হুবহু-জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকা পেতে সরকারের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে
বিশিষ্ট পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত। সম্প্রতি দেশের বহুমুখী সমস্যার মধ্যে অন্যতম দুই প্রধান সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও আইনবহির্ভূতভাবে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ চুক্তি সম্পন্ন নিয়ে বর্তমানে বার্লিনে অবস্থানকারী এই পরিবেশবিদ বিস্তারিত কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ কী? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কোন ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং হবে?
এটা এখন কম-বেশি অনেকেই জানেন যে নানা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, নদীর ওপর বাঁধ, বায়ু, পানি-মাটি দূষণ, ক্রমাগত বন ধ্বংস ইত্যাদি কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে ক্রমাগত বিশ্ব উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত বরাক নদের ওপর টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে একটি যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। তবে কী ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে তা নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা এখনো করেনি বাংলাদেশ সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে খাদ্যের চাহিদা পূরণ এমনিতেই অনেক কঠিন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা আরো জটিল হয়ে দাঁড়াবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব খাদ্যের নিরাপত্তা জোরদার করলে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এর সরবরাহের স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে এবং বিশ্ব কাঠামোয় যথাযথভাবে তা বণ্টন করতে হবে। পৃথিবী ক্রমাগত উষ্ণ হওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বাংলাদেশের একটি অংশ ডুবে যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের একাংশ মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে।
কয়েক বছর ধরেই টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশে আলোচনা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এখনো এর প্রভাব নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা করেনি। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
টিপাইমুখ নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা-আন্দোলন চললেও সরকার এখনো এর পরিবেশগত বিপর্যয়ের সমীক্ষা করেনি। এতে সরকার চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এত বড় একটি বিষয় নিয়ে উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটিকে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই বলা যায়। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আর লুকোচুরির কিছু নেই।
জলবায়ু দূষণের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুত অর্থ এখনো ছাড় দেয়নি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ অর্থ পেতে হলে অর্থব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে। সম্প্রতি ফিলিপাইন এ ফান্ডের অর্থ পাওয়ার জন্য দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। বিদ্যমান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন করে আধুনিক অর্থব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ৩০ বিলিয়ন (তিন হাজার কোটি) ডলার ফান্ড থেকে ইতিমধ্যে ভারত ১০০ কোটি ডলার পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া শুধু বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ ছাড় করিয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শুধু পুরনো অর্থ-কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ এখনো কোনো অর্থ পায়নি। এ জন্য অর্থ-কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরো সুনিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকা পেতে সরকারের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। এর কতটুকু প্রতিফলন ঘটেছে?
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দুই মাসের মাথায় এ বক্তব্য উবে যাবে, তা আমরা আশা করিনি। কাজেই সরকারের উচিত, যথাযথ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। ভারতের এ কথার কোনো মূল্য নেই। অভিন্ন নদীতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে পুরো অববাহিকার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তার একটি যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। যৌথ সমীক্ষা ছাড়া ভারত এ ধরনের কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না। নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন, এমনকি ভারতের নিজস্ব পরিবেশবিষয়ক আইনেও বলা আছে, এ ধরনের বাঁধ নির্মাণের আগে একটি নদীর সার্বিক পরিবেশগত সমীক্ষা করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটা সামাজিক ঘটনা এবং এর পেছনে আছে পুঁজিবাদের জ্বীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক মুনাফাকেন্দ্রিক উৎপাদনব্যবস্থা। একদিকে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা, অন্যদিকে বিশ্বে কমছে জ্বালানির মজুদ। জ্বালানিনির্ভর এই পুঁজিবাদী বিশ্বকাঠামোর ভবিষ্যৎ পরিণতি তাহলে কোন দিকে?
জ্বালানিনির্ভর পুঁজিবাদী বিশ্বকাঠামোর কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর জন্য ধনী দেশগুলোই দায়ী। তবে জ্বালানির মজুদ নিয়ে এ-সংক্রান্ত বিষেশজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন কোনো খনি আবিষ্কার হবে। বিকল্প জ্বালানি আবিষ্কারের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
কার্বন নিঃসরণের ফলে জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য সিংহভাগ দায়ী উন্নত দেশগুলো। কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করলেও তারা মানছে না। সর্বাধিক দূষণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূষণরোধের অঙ্গীকার কিয়োটো প্রটোকলে সই না করা তার অন্যতম উদাহরণ। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর কী করণীয়?
কিয়োটো প্রটোকলে সই করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার পালন করার জন্য জাতিসংঘ আরো বেশি কাজ করতে পারে। উন্নত দেশগুলোর জনগণের মধ্যে এর প্রভাবসংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই উন্নত দেশগুলোর ভেতরে ও বাইরে থেকে এ-সংক্রান্ত চাপ বৃদ্ধি পাবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সফেদ সিরাজ
কয়েক বছর ধরেই টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশে আলোচনা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এখনো এর প্রভাব নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা করেনি। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
টিপাইমুখ নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা-আন্দোলন চললেও সরকার এখনো এর পরিবেশগত বিপর্যয়ের সমীক্ষা করেনি। এতে সরকার চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এত বড় একটি বিষয় নিয়ে উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটিকে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই বলা যায়। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আর লুকোচুরির কিছু নেই।
জলবায়ু দূষণের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুত অর্থ এখনো ছাড় দেয়নি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ অর্থ পেতে হলে অর্থব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে। সম্প্রতি ফিলিপাইন এ ফান্ডের অর্থ পাওয়ার জন্য দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। বিদ্যমান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন করে আধুনিক অর্থব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ৩০ বিলিয়ন (তিন হাজার কোটি) ডলার ফান্ড থেকে ইতিমধ্যে ভারত ১০০ কোটি ডলার পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া শুধু বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ ছাড় করিয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শুধু পুরনো অর্থ-কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ এখনো কোনো অর্থ পায়নি। এ জন্য অর্থ-কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরো সুনিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকা পেতে সরকারের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। এর কতটুকু প্রতিফলন ঘটেছে?
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু দুই মাসের মাথায় এ বক্তব্য উবে যাবে, তা আমরা আশা করিনি। কাজেই সরকারের উচিত, যথাযথ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। ভারতের এ কথার কোনো মূল্য নেই। অভিন্ন নদীতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে পুরো অববাহিকার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তার একটি যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। যৌথ সমীক্ষা ছাড়া ভারত এ ধরনের কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না। নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন, এমনকি ভারতের নিজস্ব পরিবেশবিষয়ক আইনেও বলা আছে, এ ধরনের বাঁধ নির্মাণের আগে একটি নদীর সার্বিক পরিবেশগত সমীক্ষা করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটা সামাজিক ঘটনা এবং এর পেছনে আছে পুঁজিবাদের জ্বীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক মুনাফাকেন্দ্রিক উৎপাদনব্যবস্থা। একদিকে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা, অন্যদিকে বিশ্বে কমছে জ্বালানির মজুদ। জ্বালানিনির্ভর এই পুঁজিবাদী বিশ্বকাঠামোর ভবিষ্যৎ পরিণতি তাহলে কোন দিকে?
জ্বালানিনির্ভর পুঁজিবাদী বিশ্বকাঠামোর কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর জন্য ধনী দেশগুলোই দায়ী। তবে জ্বালানির মজুদ নিয়ে এ-সংক্রান্ত বিষেশজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। হয়তো ভবিষ্যতে নতুন কোনো খনি আবিষ্কার হবে। বিকল্প জ্বালানি আবিষ্কারের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
কার্বন নিঃসরণের ফলে জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য সিংহভাগ দায়ী উন্নত দেশগুলো। কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করলেও তারা মানছে না। সর্বাধিক দূষণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূষণরোধের অঙ্গীকার কিয়োটো প্রটোকলে সই না করা তার অন্যতম উদাহরণ। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর কী করণীয়?
কিয়োটো প্রটোকলে সই করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার পালন করার জন্য জাতিসংঘ আরো বেশি কাজ করতে পারে। উন্নত দেশগুলোর জনগণের মধ্যে এর প্রভাবসংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই উন্নত দেশগুলোর ভেতরে ও বাইরে থেকে এ-সংক্রান্ত চাপ বৃদ্ধি পাবে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সফেদ সিরাজ
No comments