শুধু কথা নয়, কাজও চাই-এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসুক
কথা হয় বেশি, কাজ হয় কম- এটাই যেন সরকারি কর্মকাণ্ডের বাস্তবতা। ২০১১-১২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে মোট অর্থ বরাদ্দ ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়নের দুর্দশা দেখে ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা।
১৫ কোটি মানুষের এই দেশে উন্নয়ন বরাদ্দ হিসেবে এটি খুবই নগণ্য। তা সত্ত্বেও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের মাত্র ৪৫ শতাংশ। বাকি তিন মাসে অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে? তখন চলবে তাড়াহুড়া ও গোঁজামিল দেওয়া। কাজের মান রক্ষা করা যাবে না এবং এই অর্থের একটি বড় অংশই জলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি শুধু এ বছরেরই চিত্র নয়। গত অর্থবছরেরও একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৪৫ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৪৪ শতাংশ। এটা নিয়মিত চিত্র। আর এটা শুধু বর্তমান সরকারেরই চিত্র নয়, সরকার-সরকারান্তরে এই একই চিত্র আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি। কিন্তু এডিপি বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কোনো সরকারই কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। কেবল প্রতিবছর এডিপির আকার সামান্য বাড়িয়ে সস্তা বাহাদুরি নেওয়ার চেষ্টা করে সরকারগুলো। আবার বরাদ্দের বৈদেশিক ঋণের অংশ ব্যবহারে আরো বেশি শ্লথ গতি দেখা যায়। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ৯ মাসে সরকারি কোষাগারের ৫৩ শতাংশ অর্থ খরচ হলেও বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচ হয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ শতাংশ এবং তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১ শতাংশ। এরই বা কারণ কী? বিদেশি ঋণের অর্থ যথেচ্ছ খরচ করতে কিছুটা সমস্যা হয় বলে কি? অথচ উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হয় না বলেই জনজীবনের সমস্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শহরের অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ঢাকা মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানির পাইপগুলো ফুটো হয়ে যাওয়ায় স্যুয়ারেজের পানি ঢুকে যাচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি রীতিমতো বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। খননের উদ্যোগ নেই। দিন দিন মানুষ বাড়ছে, অথচ দেশে রেলপথে চলাচলের সুযোগ কমছে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার ক্রমেই দুর্দশাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনি সব সমস্যার যেন কোনো অন্ত নেই। তার পরও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এত অদক্ষতা কিংবা উদাসীনতা কেন? কেবল বড় বাজেট আর বড় বড় প্রকল্প নয়, কেবল দক্ষতা বাড়াতে মাঝেমধ্যে সচিবদের তাগাদা দেওয়া নয়, আমরা চাই, স্বচ্ছতাসহ বাজেট বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। আশা করি, বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে তাদের যেসব ব্যর্থতা রয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে।
No comments