একাত্তরে পিরোজপুরজুড়ে সাঈদীর নৃশংসতা
গণহত্যা, ধর্ষণ, জাতিগত নিধন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য তুলেধরে রাষ্ট্রপক্ষের 'সূচনা বক্তব্য' উপস্থাপনএকাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পিরোজপুরে গণহত্যা, ধর্ষণ, জাতিগত নিধন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে গতকাল সোমবার 'সূচনা বক্তব্য' (ওপেনিং স্টেটমেন্ট)উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান।সূচনা বক্তব্যে একাত্তরে গোটা পিরোজপুরে সাঈদীর নৃশংসতা তুলে ধরা হয়। ৮৮ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্যের ১১৫ ও ১১২ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভানু সাহাকে 'নিয়মিত ধর্ষণ' করতেন সাঈদী। বিপদ সাহার বাড়িতেই সাঈদীসহ রাজাকার সদস্যরা ভানু সাহাকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করতেন। একইভাবে হুগলাবুনিয়া গ্রামের মুধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ করা হলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার গর্ভে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন কথা উঠলে লোকলজ্জায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হন শেফালী। বর্তমানে ভানু সাহা ও শেফালী ঘরামী ভারতে অবস্থান করছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ধর্ষণের শিকার অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন। বিচারের প্রয়োজনে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে। গতকাল সকাল ১০টা ৩৫ থেকে এক ঘণ্টা সাঈদীর উপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করা হয়। আগামী ৭ ডিসেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু রোববার সূচনা বক্তব্য শুরু করলেও গতকাল প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বাকি অংশ শেষ করেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের আরও অভিযোগ : সূচনা বক্তব্যের ১১৫ নম্বর প্যারায় আরও বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে সাঈদীর নেতৃত্বে উমেদপুর পাড়েরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার তিন বোন মহামায়া, অন্যরানী ও কমলা রানীকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া একইভাবে ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পাড়েরহাট বন্দরের কিষ্ট সাহাকে হত্যার পর তার মেয়েসহ হিন্দুপাড়ার অসংখ্য নারীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
সাঈদীর আত্মগোপন :গতকাল সূচনা বক্তব্যের ১১৮ নম্বর প্যারায় বলা হয়, স্বাধীনতার পর সাঈদী নিজের অপরাধ আড়াল করতে অস্ত্রসহ যশোরের মোঃ রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। অনেকদিন পর মুক্তিযুদ্ধে তার কর্মকাণ্ড জানাজানি হলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান সাঈদী। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি প্রকাশ্যে আসেন এবং ভুয়া মাওলানা পরিচয়ে ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন। এভাবেই তিনি 'আল্লামা ও মাওলানা' পরিচয়ে অপরাধ আড়ালের চেষ্টা করেন।
ধর্মান্তরিতকরণ : প্যারা নম্বর ১১৪ তে বলা হয়েছে, সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী হিন্দু সম্প্র্রদায়ের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাত। তাদের বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন করাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। পরে লোকজন সব হারিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। যারা যেতে পারেননি এ রকম মধুসূদন ঘরামী, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, হরিলাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, জুরান, ফকির দাস, জোনা দাসসহ ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে সাঈদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেন। তাদের নিয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়াতেন, তাদের মুসলমান নামও দেন তিনি। স্বাধীনতার পর ধর্মান্তরিত এসব মুসলমান স্বধর্মে ফিরে যান বলে এলাকায় এখন তারা 'ধর্মান্তরিত' বলে পরিচিত।
সাঈদীর ভাষাগত যোগ্যতা : সূচনা বক্তব্যের ৯৭ প্যারায় সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, 'সাঈদী আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে ছিল তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এসব যোগ্যতার কারণে তিনি রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষম হন। আর কমান্ডার হয়ে সাঈদী ক্যাপ্টেন এজাজসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্যদের পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু এলাকার মেয়ে, তরুণীদের ধর্ষণে সহায়তা করতেন।
সূচনা বক্তব্যে দৈনিক সমকাল : মুক্তিযুদ্ধকালীন সাঈদীর কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সমকালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি সূচনা বক্তব্যের ১২৫ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারের নেতা ছিলেন উল্লেখ করে দৈনিক সমকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে এ বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করে সমকাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়। মামলাটি পিরোজপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে 'ডিসমিস' হয়ে যায়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ : সাঈদীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের মধ্যে রয়েছে একাত্তরের ৮ মে মানিক পশারী ও তার ভাইয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে হত্যা, ২৫ মে থেকে ৩১ জুনের মধ্যে নলবুনিয়া গ্রামে আজহার আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ছেলে সাহেব আলীকে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া, ২ জুন বিশা আলীকে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা।
অন্য আরও অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে আদাকুল গ্রামের বিমল হাওলাদারের ভাই ও বাবাকে ধরে কুড়িয়ানা হাইস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে তাদেরসহ ২৫০০-৩০০০ নিরীহ বাঙালিকে পেয়ারা বাগানে নিয়ে হত্যা, ২৫ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ের যে কোনো এক দিন হোগলাবুনিয়া গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে তরণী সিকদার ও তার ছেলে নির্মল সিকদার, শ্যামকান্ত সিকদার, বানীকান্ত সিকদার, হরলাল কর্মকার, মাইঠভাঙ্গারের প্রকাশ সিকদারসহ ১০ জনকে গুলি করে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া, ৪ মে থেকে ১৬ ডিসেম্ব্বরের মধ্যে পাড়েরহাটে আক্রমণ করে হরলাল মালাকার, অরকুমার মির্জা, তরণীকান্ত সিকদার, নন্দকুমার সিকদারসহ ১৪ হিন্দুকে রশিতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাছাউনিতে নিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
শেষাংশ : ১২৬ নম্বর প্যারায় সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি) এবং ৩(২)(এইচ) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী, একাত্তরের সংবাদপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থের ভিত্তিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মুক্তিকামী বাঙালি ও সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য সাঈদীর শাস্তি হওয়া উচিত। আশা করি আদালতে বিচারে এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে।
সাঈদীর বিরুদ্ধে গত ৩১ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ অগি্নসংযোগের অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ সংবলিত ১৫ খ ের ৪ হাজার ৭৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন টিমের কাছে জমা দেওয়া হয়। এরপর গত ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি ঘটনায় অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। গত ২৯ জুন থেকে সাঈদী কারাগারে আটক রয়েছেন।
প্রেস বিফিং : সাংবাদিকদের কাছে সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এটা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার। সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলে এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই। তৎকালীন কর্মকা ের বিষয়ে গণমাধ্যম ও জীবত সাক্ষীরাই আদালতে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ধর্ষণের শিকার অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন। বিচারের প্রয়োজনে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হবে। গতকাল সকাল ১০টা ৩৫ থেকে এক ঘণ্টা সাঈদীর উপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করা হয়। আগামী ৭ ডিসেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু রোববার সূচনা বক্তব্য শুরু করলেও গতকাল প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বাকি অংশ শেষ করেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের আরও অভিযোগ : সূচনা বক্তব্যের ১১৫ নম্বর প্যারায় আরও বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে সাঈদীর নেতৃত্বে উমেদপুর পাড়েরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার তিন বোন মহামায়া, অন্যরানী ও কমলা রানীকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া একইভাবে ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পাড়েরহাট বন্দরের কিষ্ট সাহাকে হত্যার পর তার মেয়েসহ হিন্দুপাড়ার অসংখ্য নারীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
সাঈদীর আত্মগোপন :গতকাল সূচনা বক্তব্যের ১১৮ নম্বর প্যারায় বলা হয়, স্বাধীনতার পর সাঈদী নিজের অপরাধ আড়াল করতে অস্ত্রসহ যশোরের মোঃ রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। অনেকদিন পর মুক্তিযুদ্ধে তার কর্মকাণ্ড জানাজানি হলে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান সাঈদী। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি প্রকাশ্যে আসেন এবং ভুয়া মাওলানা পরিচয়ে ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন। এভাবেই তিনি 'আল্লামা ও মাওলানা' পরিচয়ে অপরাধ আড়ালের চেষ্টা করেন।
ধর্মান্তরিতকরণ : প্যারা নম্বর ১১৪ তে বলা হয়েছে, সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী হিন্দু সম্প্র্রদায়ের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাত। তাদের বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন করাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। পরে লোকজন সব হারিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। যারা যেতে পারেননি এ রকম মধুসূদন ঘরামী, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, হরিলাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, জুরান, ফকির দাস, জোনা দাসসহ ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে সাঈদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেন। তাদের নিয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়াতেন, তাদের মুসলমান নামও দেন তিনি। স্বাধীনতার পর ধর্মান্তরিত এসব মুসলমান স্বধর্মে ফিরে যান বলে এলাকায় এখন তারা 'ধর্মান্তরিত' বলে পরিচিত।
সাঈদীর ভাষাগত যোগ্যতা : সূচনা বক্তব্যের ৯৭ প্যারায় সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, 'সাঈদী আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে ছিল তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এসব যোগ্যতার কারণে তিনি রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষম হন। আর কমান্ডার হয়ে সাঈদী ক্যাপ্টেন এজাজসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্যদের পিরোজপুরের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু এলাকার মেয়ে, তরুণীদের ধর্ষণে সহায়তা করতেন।
সূচনা বক্তব্যে দৈনিক সমকাল : মুক্তিযুদ্ধকালীন সাঈদীর কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সমকালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি সূচনা বক্তব্যের ১২৫ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারের নেতা ছিলেন উল্লেখ করে দৈনিক সমকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে এ বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করে সমকাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়। মামলাটি পিরোজপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে 'ডিসমিস' হয়ে যায়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ : সাঈদীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের মধ্যে রয়েছে একাত্তরের ৮ মে মানিক পশারী ও তার ভাইয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে হত্যা, ২৫ মে থেকে ৩১ জুনের মধ্যে নলবুনিয়া গ্রামে আজহার আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ছেলে সাহেব আলীকে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া, ২ জুন বিশা আলীকে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা।
অন্য আরও অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে আদাকুল গ্রামের বিমল হাওলাদারের ভাই ও বাবাকে ধরে কুড়িয়ানা হাইস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে তাদেরসহ ২৫০০-৩০০০ নিরীহ বাঙালিকে পেয়ারা বাগানে নিয়ে হত্যা, ২৫ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ের যে কোনো এক দিন হোগলাবুনিয়া গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে তরণী সিকদার ও তার ছেলে নির্মল সিকদার, শ্যামকান্ত সিকদার, বানীকান্ত সিকদার, হরলাল কর্মকার, মাইঠভাঙ্গারের প্রকাশ সিকদারসহ ১০ জনকে গুলি করে হত্যার পর নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া, ৪ মে থেকে ১৬ ডিসেম্ব্বরের মধ্যে পাড়েরহাটে আক্রমণ করে হরলাল মালাকার, অরকুমার মির্জা, তরণীকান্ত সিকদার, নন্দকুমার সিকদারসহ ১৪ হিন্দুকে রশিতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাছাউনিতে নিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
শেষাংশ : ১২৬ নম্বর প্যারায় সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি) এবং ৩(২)(এইচ) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী, একাত্তরের সংবাদপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থের ভিত্তিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মুক্তিকামী বাঙালি ও সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য সাঈদীর শাস্তি হওয়া উচিত। আশা করি আদালতে বিচারে এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে।
সাঈদীর বিরুদ্ধে গত ৩১ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ অগি্নসংযোগের অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ সংবলিত ১৫ খ ের ৪ হাজার ৭৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন টিমের কাছে জমা দেওয়া হয়। এরপর গত ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি ঘটনায় অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। গত ২৯ জুন থেকে সাঈদী কারাগারে আটক রয়েছেন।
প্রেস বিফিং : সাংবাদিকদের কাছে সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এটা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার। সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলে এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই। তৎকালীন কর্মকা ের বিষয়ে গণমাধ্যম ও জীবত সাক্ষীরাই আদালতে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরবেন।
No comments