আগামী নির্বাচনেও জনগণ বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ঐতিহ্য রক্ষা করবে-সমকালীন প্রসঙ্গ by বদরুদ্দীন উমর
গদির গরমে মাথাও গরম হয়। বর্তমান সরকারি দল, তাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে মন্ত্রী, হাফ মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সাংসদ, দলীয় নেতা থেকে নিয়ে সকলের অবস্থা একই প্রকার। এমনকি ২০০৭-০৮ সালে দলের যেসব নেতা বেনামি সামরিক সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের নেত্রীকে মাইনাস বা নেতি করার চক্রান্ত করে ব্যর্থ হওয়ার পর দলের মধ্যেই ধরাশায়ী অবস্থায় আছেন তাদের অবস্থাও এদিক দিয়ে অভিন্ন।
এদের কেউই মাটির ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছেন বলে মনে হয় না। এদের চোখ-কানও খোলা আছে ভাবার কারণ নেই। এদের প্রত্যেকেরই অবস্থা এখন দাঁড়িয়েছে ইংরেজিতে যাকে বলে ঐড়ষষড় িসবহ-এর মতো। এদের শূন্যগর্ভ কথাবার্তা প্রতিদিন সংবাদপত্রে দেখে মনে হয় সারাদেশটাই এমন মাথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে!
দেশ আজ সামগ্রিকভাবে এক মহাসংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এই সংকটের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকট এই মুহূর্তে খুব গুরুতর হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে তাদের মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতিদিনের বক্তব্য এবং এলোপাতাড়ি ঘোষণা থেকে বোঝার উপায় নেই চারদিকে সংকটের দ্বারা ঘেরাও হয়ে থাকা জনগণ কী বিপজ্জনক অবস্থায় ও দুর্গতির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন। এই জীবনযাত্রাকে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মতো বেঁচে থাকা বলা যায় না। এ হলো কোনোমতে টিকে থাকা। অবশ্য এর মধ্যে কত মানুষ যে টিকে থাকতেও না পেরে 'পরপারের' যাত্রী হচ্ছে তার কোনো হিসাবও কারও কাছে নেই।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক তারল্য সংকটে ঘোরতরভাবে নিমজ্জিত। এ জন্য সরকারকেও তার নিয়মিত ব্যয় নির্বাহের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এই সরকারি ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাংকের আমানত হ্রাস হতে থাকায় শিল্প ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে প্রয়োজনমতো ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে কলমানির সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ ছাড়া সরকার নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নোট ছাপিয়ে চলেছে। এর ফলে দেশে বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা লক্ষ্য করার বিষয় তা হলো, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি বলছেন, দেশে কোনো অর্থনৈতিক সংকট নেই। তারল্য সংকট নিয়ে কিছুসংখ্যক অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী যেসব কথা বলছেন তা নিছক ভুল প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয়! দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে। ২০০৭-০৮ সালে এই রিজার্ভ দশ বিলিয়ন ডলারের ওপর থাকলেও এখন তা নিম্নমুখী হচ্ছে। যেভাবে দেশের আমদানি বাড়ছে ও রফতানি কমছে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক কমে আসার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা নিজেই এক সংকট এবং তা আরও অনেক ধরনের গভীর সংকটের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে গত এক বছর ধরে যে গণবিক্ষোভ, অভ্যুত্থান, শাসন ক্ষমতার হাতবদল ইত্যাদি টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সেখানে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাছাড়া ওইসব দেশের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনো বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আমদানি কমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে এসব কারণেই ঘাটতি ও সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে মনে হয়, এ বিষয়ে তাদের কোনো খবর নেই! অথচ তাদের ওপরই এখন দেশ পরিচালনার ভার। এই পরিচালকদের চোখ-কান বন্ধ থাকলেও এই ভার যে তারা কত হালকাভাবে বহন করছেন এটা দেশের লোক নিজেদের চোখ-কান খোলা রেখেই প্রত্যক্ষ করছেন।
দেশে আজ এক খাদ্য সংকট চলছে। এ সংকট নতুন নয়। এ সংকট বাংলাদেশের জনগণের জীবনে এক স্থায়ী ব্যাপার। তবু কখনও কখনও এই সংকট বাড়ে, কখনও কমে। সামান্য আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, যারা দেশের শতকরা নব্বই ভাগ, তাদের যখন ৫০ টাকা কেজি চাল কিনে খেতে হয়, তখন দেশে খাদ্য সংকট নেই, এ কথা বলার থেকে জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য আর কী হতে পারে? কিন্তু এই সংকটজনক মুহূর্তে সরকার পরিচালকদের মধ্যে দারুণ নিশ্চিন্ত ভাব বিরাজ করছে! অথচ এটাই হলো সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতার গদিতে সমাসীন হওয়া রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব! দেশের বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার লাভ যে এই নেতৃত্বের দ্বারা সম্ভব নয়, এটা যেমন এর থেকে প্রমাণিত হয়, তেমনি প্রমাণিত হয়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ক্ষমতাসীন হয়েছেন সেই প্রক্রিয়ারও অকার্যকারিতা।
দেশের সংকট ও জনগণের জীবনের সংকট চোখে না দেখার কারণ দেশের শাসন ব্যবস্থার এই পরিচালকদের ও দেশের জনগণের জীবনের মধ্যে কোনো যোগ নেই। শাসকশ্রেণীর ও সরকারের লোকদের জীবন চলছে এক খাতে এবং জনগণের জীবন চলছে অন্য খাতে। দুই প্রবাহের কোনো মিলনক্ষেত্র নেই। এদের উভয়ের একটা মিলন দেখা যায় নির্বাচনের সময় যখন ভোটপ্রার্থী হয়ে শাসকশ্রেণীর লোকেরা গরিব লোকদের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দেন। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারি লোকেরা নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন তো করেনই না, এমনকি প্রতিশ্রুতি যে তারা দিয়েছিলেন এটাও তারা মনে করতে বা মনে রাখতে পারেন না। মনে রাখলেও প্রতিশ্রুতি পালন না করার অজুহাত হিসেবে তারা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় দেশের যে অবস্থা ছিল তা পরিবর্তিত হয়েছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনকালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে চেষ্টাও অবাস্তব।
বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন বছর পার হয়েছে। বাকি আছে আর মাত্র দুই বছর। কিন্তু বর্তমান গদিনশিনদের ভাব দেখে, তাদের কথাবার্তা শুনে এবং আচরণ দেখে মনে হয়, তারা এ দেশে কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জোরে নিজেদের অবস্থান স্থায়ী মনে করে নিশ্চিন্ত আছেন! কাজেই দু'বছর পর তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে এ নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা নেই! শুধু তাই নয়, গদিতে বসা অবস্থায় জনস্বার্থবিরোধী জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যে জনশত্রুদের কত নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি এটাই তারা নিজেদের প্রতিনিয়ত কর্মকাণ্ড এবং নানা কথাবার্তার মাধ্যমে প্রমাণ করেন। জনগণ বিস্ফারিত চোখ মেলে এসব দেখেন কিন্তু তাদের করার বিশেষ কিছু থাকে না। কারণ এ দেশে এখন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বলে কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে তারা যা করেন তা হলো, পরবর্তী নির্বাচনে পূর্ববর্তী নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে গদিনশিন দল ও নেতৃত্বকে উৎখাত করা। এটা বাংলাদেশে এখন এত নিয়মিতভাবে ঘটে চলেছে, যাতে এটা পরিণত হয়েছে এক ধরনের ঐতিহ্যে। এখনও পর্যন্ত দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, জনগণের চেতনা যে স্তরে আছে তাতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে এই ঐতিহ্যের কোনো ব্যতিক্রম হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
২১.১১.১১
দেশ আজ সামগ্রিকভাবে এক মহাসংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এই সংকটের মধ্যে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকট এই মুহূর্তে খুব গুরুতর হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে তাদের মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতিদিনের বক্তব্য এবং এলোপাতাড়ি ঘোষণা থেকে বোঝার উপায় নেই চারদিকে সংকটের দ্বারা ঘেরাও হয়ে থাকা জনগণ কী বিপজ্জনক অবস্থায় ও দুর্গতির মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন। এই জীবনযাত্রাকে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মতো বেঁচে থাকা বলা যায় না। এ হলো কোনোমতে টিকে থাকা। অবশ্য এর মধ্যে কত মানুষ যে টিকে থাকতেও না পেরে 'পরপারের' যাত্রী হচ্ছে তার কোনো হিসাবও কারও কাছে নেই।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক তারল্য সংকটে ঘোরতরভাবে নিমজ্জিত। এ জন্য সরকারকেও তার নিয়মিত ব্যয় নির্বাহের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এই সরকারি ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাংকের আমানত হ্রাস হতে থাকায় শিল্প ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে প্রয়োজনমতো ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে কলমানির সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ ছাড়া সরকার নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে নোট ছাপিয়ে চলেছে। এর ফলে দেশে বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা লক্ষ্য করার বিষয় তা হলো, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি বলছেন, দেশে কোনো অর্থনৈতিক সংকট নেই। তারল্য সংকট নিয়ে কিছুসংখ্যক অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী যেসব কথা বলছেন তা নিছক ভুল প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয়! দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে। ২০০৭-০৮ সালে এই রিজার্ভ দশ বিলিয়ন ডলারের ওপর থাকলেও এখন তা নিম্নমুখী হচ্ছে। যেভাবে দেশের আমদানি বাড়ছে ও রফতানি কমছে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক কমে আসার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা নিজেই এক সংকট এবং তা আরও অনেক ধরনের গভীর সংকটের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে গত এক বছর ধরে যে গণবিক্ষোভ, অভ্যুত্থান, শাসন ক্ষমতার হাতবদল ইত্যাদি টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সেখানে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাছাড়া ওইসব দেশের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনো বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আমদানি কমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে এসব কারণেই ঘাটতি ও সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে মনে হয়, এ বিষয়ে তাদের কোনো খবর নেই! অথচ তাদের ওপরই এখন দেশ পরিচালনার ভার। এই পরিচালকদের চোখ-কান বন্ধ থাকলেও এই ভার যে তারা কত হালকাভাবে বহন করছেন এটা দেশের লোক নিজেদের চোখ-কান খোলা রেখেই প্রত্যক্ষ করছেন।
দেশে আজ এক খাদ্য সংকট চলছে। এ সংকট নতুন নয়। এ সংকট বাংলাদেশের জনগণের জীবনে এক স্থায়ী ব্যাপার। তবু কখনও কখনও এই সংকট বাড়ে, কখনও কমে। সামান্য আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, যারা দেশের শতকরা নব্বই ভাগ, তাদের যখন ৫০ টাকা কেজি চাল কিনে খেতে হয়, তখন দেশে খাদ্য সংকট নেই, এ কথা বলার থেকে জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য আর কী হতে পারে? কিন্তু এই সংকটজনক মুহূর্তে সরকার পরিচালকদের মধ্যে দারুণ নিশ্চিন্ত ভাব বিরাজ করছে! অথচ এটাই হলো সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতার গদিতে সমাসীন হওয়া রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব! দেশের বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার লাভ যে এই নেতৃত্বের দ্বারা সম্ভব নয়, এটা যেমন এর থেকে প্রমাণিত হয়, তেমনি প্রমাণিত হয়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ক্ষমতাসীন হয়েছেন সেই প্রক্রিয়ারও অকার্যকারিতা।
দেশের সংকট ও জনগণের জীবনের সংকট চোখে না দেখার কারণ দেশের শাসন ব্যবস্থার এই পরিচালকদের ও দেশের জনগণের জীবনের মধ্যে কোনো যোগ নেই। শাসকশ্রেণীর ও সরকারের লোকদের জীবন চলছে এক খাতে এবং জনগণের জীবন চলছে অন্য খাতে। দুই প্রবাহের কোনো মিলনক্ষেত্র নেই। এদের উভয়ের একটা মিলন দেখা যায় নির্বাচনের সময় যখন ভোটপ্রার্থী হয়ে শাসকশ্রেণীর লোকেরা গরিব লোকদের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দেন। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারি লোকেরা নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন তো করেনই না, এমনকি প্রতিশ্রুতি যে তারা দিয়েছিলেন এটাও তারা মনে করতে বা মনে রাখতে পারেন না। মনে রাখলেও প্রতিশ্রুতি পালন না করার অজুহাত হিসেবে তারা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় দেশের যে অবস্থা ছিল তা পরিবর্তিত হয়েছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনকালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সে চেষ্টাও অবাস্তব।
বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন বছর পার হয়েছে। বাকি আছে আর মাত্র দুই বছর। কিন্তু বর্তমান গদিনশিনদের ভাব দেখে, তাদের কথাবার্তা শুনে এবং আচরণ দেখে মনে হয়, তারা এ দেশে কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জোরে নিজেদের অবস্থান স্থায়ী মনে করে নিশ্চিন্ত আছেন! কাজেই দু'বছর পর তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে এ নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা নেই! শুধু তাই নয়, গদিতে বসা অবস্থায় জনস্বার্থবিরোধী জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যে জনশত্রুদের কত নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি এটাই তারা নিজেদের প্রতিনিয়ত কর্মকাণ্ড এবং নানা কথাবার্তার মাধ্যমে প্রমাণ করেন। জনগণ বিস্ফারিত চোখ মেলে এসব দেখেন কিন্তু তাদের করার বিশেষ কিছু থাকে না। কারণ এ দেশে এখন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বলে কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে তারা যা করেন তা হলো, পরবর্তী নির্বাচনে পূর্ববর্তী নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে গদিনশিন দল ও নেতৃত্বকে উৎখাত করা। এটা বাংলাদেশে এখন এত নিয়মিতভাবে ঘটে চলেছে, যাতে এটা পরিণত হয়েছে এক ধরনের ঐতিহ্যে। এখনও পর্যন্ত দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, জনগণের চেতনা যে স্তরে আছে তাতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে এই ঐতিহ্যের কোনো ব্যতিক্রম হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
২১.১১.১১
No comments