পাঁচ বছরের চার বছরই বন্ধ পারটেক্স মিল!-ক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন by আবুল কাশেম

৫ বিঘা জমি। ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ৪৮৫ জন শ্রমিক। এত আয়োজন করে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম চিনি পরিশোধন কল পারটেঙ্ সুগার মিল যৌবনে পেঁৗছার আগেই বৃদ্ধ! ২০০৬ সালের ১৯ আগস্ট চিনি কলটি চালু হওয়ার পর বিভিন্ন সংকটের কারণে উৎপাদনে ছিল মাত্র ১২ মাস। বাকি ৫১ মাসই বন্ধ ছিল কারখানাটি। দৈনিক এক হাজার ৫০০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন চিনিকলটি চালু অবস্থায় সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারছে ৩০০ টন


পর্যন্ত। অর্থাৎ চালু অবস্থায় উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারছে চিনিকলটি।
পারটেঙ্ গ্রুপের পরিচালক (বাণিজ্যিক) এ কে এম হাশমী কালের কণ্ঠকে জানান, দৈনিক এক হাজার ৫০০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন চিনিকলটি গ্যাসের সংকটের কারণে দৈনিক ৩০০ টনের বেশি উৎপাদন করতে পারছে না। নিজ খরচে গ্যাস লাইন স্থাপনের জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৬ সালেই চার কোটি টাকা খরচ করে ১৫ কিলোমিটার লম্বা গ্যাস লাইন স্থাপনের পাইপ আমদানি করে রাখা হয়েছে। বারবার তিতাসকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হককে চিঠিও লিখেছেন। তার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে পারটেঙ্ সুগার মিলের প্রকল্প পরিচালক মো. লুতফর রহমান খান জানান, গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর কলটির বয়লার বিস্ফোরিত হয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। পরে যন্ত্রপাতি ঠিক করে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে মিলটি আবারও চালু করা হয় কয়েক দিনের জন্য। মূলত ২০০৬ সালে আমদানি করা কিছু অপরিশোধিত চিনি শোধন করার পর এপ্রিল মাসেই তা আবারও বন্ধ করা হয়। পারটেঙ্ গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাসেম সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তখন মিলটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল মিলটি আবারও চালু করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ৯ মাস চলার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে আবারও বন্ধ রাখতে হয়। কারণ ওই সময় অপরিশোধিত চিনি আমদানি করার জন্য জাহাজ ভাড়া করতে পারেনি পারটেঙ্ গ্রুপ। সেই ফেব্রুয়ারির পর গত ৯ অক্টোবর আবারও চালু হয়েছে মিলটি। কিন্তু ৩০০ টনের বেশি উৎপাদন করতে পারছে না।
গত রমজানের আগে পারটেঙ্ গ্রুপের চিনিকলটি ছাড়াও মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের চিনিকল বন্ধ থাকে। পারটেঙ্ বাদে বাকি তিনটি চিনিকল সেপ্টেম্বরেই চালু হয়। আর পারটেঙ্ গ্রুপেরটি চালু হয় গত ৯ অক্টোবর।
মিলটি এত দিন বন্ধ থাকার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, পারটেঙ্ গ্রুপের নিজস্ব খরচে স্থাপিত প্রকল্প পারটেঙ্ এনার্জি লিমিটেডে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে তিতাস গ্যাস কম্পানি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো টিবিএস থেকে ওই কম্পানি পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি মোটা ও ১৫ কিলোমিটার লম্বা গ্যাস লাইন স্থাপনের অনুমতি দেয়। পরে ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নকশা অনুমোদন করে পাইপ আমদানি করা হয়। কিন্তু পারটেঙ্ গ্রুপের মালিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রমজানের সময় মিল বন্ধ রাখার কারণ সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান পারটেঙ্ গ্রুপের কাছে ব্যাখা দাবি করলে গ্রুপটি জানায়, গ্যাস সংকটের কারণে তারা চিনিকলটি চালু করতে পারছে না। এমনকি গ্যাস সংযোগ পেতে এম এ হাসেম নিজেও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পারটেঙ্ গ্রুপ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে গত ২৫ আগস্ট চিঠি দিয়েছে। একই দিনে বাণিজ্যমন্ত্রীও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে ওই লাইন স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো অগ্রগতি হয়নি!
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ২৫ আগস্ট জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'পারটেঙ্ এনার্জি নিজ খরচে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের অনুমোদন ও প্রতি ঘণ্টায় আট হাজার এসসিএম গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে। পারটেঙ্ সুগার মিলটি সার্বক্ষণিক চালু রেখে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে জাতীয় অর্থনীতিতে এবং দেশের চিনির চাহিদা পূরণে যথাযথ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই জনস্বার্থে ওই গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের অনুমোদন এবং গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।'
পারটেঙ্ সুগার মিলের প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, মিলটি চালানোর ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। আর সে কারণেই ফেব্রুয়ারিতে কারখানাটি বন্ধ করে অক্টোবরে চালু করলেও কারখানার একজন শ্রমিকও ছাঁটাই করা হয়নি।
আর চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পেলেও আমাদের প্রতি মাসে গ্যাসের নূ্যনতম বিল গুনতে হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, এক হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদন করতে গেলে গ্যাসের চাপ লাগবে ১৪০ পিএসআই; কিন্তু এখন পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ পিএসআই। অনুমোদন পাওয়া গ্যাস লাইনটি স্থাপন করা হলে পূর্ণোদ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আর তখন উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও
জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.