ফলোআপ-টাকা দিলেই ফেরে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল by এস এম আজাদ
চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল ফেরত পাওয়া যায়। তবে ভুক্তভোগীকে এ জন্য টাকা দিতে হয়। একটি চক্র আছে, যারা নিজে থেকেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। মোটরসাইকেল ফেরত পেতে তাদের দিতে হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। উপায়ন্তর না দেখে এসব দালালের মাধ্যমে চোর চক্রের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ফেরত নিচ্ছেন কেউ কেউ।
ভুক্তভোগীরা জানান, থানায় মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গাড়ি উদ্ধার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিভাবে তারা ফোন নম্বর পায়, তা রহস্যজনক বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তাঁদের অভিযোগ, গাড়ি খোয়ানোর পর মামলা বা জিডি করলেও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। এর সুযোগ নিচ্ছে চোর চক্র। পুলিশের সঙ্গে এ চক্রের আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালের কার পার্কিং এলাকা থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বিপ্লব ঘোষ রাহুলের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া এ ঘটনার ছবিসহ একটি প্রতিবেদন গত শনিবার প্রকাশিত হয় কালের কণ্ঠে।
সংবাদ প্রকাশের আগে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে দেওয়ার প্রস্তাব পান রাহুল। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, গত ১৪ নভেম্বর এক ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোনে ফোন করে বলেন, 'আপনার গাড়িটি চুরি হয়েছে? আপনার গাড়িটি কি দরকার? তাহলে আপনাকে সহায়তা করতে পারি। আমাদের পরিচিত লোক আছে। তবে পেমেন্ট করতে হবে। প্রাইভেট কারের জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাগে...।' রাহুল অপরিচিত ওই ব্যক্তিকে জানান, তিনি ১০ হাজার টাকা হলে ভেবে দেখবেন এবং প্রয়োজন হলে পরে জানাবেন।
রাহুল বলেন, 'আমি বুঝলাম না, কী করে ওই লোক আমার মোবাইল ফোন নম্বর পেল! আমার এক পরিচিত ব্যক্তিও আমাকে বলেছেন, টাকা দিলে গাড়ি উদ্ধার করে দেয়_এমন কয়েকটি গ্রুপ আছে। পুলিশ না পারলে, হয়তো তাদের কাছেই যেতে হবে।'
মোটরসাইকেল চুরি যাওয়ার পর রাহুল ওই দিন দুপুরে রমনা থানায় মামলা করতে যান। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করে। দুদিন পর তিনি হাসপাতাল থেকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেন। পুলিশ ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করে। প্রমাণ উদ্ধার ও চোর শনাক্ত হওয়ার পরও এখনো গাড়ির হদিস না পাওয়ায় হতাশ রাহুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাঁদের মোটরসাইকেল খোয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মোবাইল ফোনে এ ধরনের প্রস্তাব পেয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল শাহবাগ এলাকায় চারুকলার সামনে ছবিরহাট থেকে চুরি হয় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর মোটরসাইকেল। এক সপ্তাহ পর ০১৮২৮৭৮৯২১৫ নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে বলা হয়, 'আপনার বাইকটি ফেরত চান না? আমাদের কাছে আছে। চাইলে ৩০ হাজার টাকা লাগবে।' বিষয়টি তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহনূর আলমকে জানান। তবে পুলিশ ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। পরে আর কেউ রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যে নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল পরে সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত পেয়েছেন কেউ কেউ। তবে শর্ত থাকায় এবং ঝামেলা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনকে ঘটনাটি জানান না ভুক্তভোগীরা। অবশ্য মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার নাম করে প্রতারণাও করা হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে একটি ঠিকানায় টাকা পাঠানোর কথা বলা হয়। টাকা পাওয়ার পর আর যোগাযোগ করা হয় না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মোটরসাইকেল চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ টিমের প্রধান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী পুলিশ কমিশনার রওনক জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, মোটরসাইকেল চুরির পর ফেরত দেওয়ার নামে প্রতারণার বেশ কিছু অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। তবে তদন্ত করে চোর চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, 'বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ সিম চালু করে ফোন করা হয়। পরে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে আসে। আগে জানায় না।'
রওনক জাহান আরো বলেন, 'চোররা নতুন ও নিরাপদ ক্রেতার কাছে বিক্রি না করে মালিককে মোটরসাইকেল ফেরত দিতে যাওয়ার কথা নয়। তবে প্রতিটি ঘটনাই আমরা তদন্ত করে দেখছি।'
অবশেষে রাহুলের মামলা নিয়েছে পুলিশ
দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় রাহুলের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে রমনা থানা। জানা যায়, গত শনিবার রাতে রাহুলকে ডেকে আনেন রমনা থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা রাহুলকে নতুনভাবে অভিযোগ দায়ের করতে অনুরোধ করেন। রাহুল লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ এজাহার হিসেবে তা নথিভুক্ত করে। রবিবার আসামি গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য রাহুলকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করা নিরাপত্তাকর্মী রফিককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে তাঁকে নড়াইলের গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।
এর আগে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তে সহযোগিতা করছে। তবে মামলার বাদী বলছেন, রফিককে চাকরিচ্যুত করায় তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ চুরির সঙ্গে জড়িতদের ছবি পেলেও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। তিনি বলেন, 'নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হোক, সেটা আমি চাই না।'
গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালের কার পার্কিং এলাকা থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বিপ্লব ঘোষ রাহুলের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। হাসপাতালের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া এ ঘটনার ছবিসহ একটি প্রতিবেদন গত শনিবার প্রকাশিত হয় কালের কণ্ঠে।
সংবাদ প্রকাশের আগে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে দেওয়ার প্রস্তাব পান রাহুল। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, গত ১৪ নভেম্বর এক ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোনে ফোন করে বলেন, 'আপনার গাড়িটি চুরি হয়েছে? আপনার গাড়িটি কি দরকার? তাহলে আপনাকে সহায়তা করতে পারি। আমাদের পরিচিত লোক আছে। তবে পেমেন্ট করতে হবে। প্রাইভেট কারের জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাগে...।' রাহুল অপরিচিত ওই ব্যক্তিকে জানান, তিনি ১০ হাজার টাকা হলে ভেবে দেখবেন এবং প্রয়োজন হলে পরে জানাবেন।
রাহুল বলেন, 'আমি বুঝলাম না, কী করে ওই লোক আমার মোবাইল ফোন নম্বর পেল! আমার এক পরিচিত ব্যক্তিও আমাকে বলেছেন, টাকা দিলে গাড়ি উদ্ধার করে দেয়_এমন কয়েকটি গ্রুপ আছে। পুলিশ না পারলে, হয়তো তাদের কাছেই যেতে হবে।'
মোটরসাইকেল চুরি যাওয়ার পর রাহুল ওই দিন দুপুরে রমনা থানায় মামলা করতে যান। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করে। দুদিন পর তিনি হাসপাতাল থেকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেন। পুলিশ ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করে। প্রমাণ উদ্ধার ও চোর শনাক্ত হওয়ার পরও এখনো গাড়ির হদিস না পাওয়ায় হতাশ রাহুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাঁদের মোটরসাইকেল খোয়া গেছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মোবাইল ফোনে এ ধরনের প্রস্তাব পেয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল শাহবাগ এলাকায় চারুকলার সামনে ছবিরহাট থেকে চুরি হয় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর মোটরসাইকেল। এক সপ্তাহ পর ০১৮২৮৭৮৯২১৫ নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে বলা হয়, 'আপনার বাইকটি ফেরত চান না? আমাদের কাছে আছে। চাইলে ৩০ হাজার টাকা লাগবে।' বিষয়টি তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহনূর আলমকে জানান। তবে পুলিশ ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। পরে আর কেউ রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যে নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল পরে সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত পেয়েছেন কেউ কেউ। তবে শর্ত থাকায় এবং ঝামেলা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনকে ঘটনাটি জানান না ভুক্তভোগীরা। অবশ্য মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার নাম করে প্রতারণাও করা হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে একটি ঠিকানায় টাকা পাঠানোর কথা বলা হয়। টাকা পাওয়ার পর আর যোগাযোগ করা হয় না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মোটরসাইকেল চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ টিমের প্রধান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী পুলিশ কমিশনার রওনক জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, মোটরসাইকেল চুরির পর ফেরত দেওয়ার নামে প্রতারণার বেশ কিছু অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। তবে তদন্ত করে চোর চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, 'বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ সিম চালু করে ফোন করা হয়। পরে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে আসে। আগে জানায় না।'
রওনক জাহান আরো বলেন, 'চোররা নতুন ও নিরাপদ ক্রেতার কাছে বিক্রি না করে মালিককে মোটরসাইকেল ফেরত দিতে যাওয়ার কথা নয়। তবে প্রতিটি ঘটনাই আমরা তদন্ত করে দেখছি।'
অবশেষে রাহুলের মামলা নিয়েছে পুলিশ
দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় রাহুলের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে রমনা থানা। জানা যায়, গত শনিবার রাতে রাহুলকে ডেকে আনেন রমনা থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা রাহুলকে নতুনভাবে অভিযোগ দায়ের করতে অনুরোধ করেন। রাহুল লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ এজাহার হিসেবে তা নথিভুক্ত করে। রবিবার আসামি গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য রাহুলকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করা নিরাপত্তাকর্মী রফিককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে তাঁকে নড়াইলের গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।
এর আগে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্তে সহযোগিতা করছে। তবে মামলার বাদী বলছেন, রফিককে চাকরিচ্যুত করায় তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ চুরির সঙ্গে জড়িতদের ছবি পেলেও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। তিনি বলেন, 'নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হোক, সেটা আমি চাই না।'
No comments