রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়ন by অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার
নারীর ক্ষমতায়ন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুরুষের তুলনায় নারীদের সার্বিক অংশগ্রহণ নগণ্য হলেও এ সংখ্যা দিন দিন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন জোট ও দলের মোট ৫৫ জন নারী সরাসরি ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়লাভ করেছেন ১৯ জন। বেশকিছু দেশে সরকারপ্রধান কিংবা প্রধান বিরোধী দলের প্রধান নারী। আমাদের দেশে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই নারী, তথাপিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অবস্থান আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতিতে পশ্চাত্পদ। তারপরও বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে সরকারি ও বিরোধী দু’দলের প্রধান নারী।
আন্তঃপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৯১ সালের পর থেকে বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোতে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার শতকরা ১৩ থেকে ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে যা ক্ষমতায়নের প্রশ্নে একটি বিশাল সমস্যা। ভারতের (নিম্নকক্ষ) মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩, যার মধ্যে নারী আসন সংখ্যা ৩৯ যার শতকরা হিসাব ৭%। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মোট আসন সংখ্যা ২২৫, যেখানে নারী আসন ১১ ও যার শতকরা হিসাব ৪.৮০%। অন্যদিকে আমাদের দেশে নারীর অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। সাধারণ আসনে কতজন নারী প্রতিনিধি থাকলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে সে সম্পর্কে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের একটি সংগঠন টঘ উরারংরড়হ ভড়ত্ অফাধহপবসবহঃ ড়ভ ড়িসবহ (টঘউঅড) কর্তৃক সম্পাদিত সমীক্ষায় উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। ওই সমীক্ষায় টঘউঅড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সরকার, রাজনৈতিক দল ও জাতীয় সংসদে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হলে নারীর সমস্যা ও অগ্রগণ্যতা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যথাযোগ্য গুরুত্ব, বিবেচনা ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে অর্থাত্ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে তাদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রতিনিধি অপরিহার্য। শতাংশের এই হিসাবকে বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে নারী সদস্য যেদিন নির্বাচিত হতে পারবে সেদিন নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সৃষ্টি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ক্ষমতায়নের এই কঠিন পথকে সহজ করতে হলে সরকারকে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্দেশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে বিধান জারি করতে হবে যে, জাতীয় সংসদের ১০০টি আসনে কেবল নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোতে ওইসব উল্লিখিত আসনগুলো নারীদের মনোনয়ন দিতে পারবে, পুরুষদের নয়। অবশিষ্ট ২০০ আসনে নারী-পুরুষ উভয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশন হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বলা যায়, নব্বইয়ের দশকে নারী প্রার্থিতার সংখ্যা আশির দশকের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ এবং জুন ১৯৯৬ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারীর সংখ্যা এবং প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংখ্যাও প্রায় সমপর্যায়ে ছিল, যদিও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তা প্রার্থীর সংখ্যার তুলনায় বেশ নগণ্য। ১৯৯১-এর নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ১.৫ শতাংশ ছিল, জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৯ শতাংশে। অক্টোবর ২০০১ সালে এর অনুপাত প্রায় একই, অর্থাত্ ২ শতাংশে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫৫ জন নারী অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় জাতীয় সংসদে ও মন্ত্রিপরিষদে অংশগ্রহণ এবং আইন প্রণয়ন ও সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় ও কার্যকর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রয়োগ। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধান নারী হওয়ার পরও নারীর ক্ষমতায়ন সুদূরপরাহত। তার অন্যতম কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। নারী হোন বা পুরুষ হোন, প্রধানমন্ত্রীকে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কাজ করতে হয় সেটি পুরুষ প্রধান ও পুরুষের প্রতি পক্ষপাতমূলক এবং নারীর বিপক্ষে বৈষম্যমূলক। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নারী হলেও পুরুষতন্ত্রকে মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না তার জন্য।
নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বাস্তব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মূল দায়িত্ব সরকারের। একটি সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এ লক্ষ্যে নিচে কিছু সম্ভাব্য সুপারিশমালা উল্লেখ করা হলো যথা—১. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ২. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, ৩. সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা, ৪. নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ৫. নারী ও জেন্ডার ক্ষমতাবিষয়ক গবেষণা, ৬. নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা, ৭. নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, ৮. নারীর অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের জন্য জেলা পর্যায়ে প্রশাসন ও জেলা এবং উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা ইত্যাদি।
পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক গঠিত নারী উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করতে হবে যা নারী উন্নয়ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে নারী অগ্রগতির জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করতে পরামর্শ প্রদান করবে। এছাড়াও নারী উন্নয়নের জন্য ও ক্ষমতায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জাতীয় কর্মসূচিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা হতে নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর বক্তব্য ও মন্তব্য অপসারণ করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় কার্যনির্বাহী আইন ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, নীতি নির্ধারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দের সচেতনতা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ক অধিকার ও নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াবলী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দরকারি বিষয় হলো নারীদের ওপর অব্যাহত ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের বোঝা ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অসমতা, অপর্যাপ্ততা এবং অসম প্রবেশাধিকার দূর করা। সব প্রকার যোগাযোগ বিশেষভাবে প্রচার মাধ্যমে নারীর সনাতনী প্রচার, প্রবেশ অধিকার ও অংশগ্রহণের অসমতার অবসান। পাশাপাশি নারী উন্নয়ন সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং নারী ও শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণার জন্য উত্সাহিত করতে হবে এবং পৃথকভাবে গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
ই-মেইল : advasagar29@gmail.com
আন্তঃপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৯১ সালের পর থেকে বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোতে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার শতকরা ১৩ থেকে ১০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে যা ক্ষমতায়নের প্রশ্নে একটি বিশাল সমস্যা। ভারতের (নিম্নকক্ষ) মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩, যার মধ্যে নারী আসন সংখ্যা ৩৯ যার শতকরা হিসাব ৭%। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মোট আসন সংখ্যা ২২৫, যেখানে নারী আসন ১১ ও যার শতকরা হিসাব ৪.৮০%। অন্যদিকে আমাদের দেশে নারীর অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। সাধারণ আসনে কতজন নারী প্রতিনিধি থাকলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে সে সম্পর্কে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের একটি সংগঠন টঘ উরারংরড়হ ভড়ত্ অফাধহপবসবহঃ ড়ভ ড়িসবহ (টঘউঅড) কর্তৃক সম্পাদিত সমীক্ষায় উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। ওই সমীক্ষায় টঘউঅড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সরকার, রাজনৈতিক দল ও জাতীয় সংসদে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হলে নারীর সমস্যা ও অগ্রগণ্যতা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যথাযোগ্য গুরুত্ব, বিবেচনা ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে অর্থাত্ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে তাদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রতিনিধি অপরিহার্য। শতাংশের এই হিসাবকে বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে নারী সদস্য যেদিন নির্বাচিত হতে পারবে সেদিন নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সৃষ্টি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ক্ষমতায়নের এই কঠিন পথকে সহজ করতে হলে সরকারকে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্দেশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে বিধান জারি করতে হবে যে, জাতীয় সংসদের ১০০টি আসনে কেবল নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোতে ওইসব উল্লিখিত আসনগুলো নারীদের মনোনয়ন দিতে পারবে, পুরুষদের নয়। অবশিষ্ট ২০০ আসনে নারী-পুরুষ উভয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশন হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বলা যায়, নব্বইয়ের দশকে নারী প্রার্থিতার সংখ্যা আশির দশকের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ এবং জুন ১৯৯৬ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারীর সংখ্যা এবং প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংখ্যাও প্রায় সমপর্যায়ে ছিল, যদিও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তা প্রার্থীর সংখ্যার তুলনায় বেশ নগণ্য। ১৯৯১-এর নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ১.৫ শতাংশ ছিল, জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৯ শতাংশে। অক্টোবর ২০০১ সালে এর অনুপাত প্রায় একই, অর্থাত্ ২ শতাংশে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫৫ জন নারী অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় জাতীয় সংসদে ও মন্ত্রিপরিষদে অংশগ্রহণ এবং আইন প্রণয়ন ও সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয় ও কার্যকর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রয়োগ। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের প্রধান নারী হওয়ার পরও নারীর ক্ষমতায়ন সুদূরপরাহত। তার অন্যতম কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। নারী হোন বা পুরুষ হোন, প্রধানমন্ত্রীকে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কাজ করতে হয় সেটি পুরুষ প্রধান ও পুরুষের প্রতি পক্ষপাতমূলক এবং নারীর বিপক্ষে বৈষম্যমূলক। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নারী হলেও পুরুষতন্ত্রকে মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না তার জন্য।
নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বাস্তব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মূল দায়িত্ব সরকারের। একটি সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এ লক্ষ্যে নিচে কিছু সম্ভাব্য সুপারিশমালা উল্লেখ করা হলো যথা—১. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ২. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, ৩. সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা, ৪. নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ৫. নারী ও জেন্ডার ক্ষমতাবিষয়ক গবেষণা, ৬. নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা, ৭. নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, ৮. নারীর অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের জন্য জেলা পর্যায়ে প্রশাসন ও জেলা এবং উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা ইত্যাদি।
পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক গঠিত নারী উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করতে হবে যা নারী উন্নয়ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে নারী অগ্রগতির জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করতে পরামর্শ প্রদান করবে। এছাড়াও নারী উন্নয়নের জন্য ও ক্ষমতায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জাতীয় কর্মসূচিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা হতে নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর বক্তব্য ও মন্তব্য অপসারণ করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় কার্যনির্বাহী আইন ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, নীতি নির্ধারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দের সচেতনতা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ক অধিকার ও নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়াবলী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দরকারি বিষয় হলো নারীদের ওপর অব্যাহত ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের বোঝা ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অসমতা, অপর্যাপ্ততা এবং অসম প্রবেশাধিকার দূর করা। সব প্রকার যোগাযোগ বিশেষভাবে প্রচার মাধ্যমে নারীর সনাতনী প্রচার, প্রবেশ অধিকার ও অংশগ্রহণের অসমতার অবসান। পাশাপাশি নারী উন্নয়ন সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং নারী ও শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণার জন্য উত্সাহিত করতে হবে এবং পৃথকভাবে গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
ই-মেইল : advasagar29@gmail.com
No comments