ঘষিয়াখালী চ্যানেলে বাঁধ প্রয়োজন by প্রকৌশলী হরপ্রসাদ সুতার

রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে শিল্পনগরী খুলনার নৌ-যোগাযোগ সহজ করার জন্য স্বাধীনতার আগেই ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর বাকি কাজ সমাপ্ত করে তৎকালীন নৌপরিবহন ও জাহাজ চলাচলমন্ত্রী জেনারেল এমএজি ওসমানী কর্তৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে নৌ-চলাচল উন্মুক্ত করা হয়।


দেশের অভ্যন্তরে নৌ-চলাচল সহজ করা এবং ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে মংলা ও খুলনার দূরত্ব কমেছে বটে; কিন্তু অন্যদিকে পশুর নদীর লোনা পানি বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে গোটা মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, বাগেরহাট, কচুয়া, ফকিরহাটসহ বাগেরহাট জেলায় বিস্তার লাভ করেছে। অসাধু ঘের/মৎস্যচাষিরা লবণ পানি মাঠে প্রবেশ করিয়ে মাছ চাষের ফলে এসব জনপদ দরিদ্রতার কবলে পড়েছে। লবণ পানির ফলে এখানে কোনো ফসল হয় না। এমনকি ঘাস, কচুগাছ, কলাগাছ, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ একেবারে উজাড় হয়ে গেছে। বর্তমানে পশুর নদীর লোনা পানি বাগেরহাট জেলায় বিস্তার লাভ করে পিরোজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা সিকদার মলি্লক, শেখমাটিয়া, নাজিরপুর, মালিখালী ও দীর্ঘা পর্যন্ত স্রোত চলে যায়।
ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের আগে বলেশ্বরের মিঠাপানির প্রবাহে বাগেরহাট জেলায় ২ ধরনের ধান উৎপন্ন হতো; যেমন_ আমন ও আউশ। এলাকায় ফসল হতো প্রচুর পরিমাণে। মোরেলগঞ্জ এলাকায় ধান ক্রয় করতে আসত বড় বড় ধানের নৌকা। বেপারীরা এ ধান নিয়ে যেত বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি, মিয়ারহাট প্রভৃতি ধান ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রে। তা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি রাজধানী পর্যন্ত এ ক্রয়-বিক্রয় চলত। বলেশ্বরের প্রবাহ হচ্ছে মিঠাপানি; কিন্তু শিবসা-পশুরের প্রবাহ লবণ পানি। ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের ফলে বলেশ্বরের প্রবাহ বন্ধ হয়ে পশুরের প্রবাহ উন্মুক্ত হওয়ার ফলে ওই এলাকার খাদ্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে মরুকরণে পরিণত হয়েছে গোটা বাগেরহাট এলাকা।
ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন না করে যদি ভোলা নদী পুনঃখনন করা হতো, তবে একদিকে ওই এলাকা যেমন লবণাক্ততার প্রকোপে পড়ত না, তেমনি দেশের বনজ সম্পদ উজাড় হতো না।
বর্তমানে ঘষিয়াখালী চ্যানেলে দু'দিক থেকে জোয়ার-ভাটা হয়। ঘষিয়াখালীর দিক থেকে জোয়ার হয় আবার রামপালের দিক থেকেও জোয়ার-ভাটা হয় অর্থাৎ দো-গোনা। ফলে পলি পড়ছে প্রতিদিন টনকে টন। কোনোভাবেই এ নদীকে খরস্রোতা রাখা যাবে না। সুতরাং ঘষিয়াখালী চ্যানেল অচিরেই ভরাট হয়ে যাবে। বগি-চাঁদপাই ভারানী রুট ব্যবহার করাই অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত হবে। ওই রুটে মাঝে মধ্যে খনন করা হলেই নৌ-চলাচল সঠিক হবে। প্রতিনিয়ত জাহাজ চলাচল করলে চোরাচালানিরা বনজ সম্পদ উজাড় করতে পারবে না। ওই রুটে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ, বন বিভাগের পেট্রোল বোট চলাচলের ফলে সুন্দরবনের অবাঞ্ছিত বাহিনীও স্থান পাবে না। ঘষিয়াখালী চ্যানেলের পশ্চিম মাথায় এবং পূর্ব মাথায় রিং বাঁধ দিয়ে সরকারিভাবে মৎস্য উৎপাদন করা যাবে। তাছাড়া ঘষিয়াখালীর দিকে বাঁধ দিলে বলেশ্বরের মিঠাপানির প্রবাহে আবার বিস্তীর্ণ এলাকা শস্য-শ্যামলিমায় ভরে উঠবে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় পরিবর্তন হবে ত্বরিতগতিতে।

নির্বাহী প্রকৌশলী, বিএডিসি, পটুয়াখালী
ও পরিবেশবিদ

No comments

Powered by Blogger.