যুক্তি ও সহিষ্ণুতার পথেই সমাধান খুঁজতে হবে-একের পর এক অঘটন

দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে, তাকে কোনোভাবে স্বাভাবিক বলা যায় না। একটার পর একটা অঘটন ঘটলেও সরকার নির্বিকার। রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।


যেখানে গণতন্ত্রের মূল কথা হলো সহ-অবস্থান ও পরমতসহিষ্ণুতা, সেখানে সরকার ও বিরোধী দলের আচরণে চরম অসহিষ্ণুতারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন নাগরিক মাত্রেরই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা।
বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকার বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও এর পূর্বশর্তগুলো পূরণ না করায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষালয়ে অচলাবস্থা চললেও তা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই।
রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা নিয়ে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে তোলপাড় হওয়ার পরই বিএনপির নেতা ও সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার তদন্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মকর্তারা এত দিন যে অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন, তাও অসার প্রমাণিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালত তদন্তের ভার পুলিশকে বাদ দিয়ে র‌্যাবের ওপর ন্যস্ত করেছেন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রেলওয়ের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি কাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাতে নিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীর ‘পদত্যাগ ও পুনর্বহাল’ নাটকের পর তাতে সত্য উদ্ঘাটিত হবে কি না, সে ব্যাপারে জনমনে সংশয় আছে।
নতুন যোগাযোগমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরের পরও পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী এখনো পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এই সংস্থাটির উত্থাপিত অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে।
এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে, একগুঁয়েমি পরিহার করে যুক্তি ও সহিষ্ণুতার পথে উল্লিখিত সমস্যার দ্রুত ও টেকসই সমাধানে সচেষ্ট হওয়া।

No comments

Powered by Blogger.