাড়ে। চাহিদা না থাকলে অন্য ফসলের উৎপাদনে মনোযোগী হয়। আসলে সমস্যা অন্যত্র এবং একাধিক। শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দীর্ঘ সময় যুক্ত থাকার সুবাদে লোকসানের নেপথ্য ঘটনা ও শর্ষের ভেতরে ভূতের উপস্থিতির মতো কারণগুলো খুব স্পষ্ট করে জানি এবং এগুলো এত পরিচিত ঘটনা যে তা অনেকেরই জানা। ওই প্রতিবেদনেও সেসব তথ্যের অনেক কিছুই উঠে এসেছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তো মোটা দাগের সমস্যা, যা শিল্পাঙ্গনে লোকসানি কারখানা মাত্রেরই সঙ্গে জড়িত। তবু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে সত্তরের দশকের প্রথমদিককার লাভজনক চিনিকলগুলোর এমন দুরবস্থা কেন হলো, কিভাবে হলো। সাড়ে তিন দশকেরও অধিক সময় কেন এদিকে নজর দেওয়া হয়নি, কেন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কে দেবে এর জবাব! আমি এখনো মনে করি, শিল্প-কারখানা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এখনো দেশের বিদ্যমান চিনিকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। সম্ভব দেশে চিনির চাহিদা পূরণ এবং সম্ভব চিনি আমদানি বন্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো।
কিন্তু তা যে হওয়ার নয়। যেকোনো পণ্য আমদানির সঙ্গে বহু রকম 'ভূতের আছর' রয়েছে। কেন, কিভাবে, কী স্বার্থে তা কমবেশি অনেকেরই জানা- এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এমন ঘটনাও তো একসময়কার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, গুদামে এন্তার পণ্য রয়েছে, তবু তা আমদানি করা হচ্ছে, সরকারি কোষাগারের ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাভ। হোক না তাতে সরকারের ক্ষতি। অনিয়ম, ব্যাপক দুর্নীতি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, লুম্পেন ট্রেড ইউনিয়নগুলোর লোভ-লালসা-অনাচারের মতো ঘটনাগুলো যে সুস্থ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অসুস্থ করে তোলে, লাভজনক কারখানা লোকসানি সংস্থায় পরিণত হয়, শিল্প সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাত্রই তা জানেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোতে ওই ভূতের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। আর তা যদি হয় সর্বোচ্চ স্তরে, তাহলে তো কথাই নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর দুরবস্থার কারণে সত্তরের দশকের শেষদিকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অসুস্থ তথা লোকসানি কারখানাগুলোকে বেসরকারিকরণের। আমার মতে, ওটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ একাধিক। বরং চেষ্টা করা উচিত ছিল- শক্ত হাতে, সৎ পরিচালকের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে চালানো। এটা সম্ভব ছিল। কারণ তখনো সৎ কর্মকর্তার একেবারে অভাব ছিল না। দরকার ছিল সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় বসানো, অর্থাৎ বাছাই করা ব্যক্তির হাতে দায়িত্বভার অর্পণ। তা না করে ঢালাও বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থের অনুকূল হয়নি। প্রথম কথা হলো, সংশ্লিষ্ট লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোই মাত্র বছরকয় আগে যথেষ্ট লাভবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। রাষ্ট্রীয় খাতে এসে মাথাভারী প্রশাসন, মাথাভারী শ্রমিক-কর্মচারী যেমন এগুলোকে লোকসানের খাতে ঠেলে দিয়েছে, তেমনি দিয়েছে বড় কারণ হিসেবে দুর্নীতি। সেটা বন্ধ করা কঠিন ছিল না। তা না করে বেসরকারিকরণের ফল কী দাঁড়াল? বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠান (যা আসলে নানা মাত্রায় জাতীয় সম্পদ) সব সচল থাকেনি। নয়া মালিকের স্বার্থের টানে কতগুলো বেদম মুনাফাবাজির উৎস হয়ে দাঁড়ায়। তাতে সমাজের ক্ষতি, সাধারণ মানুষের ক্ষতি (অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে) ব্যাপক অর্থে জাতীয় ক্ষতি।
আর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারখানা-প্রতিষ্ঠান নয়া মালিকের মর্জিতে বন্ধ করে সেগুলোর জায়গা-জমি বিক্রির মাধ্যমে বিপুল নগদ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরি হলো। এমন একাধিক বেসরকারি করা নামি প্রতিষ্ঠানের কথা আমার জানা। আরো চমৎকার যে বেসরকারিকরণের লেনদেনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কারো কারো লাভের মাত্রাও কম ছিল না। কম ছিল না দু-চারজন আমলার। বিষয়টা স্পর্শকাতর বলে ব্যক্তিগত উদাহরণ টানছি না। কিন্তু জানি, ওই বেসরকারিকরণের পাল্লায় পড়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানেরও বিশেষ ব্যক্তির নির্দেশে গতি হয়েছে বেসরকারি খাতে। নামিদামি তেমন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণের পর তাদের পণ্য বাজারে না দেখতে পেয়ে বড় দুঃখ হয়। বেসরকারিকরণের ফলে ধ্বংস হলো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, নাম না-ই বা বলি। এর কারণে যেমনটা আগে বলেছি, নিশ্চিতই বেসরকারিকরণে- ওই প্রতিবেদনেও একই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানার সংখ্যা ৩০ বছর আগেও ছিল ৮২টি। লোকসানের দায়ভার থেকে রক্ষা পেতে সরকার একে একে ৬৭টি কারখানা বেসরকারি খাতে ন্যস্ত করে। এসব কারখানার মধ্যে বর্তমানে ১১টি সচল রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ।'
পরিবেশিত তথ্যে যদি ভুল না থাকে, তাহলে বলতে হয়, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি। কারণ পরিবেশিত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ৬৭টির মধ্যে ৫৬টিই অচল। এর ফলে যথেষ্ট জাতীয় ক্ষতিই সাধিত হলো বেসরকারি মালিকের সম্পদ তৈরির মাধ্যমে। সে জন্যই শুরুতে লিখেছি, ঢালাও বেসরকারিকরণ নীতি হিসেবে সঠিক ছিল না। ভুল নীতির পরিণাম বিশাল ক্ষতিরই জন্ম দেয়। আমাদের শিল্প খাতের তেমন ঘটনা তা-ই প্রমাণ করেছে। শিল্প খাতের সাধারণ আলোচনা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে চিনি কারখানার প্রসঙ্গ এলে দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও ওই সাধারণ সূত্র সঠিক। বর্তমানে বহু অচল চিনিকলের লোকসানের কারণ বিআইডিএসের মতামত অনুযায়ী বলা যায়, প্রধান কারণ মাথাভারী প্রশাসন, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। সেই সঙ্গে আধুনিকীকরণে অনীহা। আমি সেই সঙ্গে যুক্ত করতে চাই পূর্বোক্ত একটি কারণ শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মে অনীহা, কর্মদক্ষতার অভাব। ট্রেড ইউনিয়ন-দুর্নীতি, প্রশাসন দুর্নীতি যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সর্বনাশের কত বড় কারণ হতে পারে, তার অন্তত একটি বড় প্রমাণ আদমজী জুট মিল। বিষয়টা হচ্ছে আলোচিত। তাই ব্যাখ্যা বা বিশদ বিবরণের প্রয়োজন নেই। চিনিকলগুলোর দুর্গতির কারণ সুস্পষ্টভাবে ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, কাগজে বিভিন্ন সময়ে পড়েছি- লোকসানি চিনিকলের কর্মকর্তা কারো কারো মতে লোকসানের প্রধান কারণ চিনি বিক্রি না হওয়া, কখনো বলা হয়েছে, আখ সরবরাহ ভালো নয় ইত্যাদি। আসলে এসব যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। একবার এমন খবরও পড়েছি যে ক্ষেতে আখ শুকাচ্ছে, কিন্তু মিল মালিক আখ কিনছেন না। কিংবা এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে যে আখের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে চাষি ক্ষেতের আখ ক্ষেতেই পুড়িয়েছেন।
কিন্তু কেন এ ধরনের দুর্মতি চিনিকল মালিকের? আর সে ক্ষেত্রে সরকার কি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল? মনে হয়, না। ব্যবস্থা নিলে এতগুলো মিল লোকসানের মুখোমুখি হতো না কিংবা বন্ধ হতো না। প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে মিল মালিকের কী লাভ? লাভ নিশ্চয়ই আছে, তা না হলে আখ না কিনে মিল অচল করে রাখবে কেন? কারো কারো মতে, অস্বাভাবিক সস্তা দামে আখ কেনার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কৌশল। কিন্তু কৃষক অনেক সময় তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দেন না। মিল মালিকের জন্য এর ফলে সেই আপ্তবাক্য- 'অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।' তবে শিল্পপতিদের কৌশলের শেষ নেই। তাঁরা নানা পথে লোকসান পুষিয়ে নেন। শিল্পঋণের সঙ্গে এ দেশের বাণিজ্যিক মুনাফার, রাবীন্দ্রিক ভাষায় বলা যায়, 'গান্ধর্ব বিয়ে ঘটে গেছে।' কাজেই অসুবিধা কোথায়?
তা ছাড়া উৎপাদিত চিনির পাইকারি মূল্য নির্ধারণও অনেক সময় চিনি অবিক্রীত থাকার কারণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব। সমন্বয়ের অভাব মন্ত্রণালয়, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। প্রসঙ্গত একটা কথা বলি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ক্রেতাদের মধ্যে সাদা, শুকনো বিদেশি চিনির চেয়ে সরস, মোটা দানার দেশি চিনির কদর বেশি এবং তা মূলত অধিক মিষ্টত্বের কারণে। তবু গুদামে চিনি পড়ে থাকে, থেকে থেকে নষ্ট হয় এবং সঠিক দামে বাজারজাত করার ব্যবস্থা হয় না। নানা উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে এর পেছনে। সে জায়গাগুলোতে আঘাত করা দরকার। এ আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার দাবি রাখে। তবু স্থানাভাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে সমাজবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী বন্ধুস্থানীয় বর্তমান শিল্পমন্ত্রীকে বলি, অন্তত চিনিশিল্পের সমস্যা একেবারেই অসমাধানযোগ্য নয়। দরকার এ ক্ষেত্রে সঠিক শিল্পনীতি নির্ধারণ এবং শক্ত হাতে তা বাস্তবায়ন। মিল মালিক বা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী শ্রেণীর স্বার্থের কাছে জিম্মি হলে কোনো দিনই চিনিশিল্পের দুর্গতি কাটবে না এবং ক্রেতাদের ভোগান্তি দূর হবে না। সে ক্ষেত্রে আর গুড় ব্যবসায়ীর কাছে আখ বিক্রি করতে থাকবে, আখের চাষ কমিয়ে দেবে এবং চিনিকলের যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে মণ দরে বা টন দরে বিক্রির অবস্থায় পেঁৗছবে। শিল্পায়নের এমন দুরবস্থা কারো কাম্য হতে পারে না।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক,
প্রাবন্ধিক ও কবি
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এ তথ্য নিঃসন্দেহে ছিল শুভ সংবাদের মতো। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, পরিস্থিতির বিপরীত চিত্র আমাদের শিল্প খাতে দুর্দশা তৈরি করে এবং তা তৈরি হয় দেশ ও দশের জন্য। দুর্নীতি ও লুটপাট শিল্প খাতের চিত্রটা পাল্টে দেয়। শিল্প-কারখানাগুলো গুনতে থাকে লোকসান। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার তখন একটা বড় উদাহরণ ছিল 'আদমজী পাটকল'। এসব ইতিহাস সবারই জানা। এর মধ্যেও যে কারণে হোক, চিনি কারখানাগুলো ভালোই চলছিল। পরে সেগুলোও দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার। স্বভাবতই উৎপাদনে ঘাটতি, লোকসান ইত্যাদি। বেশ কিছু সময় পর এমন খবরও কাগজে দেখেছি যে কৃষকের আখ ক্ষেতে শুকাচ্ছে- চিনিকলগুলো নির্বিকার। এসব ঘটনার পেছনে ছিল নানা কীর্তিকলাপ। চিনি উৎপাদন ব্যাহত। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে চিনি। হাতের কাছে পুরনো তথ্যগুলো এখন নেই। থাকলে বিশদ লেখা যেত। কিন্তু তার প্রয়োজন নেই। এতকাল পর চিনিশিল্প, চিনির উৎপাদন ও লাভ-লোকসান নিয়ে লিখতে বসার কারণ আর কিছু নয়, দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন- যে প্রতিবেদনের শিরোনাম '১৫ চিনিকলে লোকসান ৮২৯ কোটি টাকা'। সেই সঙ্গে ছোট টাইপে লেখা- 'বছরে সচল থাকে মাত্র দুই-তিন মাস'। কী চমৎকার ঘটনা। বিস্তারিত বিবরণে তথ্য-উপাত্ত পরিবেশনের জন্য প্রতিবেদক সাংবাদিককে আন্তরিক ধন্যবাদ।
চিনিবিষয়ক এ সংবাদে মনে পড়ে যায় বাহাত্তর-তিয়াত্তরের ঘটনাবলি। নিঃসন্দেহে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। চিনির চাহিদাও বেড়েছে। যুক্তি দেখানো হতে পারে, সে জন্যই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না চিনিকলগুলোর উৎপাদন। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে চিনি। কিন্তু ঘটনা তো আসলে তা নয়। হলেও পাল্টা যুক্তি হিসেবে বলা যায়, দেশের চাহিদা মেটাতে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাঁচাতে নতুন চিনিকল স্থাপন করা হলো না কেন? দেশে আখ চাষের কমতি নেই। চাহিদা থাকলে চাষের মাত্রা বাড়ে। চাহিদা না থাকলে অন্য ফসলের উৎপাদনে মনোযোগী হয়। আসলে সমস্যা অন্যত্র এবং একাধিক। শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দীর্ঘ সময় যুক্ত থাকার সুবাদে লোকসানের নেপথ্য ঘটনা ও শর্ষের ভেতরে ভূতের উপস্থিতির মতো কারণগুলো খুব স্পষ্ট করে জানি এবং এগুলো এত পরিচিত ঘটনা যে তা অনেকেরই জানা। ওই প্রতিবেদনেও সেসব তথ্যের অনেক কিছুই উঠে এসেছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তো মোটা দাগের সমস্যা, যা শিল্পাঙ্গনে লোকসানি কারখানা মাত্রেরই সঙ্গে জড়িত। তবু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে সত্তরের দশকের প্রথমদিককার লাভজনক চিনিকলগুলোর এমন দুরবস্থা কেন হলো, কিভাবে হলো। সাড়ে তিন দশকেরও অধিক সময় কেন এদিকে নজর দেওয়া হয়নি, কেন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কে দেবে এর জবাব! আমি এখনো মনে করি, শিল্প-কারখানা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এখনো দেশের বিদ্যমান চিনিকলগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। সম্ভব দেশে চিনির চাহিদা পূরণ এবং সম্ভব চিনি আমদানি বন্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো।
কিন্তু তা যে হওয়ার নয়। যেকোনো পণ্য আমদানির সঙ্গে বহু রকম 'ভূতের আছর' রয়েছে। কেন, কিভাবে, কী স্বার্থে তা কমবেশি অনেকেরই জানা- এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এমন ঘটনাও তো একসময়কার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, গুদামে এন্তার পণ্য রয়েছে, তবু তা আমদানি করা হচ্ছে, সরকারি কোষাগারের ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাভ। হোক না তাতে সরকারের ক্ষতি। অনিয়ম, ব্যাপক দুর্নীতি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, লুম্পেন ট্রেড ইউনিয়নগুলোর লোভ-লালসা-অনাচারের মতো ঘটনাগুলো যে সুস্থ শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অসুস্থ করে তোলে, লাভজনক কারখানা লোকসানি সংস্থায় পরিণত হয়, শিল্প সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাত্রই তা জানেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোতে ওই ভূতের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। আর তা যদি হয় সর্বোচ্চ স্তরে, তাহলে তো কথাই নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর দুরবস্থার কারণে সত্তরের দশকের শেষদিকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অসুস্থ তথা লোকসানি কারখানাগুলোকে বেসরকারিকরণের। আমার মতে, ওটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ একাধিক। বরং চেষ্টা করা উচিত ছিল- শক্ত হাতে, সৎ পরিচালকের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে চালানো। এটা সম্ভব ছিল। কারণ তখনো সৎ কর্মকর্তার একেবারে অভাব ছিল না। দরকার ছিল সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় বসানো, অর্থাৎ বাছাই করা ব্যক্তির হাতে দায়িত্বভার অর্পণ। তা না করে ঢালাও বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থের অনুকূল হয়নি। প্রথম কথা হলো, সংশ্লিষ্ট লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোই মাত্র বছরকয় আগে যথেষ্ট লাভবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। রাষ্ট্রীয় খাতে এসে মাথাভারী প্রশাসন, মাথাভারী শ্রমিক-কর্মচারী যেমন এগুলোকে লোকসানের খাতে ঠেলে দিয়েছে, তেমনি দিয়েছে বড় কারণ হিসেবে দুর্নীতি। সেটা বন্ধ করা কঠিন ছিল না। তা না করে বেসরকারিকরণের ফল কী দাঁড়াল? বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠান (যা আসলে নানা মাত্রায় জাতীয় সম্পদ) সব সচল থাকেনি। নয়া মালিকের স্বার্থের টানে কতগুলো বেদম মুনাফাবাজির উৎস হয়ে দাঁড়ায়। তাতে সমাজের ক্ষতি, সাধারণ মানুষের ক্ষতি (অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে) ব্যাপক অর্থে জাতীয় ক্ষতি।
আর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারখানা-প্রতিষ্ঠান নয়া মালিকের মর্জিতে বন্ধ করে সেগুলোর জায়গা-জমি বিক্রির মাধ্যমে বিপুল নগদ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরি হলো। এমন একাধিক বেসরকারি করা নামি প্রতিষ্ঠানের কথা আমার জানা। আরো চমৎকার যে বেসরকারিকরণের লেনদেনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কারো কারো লাভের মাত্রাও কম ছিল না। কম ছিল না দু-চারজন আমলার। বিষয়টা স্পর্শকাতর বলে ব্যক্তিগত উদাহরণ টানছি না। কিন্তু জানি, ওই বেসরকারিকরণের পাল্লায় পড়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানেরও বিশেষ ব্যক্তির নির্দেশে গতি হয়েছে বেসরকারি খাতে। নামিদামি তেমন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণের পর তাদের পণ্য বাজারে না দেখতে পেয়ে বড় দুঃখ হয়। বেসরকারিকরণের ফলে ধ্বংস হলো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, নাম না-ই বা বলি। এর কারণে যেমনটা আগে বলেছি, নিশ্চিতই বেসরকারিকরণে- ওই প্রতিবেদনেও একই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানার সংখ্যা ৩০ বছর আগেও ছিল ৮২টি। লোকসানের দায়ভার থেকে রক্ষা পেতে সরকার একে একে ৬৭টি কারখানা বেসরকারি খাতে ন্যস্ত করে। এসব কারখানার মধ্যে বর্তমানে ১১টি সচল রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ।'
পরিবেশিত তথ্যে যদি ভুল না থাকে, তাহলে বলতে হয়, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়নি। কারণ পরিবেশিত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ৬৭টির মধ্যে ৫৬টিই অচল। এর ফলে যথেষ্ট জাতীয় ক্ষতিই সাধিত হলো বেসরকারি মালিকের সম্পদ তৈরির মাধ্যমে। সে জন্যই শুরুতে লিখেছি, ঢালাও বেসরকারিকরণ নীতি হিসেবে সঠিক ছিল না। ভুল নীতির পরিণাম বিশাল ক্ষতিরই জন্ম দেয়। আমাদের শিল্প খাতের তেমন ঘটনা তা-ই প্রমাণ করেছে। শিল্প খাতের সাধারণ আলোচনা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে চিনি কারখানার প্রসঙ্গ এলে দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও ওই সাধারণ সূত্র সঠিক। বর্তমানে বহু অচল চিনিকলের লোকসানের কারণ বিআইডিএসের মতামত অনুযায়ী বলা যায়, প্রধান কারণ মাথাভারী প্রশাসন, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। সেই সঙ্গে আধুনিকীকরণে অনীহা। আমি সেই সঙ্গে যুক্ত করতে চাই পূর্বোক্ত একটি কারণ শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মে অনীহা, কর্মদক্ষতার অভাব। ট্রেড ইউনিয়ন-দুর্নীতি, প্রশাসন দুর্নীতি যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সর্বনাশের কত বড় কারণ হতে পারে, তার অন্তত একটি বড় প্রমাণ আদমজী জুট মিল। বিষয়টা হচ্ছে আলোচিত। তাই ব্যাখ্যা বা বিশদ বিবরণের প্রয়োজন নেই। চিনিকলগুলোর দুর্গতির কারণ সুস্পষ্টভাবে ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, কাগজে বিভিন্ন সময়ে পড়েছি- লোকসানি চিনিকলের কর্মকর্তা কারো কারো মতে লোকসানের প্রধান কারণ চিনি বিক্রি না হওয়া, কখনো বলা হয়েছে, আখ সরবরাহ ভালো নয় ইত্যাদি। আসলে এসব যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। একবার এমন খবরও পড়েছি যে ক্ষেতে আখ শুকাচ্ছে, কিন্তু মিল মালিক আখ কিনছেন না। কিংবা এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে যে আখের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে চাষি ক্ষেতের আখ ক্ষেতেই পুড়িয়েছেন।
কিন্তু কেন এ ধরনের দুর্মতি চিনিকল মালিকের? আর সে ক্ষেত্রে সরকার কি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল? মনে হয়, না। ব্যবস্থা নিলে এতগুলো মিল লোকসানের মুখোমুখি হতো না কিংবা বন্ধ হতো না। প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে মিল মালিকের কী লাভ? লাভ নিশ্চয়ই আছে, তা না হলে আখ না কিনে মিল অচল করে রাখবে কেন? কারো কারো মতে, অস্বাভাবিক সস্তা দামে আখ কেনার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কৌশল। কিন্তু কৃষক অনেক সময় তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দেন না। মিল মালিকের জন্য এর ফলে সেই আপ্তবাক্য- 'অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।' তবে শিল্পপতিদের কৌশলের শেষ নেই। তাঁরা নানা পথে লোকসান পুষিয়ে নেন। শিল্পঋণের সঙ্গে এ দেশের বাণিজ্যিক মুনাফার, রাবীন্দ্রিক ভাষায় বলা যায়, 'গান্ধর্ব বিয়ে ঘটে গেছে।' কাজেই অসুবিধা কোথায়?
তা ছাড়া উৎপাদিত চিনির পাইকারি মূল্য নির্ধারণও অনেক সময় চিনি অবিক্রীত থাকার কারণ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব। সমন্বয়ের অভাব মন্ত্রণালয়, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। প্রসঙ্গত একটা কথা বলি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, ক্রেতাদের মধ্যে সাদা, শুকনো বিদেশি চিনির চেয়ে সরস, মোটা দানার দেশি চিনির কদর বেশি এবং তা মূলত অধিক মিষ্টত্বের কারণে। তবু গুদামে চিনি পড়ে থাকে, থেকে থেকে নষ্ট হয় এবং সঠিক দামে বাজারজাত করার ব্যবস্থা হয় না। নানা উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে এর পেছনে। সে জায়গাগুলোতে আঘাত করা দরকার। এ আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার দাবি রাখে। তবু স্থানাভাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে সমাজবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী বন্ধুস্থানীয় বর্তমান শিল্পমন্ত্রীকে বলি, অন্তত চিনিশিল্পের সমস্যা একেবারেই অসমাধানযোগ্য নয়। দরকার এ ক্ষেত্রে সঠিক শিল্পনীতি নির্ধারণ এবং শক্ত হাতে তা বাস্তবায়ন। মিল মালিক বা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী শ্রেণীর স্বার্থের কাছে জিম্মি হলে কোনো দিনই চিনিশিল্পের দুর্গতি কাটবে না এবং ক্রেতাদের ভোগান্তি দূর হবে না। সে ক্ষেত্রে আর গুড় ব্যবসায়ীর কাছে আখ বিক্রি করতে থাকবে, আখের চাষ কমিয়ে দেবে এবং চিনিকলের যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে মণ দরে বা টন দরে বিক্রির অবস্থায় পেঁৗছবে। শিল্পায়নের এমন দুরবস্থা কারো কাম্য হতে পারে না।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক,
প্রাবন্ধিক ও কবি
No comments