পবিত্র কোরআনের আলো-জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনদের পরীক্ষা নেন
১৮৫. কুল্লু নাফছিন যা-য়িক্বাতুল মাওত; ওয়াইন্নামা- তুওয়াফ্ফাওনা উজূরাকুম ইয়াওমাল কি্বইয়া-মাতি; ফামান যুহযিহা আ'নি ন্না-রি ওয়াউদ্খিলাল জান্নাতা ফাক্বাদ যুহযিহা আ'নি ন্না-রি ওয়াউদখিলাল জান্নাতা ফাক্বাদ ফা-যা; ওয়ামাল হাইয়া-তুদ্ দুনইয়া- ইল্লা- মাতা-উ'ল গুরূর।
১৮৬. লাতুবলাউন্না ফী আমওয়া-লিকুম ওয়াআনফুছিকুম; ওয়ালাতাছমাউ'ন্না মিনা ল্লাযীনা ঊতুল কিতা-বা মিন ক্বাবলিকুম ওয়ামিনা ল্লাযীনা আশরাকূ আযান কাছীরা; ওয়াইন তাসবিরূ ওয়াতাত্তাক্বূ ফাইন্না যা-লিকা মিন আ'যমিল উমূর। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫-১৮৬]
অনুবাদ : ১৮৫. প্রত্যেক প্রাণীরই মৃত্যু আছে, তোমরা জীবনভর যা অর্জন করবে, রোজ কিয়ামতে এর প্রতিফল আদায় করে দেওয়া হবে। যাকে আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই হবে সফল। এই পৃথিবীর জীবন বিভ্রান্তির উপকরণ মাত্র। ১৮৬. হে ইমানদাররা, নিশ্চয়ই জানমালের মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে। তোমরা নিশ্চয়ই অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে আহলে কিতাব ও মুশরেকদের কাছ থেকে। তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও, তবে তা অবশ্যই বড় ধরনের হিম্মতের কাজ।
ব্যাখ্যা : ১৮৫ নম্বর আয়াতে মানুষের অনিবার্য পরিণতির কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে মৃত্যুর পরে। মানুষ জীবনে যা অর্জন করবে, পরকালে তারই ফল ভোগ করবে। এ প্রক্রিয়ায় যারা দোজখের আগুন থেকে বাঁচবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারাই সফলকাম। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, এই পৃথিবীর জীবন বিভ্রান্তির উপকরণ মাত্র। এখানে দৃশ্যত একটা স্ববিরোধ কারো কারো নজরে পড়তে পারে। এই পৃথিবীর জীবনকে বলা হয়েছে বিভ্রান্তির উপকরণ অর্থাৎ 'মায়া'। 'মায়াবাদ' বলে দার্শনিক মতবাদেরও জন্ম হয়েছে পরে। এই আয়াতের শেষাংশের শাব্দিক অর্থ করলে, পৃথিবীর জীবন মায়া বা ছলনা বলেই প্রতিভাত হতে পারে। কিন্তু এই আয়াতের মধ্যেই বলা হয়েছে, এই পৃথিবীতে জীবনভর মানুষ যা অর্জন করবে_এর প্রতিফলই রোজ কিয়ামতে লাভ করবে। এর অর্থ হলো এই পৃথিবীর জীবন মায়া নয়, বরং কর্মক্ষেত্র। আসলে এই পৃথিবীর জীবনই প্রকৃত জীবন। এর ফলে সঠিক দায়িত্ব পালন করার নির্দেশই আল্লাহ মানুষকে দিচ্ছেন।
১৮৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের ধৈর্যধারণ করতে এবং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হতে উপদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাদের জানমালের ক্ষতির সম্মুখীন করে পরীক্ষা করেন। এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন, অনুরূপ পরীক্ষার মুখোমুখি তারা হয়েছিল ওহুদের যুদ্ধের সময়। এই আয়াতের আগের ৮১ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ইহুদিদের দৃষ্টতাপূর্ণ কথার সূত্র ধরেই বলা হয়েছে, তোমরা নিশ্চয়ই অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনতে আহলে কিতাব ও মুশরেকদের কাছ থেকে। এই আয়াতের শানেনুজুলে বিভিন্ন ইহুদি ও মুশরেকের দৃষ্টতাপূর্ণ কথার বর্ণনা আছে। আরো বর্ণিত আছে, কাদ্ব ইবনে আশরাফ নামে এক ইহুদি রাসুল (সা.) ও সাহাবিদের সম্পর্কে নিন্দাসূচক কবিতা আবৃত্তি করত_এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়। এই আয়াতে মুমিনদের ধৈর্যশীল ও দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এ দুইটি গুণ মানুষের শ্রেষ্ঠ ও তাৎপর্যপূর্ণ গুণ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments