শেয়ারবাজার-পরিচালকেরা এবার শেয়ার ‘উপহার’ নিচ্ছেন by সুজয় মহাজন

নিকটজনের কাছ থেকে পরিচালকদের শেয়ার ‘উপহার’ নেওয়াও আটকে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসইর অভিযোগ, এর মাধ্যমে চার পরিচালক বিশেষ সুবিধা নিতে চতুরতার সঙ্গে বিধি ভেঙেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (এসইসি) এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সুবিধাভোগী লেনদেনের এই অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চার পরিচালকের চার নিকটজন। ডিএসইর অনুসন্ধানে এই সুবিধাভোগী লেনদেনের অভিযোগের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
ডিএসইর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত আলাদা চারটি প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) জমা দেওয়া হয়। ওই সব প্রতিবেদনে সুবিধাভোগী লেনদেনের জন্য ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক আবদুল্লাহ আল আহসান ও তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম, ইউসিবিএলের পরিচালক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা ইসলাম চৌধুরী, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের পরিচালক নাজমুল আহসান খালেদ ও তাঁর মেয়ে শাহিনা ফেরদৌস এবং বরকতউল্লাহ ইলেকট্রো ডায়নামিকের পরিচালক আবদুল বারী ও তাঁর ছেলে আবদুল হান্নানকে অভিযুক্ত করা হয়।
তাঁদের বিরুদ্ধে এসইসির ‘সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা-১৯৯৫’র বিধি ৪’র উপ-বিধি (১)’র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ডিএসই।
এই উপবিধিতে বলা আছে, ‘কোনো সুবিধাভোগী ব্যক্তি নিজে বা অন্য কাহারো মাধ্যমে সুবিধাভোগী ব্যবসা করিবেন না। এমনকি উক্ত রূপ ব্যবসার জন্য কোনো ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান বা সহায়তা করিবেন না।’
ডিএসইর দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা ব্যাংক ও ইউসিবিএলের দুই পরিচালক ও তাঁদের স্ত্রীর ‘সুবিধাভোগী’ লেনদেনের ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য আলাদা চারটি কমিটি গঠন করেছে এসইসি।
ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন করতে গিয়ে এসব ‘সুবিধাভোগী’ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২২ নভেম্বর এসইসি ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে। যাতে বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আর কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে হলে প্রত্যেক পরিচালককে এককভাবে ওই কোম্পানির ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আদেশ জারির পর ওই দিনই এসইসি উল্লিখিত শর্ত পরিপালনে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেয়।
ডিএসই-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এসইসির আদেশ জারির পর ওই নির্দেশনা পরিপালনে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের অনেকে বাজার থেকে শেয়ার কেনার ঘোষণা দিতে শুরু করেন। প্রথমদিকে পরিচালকদের শেয়ার কেনার ঘোষণায় বাজারে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় পরিচালকদের অনেকে কম দামে শেয়ার কিনতে নিজে ঘোষণা না দিয়ে পরিবারের সদস্য ও নিকটজনদের মাধ্যমে বাজার থেকে শেয়ার কেনা শুরু করেন। পরে তা হাতবদল করে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় চার কোম্পানির চার পরিচালকের শেয়ার উপহার বা গ্রহণের বেলায় ‘সুবিধাভোগী’ লেনদেনের তথ্য পায় ডিএসই।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক আবদুল্লাহ আল আহসানের স্ত্রী আমেনা বেগম তাঁর স্বামীকে তিন লাখ ৩৮ হাজার শেয়ার উপহার দেওয়ার অনুমতি চেয়ে ডিএসইতে আবেদন করেন। এই আবেদনের ভিত্তিতে ডিএসইর অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমেনা বেগম উপহার হিসেবে তাঁর স্বামীকে যে পরিমাণ শেয়ার দেওয়ার আবেদন করেছেন, তার বেশির ভাগই ২২ নভেম্বরের পর বাজার থেকে কেনা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে ইউসিবিএলের ১৫ লাখ, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের সাত লাখ ৬৩ হাজার ৪৭১টি এবং বরকতউল্লাহ ইলেকট্রো ডায়নামিকের ১১ লাখ ৬০ হাজার ৮১০টি শেয়ার লেনদেনের বেলায়ও।
ডিএসই জানিয়েছে, পরিচালক হিসেবে শেয়ার কেনার ঘোষণা দিলে ওই বাজারে ওই শেয়ারের দাম বেড়ে যায়, তাই আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালনে কম দামে শেয়ার কিনে নিজের কোটা পূরণ করতেই চার পরিচালক এই কৌশল অবলম্বন করেছেন। এতে উল্লিখিত চার পরিচালক বিপুল পরিমাণে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এ কারণে ডিএসই চার পরিচালককে শেয়ার উপহার দেওয়ার অনুমতি দেয়নি।
সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক, প্রধান শেয়ারহোল্ডার, ম্যানেজিং এজেন্ট, ব্যাংকার, নিরীক্ষক, উপদেষ্টা, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো ব্যক্তি সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র সাইফুর রহমান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.