বিশেষ সাক্ষাৎকার-আইনে আটকাতে না পারলেও চরিত্র উন্মোচন করতে পারব by খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। জন্ম ১৯৪১ সালের ৪ জুলাই, গোপালগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি ব্যাংকিং পেশায় যোগ দেন। সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকার পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর
হন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর এই বিশিষ্ট ব্যাংকার বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে চেয়ারম্যান করে সরকার সম্প্রতি শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করে। এরই মধ্যে কমিটি কাজও শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন দিক।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও হাসান ইমাম
প্রথম আলো আর্থিক খাতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আপনি ছিলেন, সেই জায়গা থেকে যদি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতেন, আসলে ক্যাপিটাল মার্কেটে কেন এই দরপতন হলো?
ইব্রাহিম খালেদ তদন্ত কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত আমি বেশ কিছু বিশ্লেষণ দিয়েছি। কিন্তু তদন্ত কমিটিতে বসার পর আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ থাকলেও সেটা এখন বলা ঠিক হবে না। আমি আগের কথা ভুলে যাব। তদন্তে যেটা বেরিয়ে আসবে, সেটাই প্রকাশিত হবে। যদি দেখা যায়, সেটা আমি যে রকম বলেছিলাম, সে রকমই তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। কিন্তু এখন বললে বিতর্কই বাড়বে।
প্রথম আলো কয়েকটি কাগজে আপনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে ছাপা হয়েছে, দুটি রাজনৈতিক দলের ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি শেয়ারবাজার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সরিয়ে নিয়েছেন।
ইব্রাহিম খালেদ এগুলো আমি তদন্ত দলে যোগদানের আগের ঘটনা। তখন একজন নাগরিক হিসেবে বলেছি। সেটা এখন ভুলে গেছি। কারণ, কেউ যখন একটা দায়িত্বে থাকে, যেমন—বিচারপতি, তিনি আইনজীবী হিসেবে যে কথা বলেন, বিচারকের আসনে বসার পর সে কথা বলবেন না। কাজেই আমি এ দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ব্যাপারে আমারও কিছু বলা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো কিন্তু আপনি যে ধারণা থেকে কথাগুলো বলেছিলেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও সেই ধারণা আছে যে শেয়ারবাজারে কারসাজি হয়েছে। তদন্তে সেটি বিবেচনায় আনা হবে কি না?
ইব্রাহিম খালেদ এ ধারণাটা আমরা মূল্যায়ন করব এবং বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপের ধারণাগুলোকেও জানতে চাইব। এ জন্য আমরা গ্রুপগুলোকে ১০টি ভাগে ভাগ করেছি। যেমন—ডিএসই যাঁরা পরিচালনা করেন, সিএসই যাঁরা পরিচালনা করেন, যাঁরা ব্রোকার হাউস পরিচালনা করেন, তারপর মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, পুঁজিবাজার সাংবাদিক ফোরাম। প্রতিটি গ্রুপের সঙ্গে আমরা বসব এবং তাঁদের ধারণাগুলো রেকর্ড করব। সেই ধারণাগুলো রেকর্ড করার পর কিছু কমন থাকবে, কিছু আলাদা থাকবে, সেগুলোকে আমরা অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখব। স্টাডি দুই রকম হয়, একটা হলো পিওর রিসার্চ, আরেকটা হলো পারসেপশন স্টাডি।
প্রথম আলো ’৯৬-এর শেয়ার কেলেঙ্কারির পরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তার ফল কী? ওই কমিটির কাজকে কোনো সূত্র হিসেবে আপনারা ব্যবহার করবেন কি না?
ইব্রাহিম খালেদ ’৯৬-এর ঘটনা আমাদের কর্মপরিধির বা টিওআরের মধ্যে নেই। তবে জানতে-বুঝতে সেই রিপোর্টটা আমরা পড়ব। ’৯৬ সালের পর ১৫টি মামলা হয়েছিল। একটি এখন নিম্ন আদালতে এবং ১৪টি উচ্চ আদালতে। এগুলো স্টে অর্ডার দ্বারা আটকে আছে।
প্রথম আলো ’৯৬ সালে যাঁদের নাম এসেছিল, আপনি কি তাঁদের ধারণার মধ্যে রাখছেন?
ইব্রাহিম খালেদ আমরা এবার ধারণার ওপর কাজ করব না। ধারণা নোট করব। তবে আমাদের কাজ হবে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে। কারণ, এখন তো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) রেকর্ডেড হয়, ডিএসইতে রেকর্ডেড হয়। আমরা সেই রেকর্ডের ভিত্তিতে কথা বলব। তা না হলে যে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
প্রথম আলো সিডিবিএলে তো এখন প্রায় ৩৩ লাখের বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব আছে। মাত্র দুই মাসে এত বিপুলসংখ্যক বিও হিসাব তদন্ত করা কমিটির পক্ষে কি সম্ভব?
ইব্রাহিম খালেদ টেকনিক্যালি সম্ভব নয়। কিন্তু ম্যানেজমেন্টের ছাত্র যাঁরা, তাঁরা ভালো করেই জানেন, যখন এ ধরনের অবস্থা হয়, তখন আমাদের ব্যতিক্রমটাই খুঁজে বের করতে হবে। এবং দেখা যাবে, এই ব্যতিক্রম ঘটনা চারটা কি পাঁচটা। ওটা বিশ্লেষণ করা খুবই সম্ভব। গত বছরের প্রথম থেকে ১২-১৪ মাস পর্যন্ত উত্থান-পতনের গ্রাফ আমরা দেখব। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ১৫ দিনের বেশি লাগবে না। সূচক যেখানে উঠল অথবা নামল—এ দুটি বিশ্লেষণ করলেই পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।
প্রথম আলো অনেকের অভিযোগ, এসইসির ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন মার্কেটকে অস্থির করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আবার কারও মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসময়োচিত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে।
ইব্রাহিম খালেদ এগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমরা নিবিড়ভাবে পর্যক্ষেণ করব। দেখব, তদারককারী সংস্থা হিসেবে এসইসির যেভাবে কাজ করা উচিত ছিল, সেভাবে করেছে কি না। আবার এও দেখব যে তারা যেসব আইনবিধির অধীনে কাজ করে, সেগুলোতে কোনো দুর্বলতা আছে কি না? কঠিন কাজ। কিন্তু দু-একটা ক্ষেত্রেও যদি আমরা এটাকে উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে পারি, সেটাও তো কাজের হবে। আমরা যে কর্মপরিধিতে কাজ করছি, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়টি না থাকলেও তাদের কোনো ঘাটতি ছিল কি না, বিধিবিধানে অথবা তদারকিতে, সেটিও আমরা দেখব।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তো বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেই চলে।
প্রথম আলো তার মানে আপনাদের দায়িত্বটা হবে সত্য উদ্ঘাটন। সে ক্ষেত্রে যদি টার্মস অব রেফারেন্সের বাইরেও যেতে হয়, যাবেন?
ইব্রাহিম খালেদ হ্যাঁ, প্রয়োজন হলে যাব।
প্রথম আলো শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ঘটনা মোকাবিলায় কি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে মনে করেন?
ইব্রাহিম খালেদ আমার মনে হয়, ছিল। কারণ, আমার মনে পড়ে, ফখরুদ্দীন সাহেব যখন গভর্নর ছিলেন, আর এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাহেব এসইসির চেয়ারম্যান। তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহপাঠী। তাঁরা প্রায়ই আলাপ করতেন। আমি জানি না, সেই পদ্ধতি এখনো চালু আছে কি না। চালু থাকলে সমন্বয়হীনতা হওয়ার কথা নয়।
প্রথম আলো সেদিন একটি টেলিভিশন রিপোর্টে দেখলাম, আপনার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এসইসি আপনাকে সহযোগিতা করছে না।
ইব্রাহিম খালেদ এটি অসত্য ভাষণ। আমি এ রকম কথা সেখানে বলিনি। সেখানে একজন নয়, ১৫ জন সাংবাদিক ছিলেন। অন্য কোনো গণমাধ্যমে কিন্তু বক্তব্যটি সেভাবে আসেনি। তবে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। আমাদের জন্য যে জায়গাটি তাঁরা নির্ধারিত করেছেন, সেটা ১০ তলায় এবং বর্তমানে এটি বিনিয়োগ বোর্ডের অধীনে আছে। আমরা বসে ঠিক করেছি যে ওই অফিসে আমাদের কিছু থাকবে—কম্পিউটার, কম্পিউটার অপারেটর, একজন কন্ট্রাক্ট পারসন। আমরাও মাঝেমধ্যে বসব। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে কৃষি ব্যাংকের প্রধান অফিসেই বসব। কখনো বিআইবিএমেও বসব। আবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট গ্রুপের সঙ্গে যখন কথা বলব, আমাদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট গ্রুপের যে সদস্য, তাঁর অফিসে কথা বলব। আমরা এভাবে নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে যাব। আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করব না।
প্রথম আলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যার তুলনায় শেয়ারের জোগান কম নয় কি?
ইব্রাহিম খালেদ মূল সমস্যা এখানেই। এটা চাহিদা ও জোগানের বিষয়। ব্রোকার হাউসগুলো গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত শাখা খুলেছে। গ্রামগঞ্জের লোকজনও শেয়ার কেনার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে যে বিশাল অঙ্কের টাকা সরবরাহ সাইডে চলে এল, সেখানে কোম্পনির শেয়ার সরবরাহ বাড়ছে না। একটা ধারণা ছিল যে সরকার অন্তর্বর্তী সময়ে ২৪ কি ২৬টা কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দেবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে চাহিদা ও সরবরাহে মোটামুটি সমন্বয় থাকত। কিন্তু ওই শেয়ারগুলো না আসায় বাজার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এ অবস্থায় জুয়া খেলার লোকের তো অভাব হয় না। আমাদের দায়িত্ব হবে, কারা কারসাজি করেছেন, খুঁজে বের করা। এ ক্ষেত্রে আইনে কত দূর কী হবে, আমি বলতে পারব না। কিন্তু যেটা বলব, জিনিসগুলোকে উন্মোচন করে দেওয়া যাবে। যারা এটা করেছে, তারা আইনের চোখে দোষণীয় কি না, আইনজ্ঞরা দেখবেন। কিন্তু অনৈতিকতার কথাটা আমরা বলতে পারব এবং এ ক্ষেত্রেও কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। অল্প দিন আগে ভারতের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এক বছরের জন্য আম্বানি গ্রুপের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ জনস্বার্থ। আম্বানি গ্রুপ হয়তো আইন ভঙ্গ করেনি, কিন্তু তারা এমন কিছু করেছে, যা বাজারের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্যই এক বছরের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের এখানেও এসইসিও হয়তো আইনের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু জনগণের স্বার্থে সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে।
প্রথম আলো আপনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রীও নোট দিয়ে ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনো তা বাজারে আসেনি।
ইব্রাহিম খালেদ একজন নাগরিক হিসেবে বলব, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেন, সেটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসন বা নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হলো সেটি বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টিকে শক্তভাবেই নেওয়া দরকার সরকারের। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা হতে পারে। তবে যে কারণে এটা ঘটেছে, তা হাস্যকর। ওই সরকারি কোম্পানিগুলো থেকে সরকারের সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব—একটা করে গাড়ি নেন, ব্যবহার করেন, খুবই সামান্য ব্যাপার। ওটা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে তো তাঁরা আর গাড়ি পাবেন না। যাঁর অধীনে যত বেশি কোম্পানি ও সংস্থা থাকবে, তত তিনি ক্ষমতাবান। এই ক্ষমতাও কেউ ছাড়তে চান না। এ রকম ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থেই সরকারের ভালো ভালো সিদ্ধান্ত আটকে যায়।
প্রথম আলো আরেকটি অভিযোগ আছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেই পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, সরকারের ঘনিষ্টজনেরা অনৈতিক সুযোগ নেন বলেই এমনটি ঘটে।
ইব্রাহিম খালেদ আমি তা মনে করি না। যাঁরা শেয়ারবাজারে কারসাজি করেন, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোক থাকতে পারেন, অন্য দলেরও। ব্রোকার হাউস যেগুলো আছে, এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠর মালিক বিএনপি করেন। ওখানে যখন তাঁরা ব্যবসা করেন, তখন তাঁদের মধ্যে খুব সখ্য, বিভেদ দেখি না। বিভেদটা সংসদেই দেখি। কাজেই এখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্যই হয়েছে—এটা কাকতাল। এবার মার্কেটটা অতিমাত্রায় সম্প্রসারিত হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী শেয়ার সরবরাহ না বাড়ায় অঘটনটা ঘটেছে।
প্রথম আলো সরকারের বর্তমান মুদ্রানীতি শেয়ারবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি?
ইব্রাহিম খালেদ এবার যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলো, সেটা সংকোচনমূলকই বলতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতেই এটা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে নমনীয়তা আছে। এটা সাময়িক। ইচ্ছে করলে বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমন্বয় করতে পারবে এবং সেটা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো। ফলে ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে খুব বেশি টাকা ওখানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এ অভিজ্ঞতার পর যাঁরা স্বাভাবিকভাবে শেয়ার কেনেন, তাঁদের আস্থা যদি বাড়ে, তাঁদের টাকা দিয়ে যদি এটা এখন পিকআপ করতে থাকে, তাহলে সেটা গতিশীল হবে।
প্রথম আলো সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, আপনি শেয়ারবাজার বিষয়ে অনভিজ্ঞ এবং সরকারের আজ্ঞাবহ। এ কারণে কমিটির প্রতি তাঁদের আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন।
ইব্রাহিম খালেদ আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের উত্তরে বলব, এটাই আমার গ্রহণযোগ্যতার কারণ। বিশ্বব্যবস্থাপনাতত্ত্বে স্বীকৃত রয়েছে যে ব্যবস্থাপনা উচ্চনেতৃত্বে যে জ্ঞানের প্রয়োজন, তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রয়োজন বিষয়বস্তু জ্ঞান, ৩০ শতাংশ প্রয়োজন তাত্ত্বিকতা জ্ঞান এবং ৬০ শতাংশ প্রয়োজন হিউম্যান বা মানবিক জ্ঞান। এ কারণেই এম কে আনোয়ার সিএসপি হিসেবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও হাবিব ব্যাংকের উচ্চপদে দায়িত্ব পালনে অসুবিধা বোধ করেননি। সাহাবুদ্দীন আহমদ আইনি অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সরাসরি জেলা জজ পদে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সফলতার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। তদন্ত পরিচালনার জন্য সততা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতা জরুরি, যা কমিটির রয়েছে।
দ্বিতীয় অংশের উত্তরে বলব, এম কে আনোয়ার দীর্ঘদিন সরকারের আজ্ঞা পালন করেছেন। আমার চাকরিজীবনে উল্টোটাই ঘটেছে। ১৯৯০ সালে এরশাদ আমাকে ওএসডি করেছিলেন এবং বিভাগীয় মামলা করেছিলেন। দুর্নীতির দায়ে নয়, গবেষণা ও নিবন্ধ রচনার কারণে। বিএনপি সরকার গঠনের পর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আমাকে ব্যাংকে ফিরিয়ে আনেন এবং তৎকালীন সরকার আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। চাকরিজীবনে আমি আইনি আজ্ঞা পালনকারী ছিলাম, আজ্ঞাবহ ছিলাম না। জীবনের কোনো পর্বে এবং এখনো আমার রাজনীতি-সংশ্লেষ নেই।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
ইব্রাহিম খালেদ আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও হাসান ইমাম
প্রথম আলো আর্থিক খাতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আপনি ছিলেন, সেই জায়গা থেকে যদি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতেন, আসলে ক্যাপিটাল মার্কেটে কেন এই দরপতন হলো?
ইব্রাহিম খালেদ তদন্ত কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত আমি বেশ কিছু বিশ্লেষণ দিয়েছি। কিন্তু তদন্ত কমিটিতে বসার পর আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ থাকলেও সেটা এখন বলা ঠিক হবে না। আমি আগের কথা ভুলে যাব। তদন্তে যেটা বেরিয়ে আসবে, সেটাই প্রকাশিত হবে। যদি দেখা যায়, সেটা আমি যে রকম বলেছিলাম, সে রকমই তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। কিন্তু এখন বললে বিতর্কই বাড়বে।
প্রথম আলো কয়েকটি কাগজে আপনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে ছাপা হয়েছে, দুটি রাজনৈতিক দলের ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি শেয়ারবাজার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সরিয়ে নিয়েছেন।
ইব্রাহিম খালেদ এগুলো আমি তদন্ত দলে যোগদানের আগের ঘটনা। তখন একজন নাগরিক হিসেবে বলেছি। সেটা এখন ভুলে গেছি। কারণ, কেউ যখন একটা দায়িত্বে থাকে, যেমন—বিচারপতি, তিনি আইনজীবী হিসেবে যে কথা বলেন, বিচারকের আসনে বসার পর সে কথা বলবেন না। কাজেই আমি এ দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ব্যাপারে আমারও কিছু বলা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো কিন্তু আপনি যে ধারণা থেকে কথাগুলো বলেছিলেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও সেই ধারণা আছে যে শেয়ারবাজারে কারসাজি হয়েছে। তদন্তে সেটি বিবেচনায় আনা হবে কি না?
ইব্রাহিম খালেদ এ ধারণাটা আমরা মূল্যায়ন করব এবং বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপের ধারণাগুলোকেও জানতে চাইব। এ জন্য আমরা গ্রুপগুলোকে ১০টি ভাগে ভাগ করেছি। যেমন—ডিএসই যাঁরা পরিচালনা করেন, সিএসই যাঁরা পরিচালনা করেন, যাঁরা ব্রোকার হাউস পরিচালনা করেন, তারপর মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, পুঁজিবাজার সাংবাদিক ফোরাম। প্রতিটি গ্রুপের সঙ্গে আমরা বসব এবং তাঁদের ধারণাগুলো রেকর্ড করব। সেই ধারণাগুলো রেকর্ড করার পর কিছু কমন থাকবে, কিছু আলাদা থাকবে, সেগুলোকে আমরা অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখব। স্টাডি দুই রকম হয়, একটা হলো পিওর রিসার্চ, আরেকটা হলো পারসেপশন স্টাডি।
প্রথম আলো ’৯৬-এর শেয়ার কেলেঙ্কারির পরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তার ফল কী? ওই কমিটির কাজকে কোনো সূত্র হিসেবে আপনারা ব্যবহার করবেন কি না?
ইব্রাহিম খালেদ ’৯৬-এর ঘটনা আমাদের কর্মপরিধির বা টিওআরের মধ্যে নেই। তবে জানতে-বুঝতে সেই রিপোর্টটা আমরা পড়ব। ’৯৬ সালের পর ১৫টি মামলা হয়েছিল। একটি এখন নিম্ন আদালতে এবং ১৪টি উচ্চ আদালতে। এগুলো স্টে অর্ডার দ্বারা আটকে আছে।
প্রথম আলো ’৯৬ সালে যাঁদের নাম এসেছিল, আপনি কি তাঁদের ধারণার মধ্যে রাখছেন?
ইব্রাহিম খালেদ আমরা এবার ধারণার ওপর কাজ করব না। ধারণা নোট করব। তবে আমাদের কাজ হবে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে। কারণ, এখন তো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) রেকর্ডেড হয়, ডিএসইতে রেকর্ডেড হয়। আমরা সেই রেকর্ডের ভিত্তিতে কথা বলব। তা না হলে যে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
প্রথম আলো সিডিবিএলে তো এখন প্রায় ৩৩ লাখের বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব আছে। মাত্র দুই মাসে এত বিপুলসংখ্যক বিও হিসাব তদন্ত করা কমিটির পক্ষে কি সম্ভব?
ইব্রাহিম খালেদ টেকনিক্যালি সম্ভব নয়। কিন্তু ম্যানেজমেন্টের ছাত্র যাঁরা, তাঁরা ভালো করেই জানেন, যখন এ ধরনের অবস্থা হয়, তখন আমাদের ব্যতিক্রমটাই খুঁজে বের করতে হবে। এবং দেখা যাবে, এই ব্যতিক্রম ঘটনা চারটা কি পাঁচটা। ওটা বিশ্লেষণ করা খুবই সম্ভব। গত বছরের প্রথম থেকে ১২-১৪ মাস পর্যন্ত উত্থান-পতনের গ্রাফ আমরা দেখব। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ১৫ দিনের বেশি লাগবে না। সূচক যেখানে উঠল অথবা নামল—এ দুটি বিশ্লেষণ করলেই পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।
প্রথম আলো অনেকের অভিযোগ, এসইসির ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন মার্কেটকে অস্থির করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আবার কারও মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসময়োচিত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে।
ইব্রাহিম খালেদ এগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমরা নিবিড়ভাবে পর্যক্ষেণ করব। দেখব, তদারককারী সংস্থা হিসেবে এসইসির যেভাবে কাজ করা উচিত ছিল, সেভাবে করেছে কি না। আবার এও দেখব যে তারা যেসব আইনবিধির অধীনে কাজ করে, সেগুলোতে কোনো দুর্বলতা আছে কি না? কঠিন কাজ। কিন্তু দু-একটা ক্ষেত্রেও যদি আমরা এটাকে উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে পারি, সেটাও তো কাজের হবে। আমরা যে কর্মপরিধিতে কাজ করছি, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়টি না থাকলেও তাদের কোনো ঘাটতি ছিল কি না, বিধিবিধানে অথবা তদারকিতে, সেটিও আমরা দেখব।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তো বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেই চলে।
প্রথম আলো তার মানে আপনাদের দায়িত্বটা হবে সত্য উদ্ঘাটন। সে ক্ষেত্রে যদি টার্মস অব রেফারেন্সের বাইরেও যেতে হয়, যাবেন?
ইব্রাহিম খালেদ হ্যাঁ, প্রয়োজন হলে যাব।
প্রথম আলো শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ঘটনা মোকাবিলায় কি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে মনে করেন?
ইব্রাহিম খালেদ আমার মনে হয়, ছিল। কারণ, আমার মনে পড়ে, ফখরুদ্দীন সাহেব যখন গভর্নর ছিলেন, আর এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাহেব এসইসির চেয়ারম্যান। তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহপাঠী। তাঁরা প্রায়ই আলাপ করতেন। আমি জানি না, সেই পদ্ধতি এখনো চালু আছে কি না। চালু থাকলে সমন্বয়হীনতা হওয়ার কথা নয়।
প্রথম আলো সেদিন একটি টেলিভিশন রিপোর্টে দেখলাম, আপনার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এসইসি আপনাকে সহযোগিতা করছে না।
ইব্রাহিম খালেদ এটি অসত্য ভাষণ। আমি এ রকম কথা সেখানে বলিনি। সেখানে একজন নয়, ১৫ জন সাংবাদিক ছিলেন। অন্য কোনো গণমাধ্যমে কিন্তু বক্তব্যটি সেভাবে আসেনি। তবে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। আমাদের জন্য যে জায়গাটি তাঁরা নির্ধারিত করেছেন, সেটা ১০ তলায় এবং বর্তমানে এটি বিনিয়োগ বোর্ডের অধীনে আছে। আমরা বসে ঠিক করেছি যে ওই অফিসে আমাদের কিছু থাকবে—কম্পিউটার, কম্পিউটার অপারেটর, একজন কন্ট্রাক্ট পারসন। আমরাও মাঝেমধ্যে বসব। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে কৃষি ব্যাংকের প্রধান অফিসেই বসব। কখনো বিআইবিএমেও বসব। আবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট গ্রুপের সঙ্গে যখন কথা বলব, আমাদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট গ্রুপের যে সদস্য, তাঁর অফিসে কথা বলব। আমরা এভাবে নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে যাব। আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করব না।
প্রথম আলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যার তুলনায় শেয়ারের জোগান কম নয় কি?
ইব্রাহিম খালেদ মূল সমস্যা এখানেই। এটা চাহিদা ও জোগানের বিষয়। ব্রোকার হাউসগুলো গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত শাখা খুলেছে। গ্রামগঞ্জের লোকজনও শেয়ার কেনার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে যে বিশাল অঙ্কের টাকা সরবরাহ সাইডে চলে এল, সেখানে কোম্পনির শেয়ার সরবরাহ বাড়ছে না। একটা ধারণা ছিল যে সরকার অন্তর্বর্তী সময়ে ২৪ কি ২৬টা কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দেবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে চাহিদা ও সরবরাহে মোটামুটি সমন্বয় থাকত। কিন্তু ওই শেয়ারগুলো না আসায় বাজার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এ অবস্থায় জুয়া খেলার লোকের তো অভাব হয় না। আমাদের দায়িত্ব হবে, কারা কারসাজি করেছেন, খুঁজে বের করা। এ ক্ষেত্রে আইনে কত দূর কী হবে, আমি বলতে পারব না। কিন্তু যেটা বলব, জিনিসগুলোকে উন্মোচন করে দেওয়া যাবে। যারা এটা করেছে, তারা আইনের চোখে দোষণীয় কি না, আইনজ্ঞরা দেখবেন। কিন্তু অনৈতিকতার কথাটা আমরা বলতে পারব এবং এ ক্ষেত্রেও কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। অল্প দিন আগে ভারতের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এক বছরের জন্য আম্বানি গ্রুপের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ জনস্বার্থ। আম্বানি গ্রুপ হয়তো আইন ভঙ্গ করেনি, কিন্তু তারা এমন কিছু করেছে, যা বাজারের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্যই এক বছরের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের এখানেও এসইসিও হয়তো আইনের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু জনগণের স্বার্থে সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে।
প্রথম আলো আপনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রীও নোট দিয়ে ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনো তা বাজারে আসেনি।
ইব্রাহিম খালেদ একজন নাগরিক হিসেবে বলব, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেন, সেটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসন বা নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হলো সেটি বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টিকে শক্তভাবেই নেওয়া দরকার সরকারের। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা হতে পারে। তবে যে কারণে এটা ঘটেছে, তা হাস্যকর। ওই সরকারি কোম্পানিগুলো থেকে সরকারের সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব—একটা করে গাড়ি নেন, ব্যবহার করেন, খুবই সামান্য ব্যাপার। ওটা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলে তো তাঁরা আর গাড়ি পাবেন না। যাঁর অধীনে যত বেশি কোম্পানি ও সংস্থা থাকবে, তত তিনি ক্ষমতাবান। এই ক্ষমতাও কেউ ছাড়তে চান না। এ রকম ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থেই সরকারের ভালো ভালো সিদ্ধান্ত আটকে যায়।
প্রথম আলো আরেকটি অভিযোগ আছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেই পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, সরকারের ঘনিষ্টজনেরা অনৈতিক সুযোগ নেন বলেই এমনটি ঘটে।
ইব্রাহিম খালেদ আমি তা মনে করি না। যাঁরা শেয়ারবাজারে কারসাজি করেন, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোক থাকতে পারেন, অন্য দলেরও। ব্রোকার হাউস যেগুলো আছে, এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠর মালিক বিএনপি করেন। ওখানে যখন তাঁরা ব্যবসা করেন, তখন তাঁদের মধ্যে খুব সখ্য, বিভেদ দেখি না। বিভেদটা সংসদেই দেখি। কাজেই এখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্যই হয়েছে—এটা কাকতাল। এবার মার্কেটটা অতিমাত্রায় সম্প্রসারিত হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী শেয়ার সরবরাহ না বাড়ায় অঘটনটা ঘটেছে।
প্রথম আলো সরকারের বর্তমান মুদ্রানীতি শেয়ারবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি?
ইব্রাহিম খালেদ এবার যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলো, সেটা সংকোচনমূলকই বলতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতেই এটা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে নমনীয়তা আছে। এটা সাময়িক। ইচ্ছে করলে বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমন্বয় করতে পারবে এবং সেটা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো। ফলে ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে খুব বেশি টাকা ওখানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এ অভিজ্ঞতার পর যাঁরা স্বাভাবিকভাবে শেয়ার কেনেন, তাঁদের আস্থা যদি বাড়ে, তাঁদের টাকা দিয়ে যদি এটা এখন পিকআপ করতে থাকে, তাহলে সেটা গতিশীল হবে।
প্রথম আলো সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, আপনি শেয়ারবাজার বিষয়ে অনভিজ্ঞ এবং সরকারের আজ্ঞাবহ। এ কারণে কমিটির প্রতি তাঁদের আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন।
ইব্রাহিম খালেদ আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের উত্তরে বলব, এটাই আমার গ্রহণযোগ্যতার কারণ। বিশ্বব্যবস্থাপনাতত্ত্বে স্বীকৃত রয়েছে যে ব্যবস্থাপনা উচ্চনেতৃত্বে যে জ্ঞানের প্রয়োজন, তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রয়োজন বিষয়বস্তু জ্ঞান, ৩০ শতাংশ প্রয়োজন তাত্ত্বিকতা জ্ঞান এবং ৬০ শতাংশ প্রয়োজন হিউম্যান বা মানবিক জ্ঞান। এ কারণেই এম কে আনোয়ার সিএসপি হিসেবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও হাবিব ব্যাংকের উচ্চপদে দায়িত্ব পালনে অসুবিধা বোধ করেননি। সাহাবুদ্দীন আহমদ আইনি অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সরাসরি জেলা জজ পদে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সফলতার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। তদন্ত পরিচালনার জন্য সততা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতা জরুরি, যা কমিটির রয়েছে।
দ্বিতীয় অংশের উত্তরে বলব, এম কে আনোয়ার দীর্ঘদিন সরকারের আজ্ঞা পালন করেছেন। আমার চাকরিজীবনে উল্টোটাই ঘটেছে। ১৯৯০ সালে এরশাদ আমাকে ওএসডি করেছিলেন এবং বিভাগীয় মামলা করেছিলেন। দুর্নীতির দায়ে নয়, গবেষণা ও নিবন্ধ রচনার কারণে। বিএনপি সরকার গঠনের পর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আমাকে ব্যাংকে ফিরিয়ে আনেন এবং তৎকালীন সরকার আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। চাকরিজীবনে আমি আইনি আজ্ঞা পালনকারী ছিলাম, আজ্ঞাবহ ছিলাম না। জীবনের কোনো পর্বে এবং এখনো আমার রাজনীতি-সংশ্লেষ নেই।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
ইব্রাহিম খালেদ আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments