সাধারণ কাজ নিয়েও ছুটতে হয় ঢাকায়ঃ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি
রাজধানী ঢাকা শুধু বাংলাদেশের অভিভাবক নয়, সব কাজের কেন্দ্রবিন্দুও বটে। এখান থেকেই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রিত-পরিচালিত হয়। সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের নাভিমূল হচ্ছে ঢাকা। গোটা দেশকে তাকিয়ে থাকতে হয় ঢাকার দিকে।
পৃথিবীর খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে রাজধানীনির্ভরতা এতটা প্রকট। ফলে শুধু কাজের খোঁজেই প্রতিদিন ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না; ছোটখাটো কাজের সুরাহা করতে রাজধানীতে ছুটে আসতে হচ্ছে হাজার হাজার লোককে। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যত এখন পর্যন্ত তার কিছুই কার্যকর হয়নি। বিভাগ ও জেলা সদর দফতরের কর্তৃত্ব না থাকায় স্থানীয় প্রশাসন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো শক্তিই সঞ্চয় করতে পারছে না। প্রতিটি মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদফতর, পরিদফতর, ব্যুরো, উইং ও শাখাগুলোই বেশিরভাগ প্রশাসনিক কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোর সবই প্রায় অবস্থিত রাজধানী শহরে। এতে স্বভাবতই জেলা ও বিভাগীয় হেডকোয়ার্টারগুলো ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনকে অতিসাধারণ কাজ নিয়ে নানা বিড়ম্বনা সয়ে আসতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে প্রধানত জেলা সদর দফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা না দেয়ার ফলে; অর্থাত্ যথাযথভাবে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার কারণে।
এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে সব সরকারই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর তো হয়ইনি, বরং কার্যকর হবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন সবকিছুই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ঢাকা শহরে। একথা এখন সাধারণ মানুষও বুঝতে সক্ষম যে, দেশের সর্বত্র সুষম উন্নয়নের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক বিকন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হলে স্বভাবতই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঢাকায় জড়ো হয়ে না থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী হবেন। এতে প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর যে জনসংখ্যার বাড়তি চাপ তাও কমে আসত অনেকখানি। কারণ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারলে ঢাকা ছুটে আসার দরকার পড়ে না। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারপ্রধানও একই সুরে কথা বলছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে ঢাকার বাইরের মানুষের ভোগান্তি রয়ে গেছে আগের স্তরেই। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, বিদেশে পাঠানোর জন্য একটি কাবিননামা সত্যায়িত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে আসতে হচ্ছে একজন গৃহবধূকে। একই অবস্থা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল সার্টিফিকেট ইত্যাদি সত্যায়নের বেলায়ও। দেশে যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার সবই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ঢাকা থেকে। একজন শিক্ষককে এমপিওভুক্তি থেকে অবসর পর্যন্ত সব কাজের জন্য ধরনা দিতে হয় ঢাকার কার্যালয়ে। শিক্ষার্থীকে সনদপত্র সত্যায়িত করতে হয় ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সহকারী সচিবকে দিয়ে। অথচ সহকারী সচিব পর্যায়ের উপজেলা কর্মকর্তাকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়।
উপজেলা ব্যবস্থা প্রণয়নের পর আশা করা গিয়েছিল, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য ধাপ হবে এটি। কিন্তু যেসব প্রয়োজনীয় কাজের জন্য লোকজনকে ঢাকার বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ছুটে আসতে হয়, সেগুলোর দায়িত্ব উপজেলা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। দেশে নতুন বিভাগ করার সময়ও প্রত্যাশা ছিল, এতে রাজধানীনির্ভরতা কমবে। তুলনামূলকভাবে কম খরচে, কম সময়ে মানুষ বিভাগীয় সদর দফতর থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা গেল, নতুন বিভাগ করা একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পর্যায়েই থেকে গেছে। উন্নয়ন তথা প্রশাসনিক উন্নয়ন বলতে যা বোঝায়, তা হয়নি। ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ ঘোষণার পর এখনও কাজের জন্য বরিশালবাসীকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে ঘোষিত সিলেট বিভাগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বর্তমান সরকার সম্প্রতি রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিভাগ ঘোষণা বিকেন্দ্রীকরণের একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। নতুন বিভাগ তখনই বিকেন্দ্রীকরণের প্রকৃত রূপ লাভ করবে, যখন তা রাজধানীর মতোই প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের পর্যায়ে উন্নীত হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। শুধু কেন্দ্রের নির্দেশনামা বহন করছে বিভাগীয় প্রশাসন। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এখন আর শুধু বিশেষজ্ঞদের উপলব্ধি এবং সরকারের আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বস্তুত তা পরিণত হয়েছে গণদাবিতে। মানুষ ছোট ছোট কাজের জন্য ঢাকামুখী হওয়ায় ভোগান্তি থেকে বাঁচতেই বিভাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু বিভাগ হলেই যে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হয়ে যায় না, এখন তারা তা টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা, রাজধানীর মতো বিভাগগুলোকে সব প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হোক। সুষম উন্নয়ন, সুষম বণ্টন এবং জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে যথাসম্ভব শিগগির এ কাজটি সম্পন্ন করবে সরকার—এটাই কাম্য।
এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে সব সরকারই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর তো হয়ইনি, বরং কার্যকর হবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন সবকিছুই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ঢাকা শহরে। একথা এখন সাধারণ মানুষও বুঝতে সক্ষম যে, দেশের সর্বত্র সুষম উন্নয়নের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক বিকন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হলে স্বভাবতই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঢাকায় জড়ো হয়ে না থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী হবেন। এতে প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর যে জনসংখ্যার বাড়তি চাপ তাও কমে আসত অনেকখানি। কারণ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারলে ঢাকা ছুটে আসার দরকার পড়ে না। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারপ্রধানও একই সুরে কথা বলছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে ঢাকার বাইরের মানুষের ভোগান্তি রয়ে গেছে আগের স্তরেই। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, বিদেশে পাঠানোর জন্য একটি কাবিননামা সত্যায়িত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে আসতে হচ্ছে একজন গৃহবধূকে। একই অবস্থা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল সার্টিফিকেট ইত্যাদি সত্যায়নের বেলায়ও। দেশে যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার সবই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ঢাকা থেকে। একজন শিক্ষককে এমপিওভুক্তি থেকে অবসর পর্যন্ত সব কাজের জন্য ধরনা দিতে হয় ঢাকার কার্যালয়ে। শিক্ষার্থীকে সনদপত্র সত্যায়িত করতে হয় ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সহকারী সচিবকে দিয়ে। অথচ সহকারী সচিব পর্যায়ের উপজেলা কর্মকর্তাকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়।
উপজেলা ব্যবস্থা প্রণয়নের পর আশা করা গিয়েছিল, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য ধাপ হবে এটি। কিন্তু যেসব প্রয়োজনীয় কাজের জন্য লোকজনকে ঢাকার বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ছুটে আসতে হয়, সেগুলোর দায়িত্ব উপজেলা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। দেশে নতুন বিভাগ করার সময়ও প্রত্যাশা ছিল, এতে রাজধানীনির্ভরতা কমবে। তুলনামূলকভাবে কম খরচে, কম সময়ে মানুষ বিভাগীয় সদর দফতর থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা গেল, নতুন বিভাগ করা একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পর্যায়েই থেকে গেছে। উন্নয়ন তথা প্রশাসনিক উন্নয়ন বলতে যা বোঝায়, তা হয়নি। ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ ঘোষণার পর এখনও কাজের জন্য বরিশালবাসীকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে ঘোষিত সিলেট বিভাগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বর্তমান সরকার সম্প্রতি রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিভাগ ঘোষণা বিকেন্দ্রীকরণের একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। নতুন বিভাগ তখনই বিকেন্দ্রীকরণের প্রকৃত রূপ লাভ করবে, যখন তা রাজধানীর মতোই প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের পর্যায়ে উন্নীত হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। শুধু কেন্দ্রের নির্দেশনামা বহন করছে বিভাগীয় প্রশাসন। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এখন আর শুধু বিশেষজ্ঞদের উপলব্ধি এবং সরকারের আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বস্তুত তা পরিণত হয়েছে গণদাবিতে। মানুষ ছোট ছোট কাজের জন্য ঢাকামুখী হওয়ায় ভোগান্তি থেকে বাঁচতেই বিভাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু বিভাগ হলেই যে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হয়ে যায় না, এখন তারা তা টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। এ অবস্থায় সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা, রাজধানীর মতো বিভাগগুলোকে সব প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হোক। সুষম উন্নয়ন, সুষম বণ্টন এবং জনগণের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে যথাসম্ভব শিগগির এ কাজটি সম্পন্ন করবে সরকার—এটাই কাম্য।
No comments