তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রই বাড়াচ্ছে ভর্তুকি ব্যয় by রাশেদুল তুষার,
তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুই দফায় ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। বিদেশ থেকে বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিক্রির পর আবার সেই উৎপাদিত বিদ্যুৎ বেশি দামে কিনে কম দামে গ্রাহকপর্যায়ে সরবরাহ করছে পিডিবি। বিদ্যুৎসংকট নিরসনে সরকারি পরিকল্পনায় তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রকে প্রাধান্য দেওয়ায় এই ভর্তুকির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ানোর পরও সরকারের ঘাড়ে থেকে যাচ্ছে এই ভর্তুকির চাপ। কারণ দাম বাড়ালেও চুক্তি অনুযায়ী ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের কম দামেই ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করে যেতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি চুক্তিতে নির্ধারিত দামেই তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। ফলে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর হিসাব দেওয়া হলেও ঘুরে-ফিরে সে বাড়তি দাম সরকারকেই বহন করতে হচ্ছে। এ জন্য ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির চাপ কিছুটা লাঘব করার কথা ভাবছে সরকার। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুৎ খাতের সংস্থা ও ভোক্তা সংগঠনগুলোর মতামত নিচ্ছে। তবে নূ্যনতম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন_এমন গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২০১৩ সাল থেকে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ানোর কথা থাকলেও সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ভরতাও সহসা কাটছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাব অনুযায়ী, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টন। এক বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরে এই চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২০ হাজার ৯১৫ টনে। দুই মাসের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায় ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলে নতুন করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হবে। বাড়তি এ দাম সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে সরকারি সংস্থা পিডিবিকে।
চলতি অর্থবছরে শুধু সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে হবে ২০ লাখ ২০ হাজার ৯১৫ টন। যার মধ্যে ফার্নেস অয়েলের পরিমাণ ১৪ লাখ ১৫ হাজার টন এবং ডিজেল ছয় লাখ পাঁচ হাজার টন।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত ১০ নভেম্বর রাতে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন এবং কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা করে বাড়িয়েছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর সরকার ফার্নেস অয়েল ছাড়া বাকি চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়েছিল। তখন ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছিল আট টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে দুই হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা। এর মধ্যে এক হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াটই ফার্নেস কিংবা ডিজেলচালিত। আর ২০১২ সালে তেলচালিত আরো এক হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে আগামী দুই বছরের পরিকল্পনায় এ ধরনের ফার্নেস ও ডিজেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো বাড়বে। এতে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ কেনায় ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভর্তুকি বাড়ার কথা স্বীকার করে পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত বছর পিডিবি প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে।'
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে স্বীকার করে পিডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে সাত টাকা ৮০ পয়সায়। আর ডিজেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবিকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৪ টাকা দরে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিঃসন্দেহে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।' বর্তমানে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ৫৫ পয়সা ভর্তুকি দিচ্ছে।
তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। কারণ জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম পরিশোধ করবে পিডিবি। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের শিকলবাহায় ভাড়াভিত্তিক ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠান এনার্জিস করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাড়তি জ্বালানি তেলের দাম সাধারণত পিডিবি থেকেই এডজাস্ট করা হয়।'
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি আগের চুক্তি অনুযায়ীই বিদ্যুৎ কিনবে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০০৯ সালের অক্টোবরের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাত টাকা ৮০ পয়সায় কিনছে পিডিবি। সে সময় ফার্নেস অয়েলের লিটারপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল ২৬ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা।
ফলে এই বাড়তি ভর্তুকির দায় পুরোটাই সাধারণ গ্রাহকদের ওপর চাপানো হবে বলে জানিয়েছে পিডিবি সূত্র। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কমিশন ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিপণনকারী বিভিন্ন সংস্থা ও ভোক্তা সংগঠনের সঙ্গে কয়েক দফা গণশুনানি করেছে। তবে প্রান্তিক ব্যবহারকারীদের কথা বিবেচনা করে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না বলে কমিশনের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সরকারের মহাপরিকল্পনায় ২০১৩ সাল থেকে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ানোর কথা থাকলেও সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্ভরতাও সহসা কাটছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাব অনুযায়ী, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টন। এক বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরে এই চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২০ হাজার ৯১৫ টনে। দুই মাসের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায় ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলে নতুন করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হবে। বাড়তি এ দাম সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে সরকারি সংস্থা পিডিবিকে।
চলতি অর্থবছরে শুধু সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে হবে ২০ লাখ ২০ হাজার ৯১৫ টন। যার মধ্যে ফার্নেস অয়েলের পরিমাণ ১৪ লাখ ১৫ হাজার টন এবং ডিজেল ছয় লাখ পাঁচ হাজার টন।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত ১০ নভেম্বর রাতে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন এবং কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা করে বাড়িয়েছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর সরকার ফার্নেস অয়েল ছাড়া বাকি চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়েছিল। তখন ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছিল আট টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে দুই হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা। এর মধ্যে এক হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াটই ফার্নেস কিংবা ডিজেলচালিত। আর ২০১২ সালে তেলচালিত আরো এক হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে আগামী দুই বছরের পরিকল্পনায় এ ধরনের ফার্নেস ও ডিজেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো বাড়বে। এতে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ কেনায় ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভর্তুকি বাড়ার কথা স্বীকার করে পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত বছর পিডিবি প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে।'
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে স্বীকার করে পিডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, 'বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে সাত টাকা ৮০ পয়সায়। আর ডিজেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবিকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৪ টাকা দরে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিঃসন্দেহে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।' বর্তমানে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ৫৫ পয়সা ভর্তুকি দিচ্ছে।
তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। কারণ জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম পরিশোধ করবে পিডিবি। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের শিকলবাহায় ভাড়াভিত্তিক ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠান এনার্জিস করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাড়তি জ্বালানি তেলের দাম সাধারণত পিডিবি থেকেই এডজাস্ট করা হয়।'
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি আগের চুক্তি অনুযায়ীই বিদ্যুৎ কিনবে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০০৯ সালের অক্টোবরের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাত টাকা ৮০ পয়সায় কিনছে পিডিবি। সে সময় ফার্নেস অয়েলের লিটারপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল ২৬ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা।
ফলে এই বাড়তি ভর্তুকির দায় পুরোটাই সাধারণ গ্রাহকদের ওপর চাপানো হবে বলে জানিয়েছে পিডিবি সূত্র। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কমিশন ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিপণনকারী বিভিন্ন সংস্থা ও ভোক্তা সংগঠনের সঙ্গে কয়েক দফা গণশুনানি করেছে। তবে প্রান্তিক ব্যবহারকারীদের কথা বিবেচনা করে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না বলে কমিশনের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
No comments