বাচ্চু কি হাওয়া-এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অনেক কারণ :এসপি by পিনাকি দাসগুপ্ত

রসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মন্ত্রীর ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে পুলিশ ২০ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি। গত ১৬ নভেম্বর বাচ্চু, মন্ত্রীর এপিএস মুরাদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন হাইকোর্ট এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ তোড়জোড় শুরু করলেও তা এখন থেমে গেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে কিলিং মিশনের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করলেও বাচ্চুর কোনো খোঁজ


মিলছে না। এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন গতকাল সোমবার কারও নাম উল্লেখ না করে সমকালকে বলেন, এজাহারে নাম থাকলেই কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হবে এমন কথা নেই। এজাহারভুক্ত হোক বা না হোক, তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে যে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মোবার আত্মীয় গ্রেফতারকৃত মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক হাজী সেলিমকে গতকাল তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে এজাহারভুক্ত আসামি যুবলীগ নেতা আশরাফসহ মোট সাতজন পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
সূত্র জানায়, লোকমান হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাটি ছিল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। মূল নির্দেশদাতা থেকে শুরু করে কিলিং মিশনের সদস্যরা শুধু পরিকল্পনার একটা নির্দিষ্ট অংশই জানেন। পুরো পরিকল্পনার কথা এককভাবে কেউ বলতে পারছে না। ফলে মূল পরিকল্পনাকারী শনাক্ত করতে আরও সময় লাগবে। বাচ্চুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মোবা। অপরদিকে মোবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম ও তারেক রহমান। গত ২৭ অক্টোবর মোবা ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান। এর আগে দেড় মাসের মধ্যে বাচ্চুর সঙ্গে মোবার কোনো কথা হয়নি। কিন্তু দেশত্যাগ করার আগের দিন মোবা বাচ্চুর সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেন। পাশাপাশি নরসিংদী শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম গত ১৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় যান। সেখান থেকে তিনি কয়েক দফায় মোবার সঙ্গে কথা বলেন। একইভাবে গত ৩০ অক্টোবর আবুধাবিতে যান জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক রহমান। তারেকের সঙ্গে মোবা ও নুরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা আশরাফ হোসেন সরকার বলেছেন, লোকমান হত্যা পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অন্যতম লোকমানের বাল্যবন্ধু মোবারক হোসেন মোবা। হত্যাকাণ্ডের আর্থিক জোগানদাতা তিনি। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও তিনি সংগ্রহ করে দেন। মোবারক হোসেন মোবা ভালো বলতে পারবেন, কার কাছ থেকে তিনি কত টাকা নিয়েছেন। মন্ত্রীর ভাই সালাহউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে মোবাই যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।
বাচ্চুকে গ্রেফতার অভিযানে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, হাইকোর্ট থেকে বাচ্চু পালানোর পর তাকে ধরতে বিরামহীনভাবে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
নরসিংদী প্রতিনিধি প্রীতিরঞ্জন সাহা জানান, নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন গতকাল সোমবার বিকেলে লোকমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক কারণেই হয়নি, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শত্রুতা, টেন্ডারবাজি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক, জমি সংক্রান্ত বিরোধ, অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত যথাযথভাবে চলছে দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, এজাহারকে সামনে নিয়েই তদন্ত এগিয়ে চলছে। হত্যাকাণ্ডে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকারী ও অস্ত্রের জোগানদাতা রয়েছে।
হাজী সেলিম ফের রিমান্ডে : মেয়র লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি হাজী সেলিমকে গতকাল সোমবার তৃতীয় দফায় আরও তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সেলিমকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহার আদালতে হাজির করে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামি আশরাফুল সরকার, হাজী ফারুক, মাহফুজ হোসেন সবুজ, নাসির, টিপ্পন, শাহীনের ১০ দিনের রিমান্ড চলছে।
প্রকৃত খুনিদের বিচার দাবি করেছে বিএনপি : নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকন। পাশাপাশি অযথা কাউকে হয়রানি না করা, খুনিরা যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য তিনি প্রশাসন এবং সংবাদকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। গতকাল সোমবার তার নরসিংদীর চিনিশপুরের বাসভবনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মদিন উপলক্ষে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ ফকির রনির পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান খান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ হারুন, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ ফারুক উদ্দীন ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা মীর ফজলুর রহমান, শাজাহান মলি্লক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
খুনিদের বিচার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি : লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের বিচারের পাশাপাশি নির্দোষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার নরসিংদী শহরের পূর্ব দত্তপাড়া দারুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবুল হায়াত সরকারের সভাপতিত্বে এক সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন সখা, বিএনপি নেতা মিয়া মোহাম্মদ সেলিম, বিএনপি নেতা বাবুল সরকার, অ্যাডভোকেট নাছিসুল হক ভূঁইয়া, সাবেক কমিশনার আবদুল কাদির, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ ভূঁইয়ার ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান খোকন, রায়হান সরকার প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.